Sunday, December 21, 2014

ইনক্রিমেন্টের সুপারিশ ১ জুলাই থেকে:কালের কন্ঠ

যে তারিখেই চাকরিতে যোগদান করুন না কেন, সব সরকারি চাকরিজীবীকে প্রতিবছরের ১ জুলাই বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। এই ইনক্রিমেন্টের আর
্থিক মূল্য প্রত্যেক চাকুরের মূল বেতনের ৫ শতাংশের সমান নির্ধারণের সুপারিশও রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। এটি হলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কখনো পদোন্নতি না পেলেও ১৫ বছরে তাঁর বেতন দ্বিগুণ হবে। এ ছাড়া একজন চাকরিজীবী সর্বোচ্চ ২০টি ইনক্রিমেন্ট পেতে পারবেন- এমনটাই বলা হয়েছে কমিশনের সুপারিশে। সুপারিশে সরকারি চাকরিতে যোগদানের শুরুতেই চাকরিজীবীদের একটি স্থিতি ভাতা দেওয়ার সুপারিশের পাশাপাশি লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক ও নিজেদের আয়ে ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জনবলের বেতন-ভাতা দিতে সক্ষম তাদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর সুপারিশও রয়েছে প্রতিবেদনে। নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার তারিখে যাঁরা উচ্চতর বেতন স্কেলের পদে পদোন্নতি পাবেন তাঁদের বেতন প্রথমে নিম্নপদে নির্ধারণের পর পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। এসব সুপারিশের পাশাপাশি বিভিন্ন পদে গড়ে শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি আজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দেবেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ। সকাল ৯টায় সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেবেন তিনি। রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি শিল্প ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কেও সুপারিশ রয়েছে কমিশনের। এ সম্পর্কে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, 'লোকসানি প্রতিষ্ঠান যাতে লাভজনক হতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বিরাষ্ট্রীয়করণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠান স্বাবলম্বী অর্থাৎ সরকারের আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং নিজস্ব তহবিল থেকে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতাদিসহ সব ব্যয় নির্বাহে সক্ষম, সেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে পারে। তবে কাঠামোর মধ্যে গ্রেড/স্কেলের সংখ্যা জাতীয় বেতন স্কেল কাঠামোর সংখ্যার সমান হওয়া বাঞ্ছনীয়।' কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে সরকারি চাকুরেদের বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে ১৬ গ্রেডে বিভক্ত করে তাঁদের বেতন-ভাতা গড়পড়তায় শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ১৬তম গ্রেড অর্থাৎ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বর্তমানে মূল বেতন চার হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে আট হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ মন্ত্রিপরিষদসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মূল বেতন এখনকার ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। বিদ্যমান কাঠামোর ৯ নম্বর গ্রেডের এ কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত কাঠামোতে ৮ নম্বর গ্রেডে এনে তাঁদের মূল বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশাসনের উপসচিব বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের এখন মূল বেতন ২২ হাজার ২৫০ টাকা। প্রস্তাবিত কাঠামোতে তাঁদের মূল বেতন ৪৫ হাজার টাকা। উপসচিবরা আগের মতো ৫ নম্বর গ্রেডেই থাকছেন। ৪ নম্বর গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে যুগ্ম সচিব ও একই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বর্তমানের মূল বেতন ২৫ হাজার ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ নম্বর গ্রেডের বা প্রশাসনের শীর্ষ নির্বাহী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মূল বেতন ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণত সচিবের পদটিকেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ বলে মনে করা হয়। আর সিনিয়র সচিবদের বর্তমানের ৪২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮৮ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, "কমিশন বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণি বিভক্তি উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। বিদ্যমান বেতন কাঠামোতে প্রচলিত ২০টির পরিবর্তে ১৬টি স্কেল বা গ্রেডের সুপারিশ করেছে। সুপারিশকৃত সর্বনিম্ন বেতন ৪২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ বেতন (সচিবদের) ৮০০০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত ১ঃ৯.৭৬। কমিশন 'ইবি' বা এফিসিয়েন্সি বার উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে যোগদানের শুরুতেই চাকরিজীবীদের একটি স্থিতি ভাতা প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।" বেতন নির্ধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপের ৯.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "বর্তমান বেতন স্কেল অর্থাৎ বিদ্যমান স্কেলের প্রারম্ভিক ধাপে বেতন আহরণকারী কোনো ব্যক্তির বেতন নতুন স্কেলের মধ্যে উচ্চতর স্কেলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির বেতন নতুন 'জাতীয় বেতন স্কেল'-এর (সম্ভাব্য ২০১৫) অনুরূপ স্কেলের প্রারম্ভিক ধাপেই নির্ধারিত হবে। তবে একীভূত দুইটি স্কেলের মধ্যে উচ্চতর স্কেলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির বেতন প্রারম্ভিক ধাপের পরবর্তী উচ্চতর ধাপে নির্ধারণ করা হবে।" 'যদি কোনো ব্যক্তির মূল বেতন বর্তমান বেতন স্কেলের সর্বনিম্ন ধাপের উচ্চতর হয়, তবে প্রথমত উভয় ধাপের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করা হবে। এরপর নির্ণীত পার্থক্য অনুরূপ স্কেলের (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) প্রারম্ভিক ধাপের সঙ্গে যোগ করতে হবে। এ যোগফল যদি অনুরূপ স্কেলের কোনো ধাপের সমান হয়, তাহলে পরবর্তী উচ্চতর ধাপে তাঁর বেতন নির্ধারণ করা হবে।' বলা হয়েছে ৯.৩ অনুচ্ছেদে। পরের অনুচ্ছেদে ২০টি গ্রেডকে ১৬ গ্রেডে নামিয়ে আনা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, 'বর্তমান বেতন স্কেলের পর পর দুইটি স্কেল একীভূত করে যে একটি স্কেল সুপারিশ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে একীভূত দুইটি স্কেলের মধ্যে নিম্নতর স্কেলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির বেতন অনুচ্ছেদ ৯.২ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। তবে একীভূত দুইটি স্কেলের মধ্যে উচ্চতর স্কেলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির বেতন অনুচ্ছেদ ৯.২ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হলে যে ধাপে পৌঁছে, তার পরবর্তী উচ্চতর ধাপে নির্ধারণ করা হবে।' তবে যেসব কর্মকর্তার বেতন নতুন জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৮০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) বা তার বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ৯.১, ৯.২ ও ৯.৩ প্রযোজ্য হবে না। সারসংক্ষেপের ৯.৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "যদি কোনো ব্যক্তির বর্তমান বেতন নতুন 'জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫'-এর অনুরূপ স্কেলের সর্বোচ্চ সীমার উর্ধ্বে হয়, তাহলে নতুন 'জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫'-এর অনুরূপ স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় তাঁর বেতন নির্ধারণ করে বর্তমান বেতন এবং 'জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫'-এর অনুরূপ স্কেলের সর্বোচ্চ বেতনের যে পার্থক্য থাকবে, তা তাঁকে ব্যক্তিগত বেতন হিসেবে প্রদান করা হবে।" কমিশনের সদস্যরা জানান, প্রতিবেদনে বেতন-ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে মেধাবী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য 'প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন' নামে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। প্রস্তাব মতে, প্রশাসনিক সংস্কার কমিটির কাজ হবে মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের পদোন্নতি নিশ্চিত করা। কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করবে সচিব কমিটি। সেখান থেকে চূড়ান্ত হয়ে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন কাঠামো বাস্তবায়িত হবে বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।    

No comments:

Post a Comment