Sunday, July 20, 2014

নানা শঙ্কায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক:কালের কন্ঠ

২০১৬ সালের ৩০ জুন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিলেও ভবিষ্যতে সরকার বদলালে ব্যাংকটির বা এর স্টাফদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া প্রকল্পের জনবল দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ব্যা
ংক পরিচালনা করা আদৌ সম্ভব হবে কি না সে বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে তাঁদের। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে থাইল্যান্ড সফরে গিয়ে সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেন। বিএনপি ক্ষমতায় এসে এ প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি চালু করে। তাই ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে এ প্রকল্পের ভিত্তিতে গড়ে তোলা ব্যাংক ও এর জনবলের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বিল নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তাতে ভবিষ্যতে সরকার বদলালেও ব্যাংকটির জনবলের যাতে কোনো অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেভাবে আইন করার ওপর গুরুত্ব দেয় তারা। এ প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য বেগম আকতার জাহান বলেন, ‘কখনো কখনো এক সরকারের সময়কালে নিয়োগপ্রাপ্ত কিংবা আত্মীকৃত জনবল অন্য সরকার কর্তৃক বাতিল করে দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কাজেই একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের জনবল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে আত্মীভূত হওয়ার পর যাতে তাঁদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, সে জন্য বিধিবিধান করা উচিত।’ কমিটির আরেক সদস্য মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল ব্যাংকে আত্মীভূত হওয়ার পর যাতে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি না হয় কিংবা কাউকে আদালতে যেতে না হয়, তার জন্য সুস্পষ্ট বিধান থাকা দরকার।’ ব্যাংকিং কার্যক্রমে অজ্ঞ প্রকল্পের জনবলকে ব্যাংকে নিয়োগ দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর প্রকল্পের সব কর্মী ব্যাংকের জনবলে পরিণত হবে। কিন্তু ব্যাংকের কাজ সম্পূর্ণ পৃথক বিধায় তাঁদের পক্ষে পেশাদারি দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে কি না, সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে।’ আবদুর রাজ্জাক আরো বলেন, ‘প্রস্তাবিত ব্যাংক স্থাপিত হলে মূল প্রকল্পের আদর্শ লক্ষ্যচ্যুত বা উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় কি না বা দারিদ্র্য বিমোচনে একটি বাড়ি একটি খামার আন্দোলন বা স্লোগানটি হারিয়ে যাবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।’ এদিকে ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ বন্ধে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বরখাস্ত করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে খসড়া বিলে একটি উপধারা সংযোজনের সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে তাতে আপত্তি রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। বিলের ৩(৫) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ রোধকল্পে, আবশ্যকীয় হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া আদেশের মাধ্যমে উক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তাহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে না, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান নির্বাহী বা এমডিকে অপসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ব্যাংক কম্পানি আইন মোতাবেক সব বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমডিকে অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অধিকার সম্ভবত শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে আছে। আর এটা তো বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক।’ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে যেসব অনিয়ম হচ্ছে, তার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. শওকত চৌধুরী। তিনি বলেন, হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নেওয়া এ প্রকল্পটি চমৎকার। তবে সদস্যদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, কোনো কোনো উপজেলা কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনে অনীহা রয়েছে। সদস্য করার সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার পর সেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্যদের মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৮২ কোটি টাকা। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে সদস্যদের অ্যাকাউন্টে রাখা আছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর সমিতির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকের জনবল হিসেবে স্থানান্তরিত হবে, তখন ব্যাংকও এই প্রকল্পের মতোই কাজ করবে। তবে এখন সদস্যদের সঞ্চয়ের সমপরিমাণ অর্থ সরকারও দিচ্ছে প্রকল্পটিতে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরও সরকারের এমন অর্থায়ন থাকবে কি না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার সংসদীয় কমিটিকে জানান, ২০১৬ সাল পর্যন্ত সমিতি গঠন করা হবে এবং এর আগ পর্যন্ত সরকারি আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সমিতির টাকা ব্যাংকে জমা হবে। এরপর সহায়তা অব্যাহত থাকবে কি না, সে বিষয়ে সরকার নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে।

No comments:

Post a Comment