Thursday, December 11, 2014

সাংসদ রানা ও তিন ভাইকে গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান:কালের কন্ঠ

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তিসহ চার ভাইকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। সংসদ সদস্য রা
নাকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশ গতকাল বুধবার বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ স্থগিত করার পর পুলিশ টাঙ্গাইল ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ফারুক আহমেদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার তিন দিন পর ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলাটি প্রথমে টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তী সময়ে এর তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হয়। টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় জড়িত অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য রানা, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র মুক্তি, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব জাহিদুর রহমান খান কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। এই চার ভাই মিলে ঘটনার প্রায় এক মাস আগে ফারুক আহমেদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে আসামি মোহাম্মদ আলী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন। অন্য আসামি আনিসুল ইসলাম রাজাও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রভাবশালী ভাইদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে জবানবন্দি দেন। এদিকে ফারুক হত্যা মামলায় সংসদ সদস্য রানা জড়িত এবং তাঁকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হতে পারে বলেও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এমপি রানা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া রানাকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার নির্দেশ দেন। এরপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযান থেমে যায়। হাইকোর্টের নির্দেশের পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে। এ আবেদনে আদালত হাইকোর্টের আদেশ সাময়িক স্থগিত করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে বলেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আপিল করলে এর ওপর গতকাল শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তবে রানার পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রাখার আদেশ দেন। গ্রেপ্তারে আইনি বাধা নেই : হাইকোর্টের আদেশ গতকাল চূড়ান্তভাবে স্থগিত হওয়ায় সংসদ সদস্য রানাকে গ্রেপ্তারে আইনগত আর কোনো বাধা নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের ফলে সংসদ সদস্য রানাসহ সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারেও আইনগত কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, ফারুক হত্যা মামলার এজাহারে সংসদ সদস্য রানার নাম নেই। তার পরও তিনি আদালতে এসে রিট করে গ্রেপ্তার এড়াতে চেয়েছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে সানিয়াত খান বাপ্পা আগেই থাইল্যান্ডে চলে গেছেন। তাঁদের অন্য তিন ভাই এমপি রানা, কাকন ও মুক্তি দেশেই আত্মগোপন করে আছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে কাকনও আগেই বিদেশে চলে গেছেন বলে টাঙ্গাইলে আলোচনা রয়েছে। এ ব্যাপারে অশোক কুমার বলেন, তাঁরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে জন্য বিমানবন্দরসহ ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া আছে। আর ইতিমধ্যে কাকন যদি বিদেশ চলে গিয়ে থাকেন তাহলে অবৈধভাবে গিয়েছেন। তিনি জানান, খান পরিবারের ভাইদের গ্রেপ্তার করতে সম্ভাব্য সব জায়গায় পুলিশের একাধিক অভিযান চলছে।    

No comments:

Post a Comment