মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতির ঘটনায় আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সব বিভাগের সেমিস্টার পরীা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সাথে ১৫ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর
্তমানে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল রোববার দিনভর বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগের মোশারফ-মনির গ্র“প। তারা ছাত্রলীগের সুমন-ছোটন গ্র“পের কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। এ নিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় তাদের মধ্যে রক্তয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুমন-ছোটন গ্র“প প্রতিপ গ্র“পের হামলার শিকার হয়ে বর্তমানে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। গতকাল সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি মেস থেকে সুমন-ছোটন গ্র“পের কয়েকজনকে ধরে এনে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে মোশারফ-মনির গ্র“প। সকাল ১০টার দিকে এবং দুপুর ১২টার দিকেও প্রতিপ গ্র“পের আরো কয়েকজনকে পেটায় তারা। এ সময় সাধারণ ছাত্ররাও তাদের হাত থেকে রা পায়নি। তাদের হামলায় অন্তত ছয়জন আহত হন। তাদের মধ্যে চারজনকে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হলো- সাইদ, তানভীর, সানি ও জাসিরুল। আহত সাধারণ দুই ছাত্র হলো মাসুম বিল্লাহ ও রানা। টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও আশরাফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্য দিকে মোশারফ-মনির গ্র“প গতকাল দিনভর রামদা, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান হল থেকে এই উদ্ভূত পরিস্থিতির সূত্রপাত হয়। ওই হলে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণে ছিল ছাত্রলীগের সুমন-ছোটন গ্র“প। সেখানে তাদের ছিল একক আধিপত্য। তাতে বাদ সাধে মোশারফ-মনির গ্র“প। গত শনিবার সন্ধ্যায় এই গ্র“পটি হলে হামলা চালায়। উভয় গ্র“পের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে সুমন-ছোটন গ্র“প হল ছাড়তে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের অফিসপ্রধানদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে আজ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য সব বিভাগের সেমিস্টার পরীা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ২৪ অক্টোবরের পরবর্তী পরীাগুলো যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘটিত ঘটনার পরিপ্রেেিত সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হলেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন আবু বকর সিদ্দিক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের প্রভোস্ট নূরজাহান খাতুন, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. সাজ্জাদ ওয়াহিদ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও সম্পদ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ। কমিটির সদস্যসচিব হলেন সহকারী প্রক্টর মাশফিকুল হক চৌধুরী। আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আজিজুল হক জানান, বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীদের নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিার্থীরা গত ১৫ অক্টোবর একটি অভিযোগ করে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেেিত গতকাল সন্ধ্যায় এক বৈঠকে ১৫ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেনÑ সুমন ফকির, রাকিব হাসান ছোটন, নাইমুর রহমান সীমান্ত, আতাউর রহমান সংগ্রাম, আবুল হাসানাত রিপন, আরিফ সরদার, জহিরুল ইসলাম, জিএম মামুন, আনাস পারভেজ, আলামিন, রাফাতুর রহমান অনিক, জাবির ইকবাল, মেহেদী হাসান, পুর্নেন্দু বসু পান্থ ও অভিজিৎ মুৎসুদ্দি।
No comments:
Post a Comment