নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে মহাফাঁপরে এখন সরকার। একদিকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের চাপ। অপরদিকে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সমাজের আপত্তি। এই টানাপোড়েনে আগামী মাসে আইএমএফের ১৪ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ মাসেই ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় ভ্যাট আইন নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে দাতাদের তীব্র অসন্তোষ মোকাবেলা করতে হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াশিংটন বৈঠকে ভ্যাট আইন বা
স্তবায়ন সময়সীমা চূড়ান্ত করা না হলে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির (ইসিএফ) ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় দেয়া হবে না বলে অর্থমন্ত্রীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে এ দুটি প্রধান দাতা সংস্থা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র দাতাদের অসন্তোষের কথা স্বীকার করে যুগান্তরকে জানান, দেশে ফিরেই অর্থমন্ত্রী ১৯ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এক পাতার বিশেষ ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী জানতে চান, ‘ভ্যাট আইন পর্যালোচনায় কমিটি করার কথা। তা কি হয়েছে? দ্রুত টার্মস অব রেফারেন্স নির্ধারণ করে আগামী ২ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। প্রথম সভায় আমি নিজে উপস্থিত থাকতে চাই। তিনি মন্তব্য করেন, পুরনো ভ্যাট আইন জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। এটি সংশোধন করে লাভ হবে না। নতুন ভ্যাট আইনই বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনটি হিসাবভিত্তিক ও জনবান্ধব। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে যে কোনোভাবেই হোক নতুন আইন কার্যকর করতে হবে। এ নিয়ে আর সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। কমিটির সুপারিশে ছোটখাটো ক্রটি-বিচ্যুতি দূর করে আইনটি কার্যকরে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন শনিবার যুগান্তরকে জানান, অর্থমন্ত্রীর চিঠি পেয়েই ভ্যাট আইন সংশোধনে যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম খান এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিনকে কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের আরেকজন সদস্যকেও সদস্য করা হচ্ছে। সদস্য সচিব থাকবেন এনবিআরের প্রথম সচিব ড. আবদুর রউফ। এনবিআর চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের চাপে আছে এনবিআর। আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে হবে- এমন প্রতিশ্র“তি দাতাদের দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু অটোমেশন সংক্রান্ত সফটওয়্যার ক্রয়ের টেন্ডার জটিলতা এবং ব্যবসায়ীদের আপত্তি আমলে নিয়ে এনবিআরের প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আইন বাস্তবায়ন ১ বছর পিছিয়ে দেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হবে। গত মাসে আইএমএফের একটি টিম বাংলাদেশ সফরকালে ভ্যাট আইন দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে। আগামী মাসে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। তারাও এ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে- এমন আভাসই পাওয়া গেছে। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ অর্থমন্ত্রীর কাছে ২১ জুলাই বিশেষ পত্র পাঠিয়ে নতুন ভ্যাট আইন বাতিলের দাবি জানান। ব্যবসায়ীদের অভিমত আইনটি অবাস্তব, অসঙ্গতিপূর্ণ এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থপরিপন্থী। নতুন আইনের ভালো দিকগুলো সংযোজন করে পুরনো ভ্যাট আইনটিই সংশোধন করতে হবে। এই আপত্তির মুখে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে ভ্যাট আইন নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে সেমিনারের আয়োজন করে এনবিআর। এই সেমিনারে সরকারের একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ভ্যাট আইন নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলে ব্যবসায়ীরা। এফবিসিসিআই দাবি করে, তাদের মতামত উপেক্ষা করেই আইনটি সংসদে পাস হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আইন সংশোধন করতে সম্মত হন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এফবিসিসিআই ও এনবিআরের যৌথ কমিটি নতুন ভ্যাট আইন পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাবসহ সুপারিশ পেশ করবে।
No comments:
Post a Comment