Sunday, July 27, 2014

তবু ঈদকার্ডের কদর!:প্রথম অালো

‘অতি উল্লাসে আগমন প্রতি নীড়ে হবে ঈদ আয়োজন, ভেদাভেদ নাই বন্ধু এ দিন অন্তরে এসো বন্ধু তুমি আমাদেরই এ কুটিরে’, ‘ঈদের দিন আমাদের বাসায় আসবে কিন্তু ভাই’, ‘ভালো আছি—ভালো থেকো ঈদ মোবারক ইতি তোমার...’ একসময় এভাবে এমন হাজারো ভাষায় উৎসবপ্রিয় মানুষের উষ্ণ অভিনন্দন ছড়িয়ে পড়ত কার্ডে কার্ডে। ঈদের কেনাকাটার নানা অনুষঙ্গে ঈদকার্ড ছিল অতি জরুরি। কিন্তু সেই দিন অনেক পাল্টে গেছে। এখন ঈদের কেনাকাটায় চাঁদরা
তে মেসেজ পাঠানোর জন্য কেনা হচ্ছে মুঠোফোনের কার্ড। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভার্চুয়াল নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হচ্ছে ঘরে বসে। তাই বলে ঈদকার্ড চিরতরে নির্বাসনে চলে গেছে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। এখনো ঈদকার্ডের যথেষ্ট কদর এ প্রজন্মের কাছে। গতকাল রাজধানীর পাড়ামহল্লায় দেখা গেছে ছোট্ট পরিসরে ঈদকার্ডের অস্থায়ী দোকান। ঈদের বাজারে জামাকাপড়, জুতার পাশাপাশি কার্ডসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী কিনছেন তরুণ-তরুণীরা। ক্রেতাদের মুখে শোনা যায় একই কথা। ‘হাতে আছে এক দিন। এখন না কিনলে উপহার পাঠানোর আর তো সময়ই পাব না’ এভাবেই আক্ষেপ করে নাটক সরণিতে (বেইলি রোডে) হন্যে হয়ে বন্ধুর জন্য উপহার খুঁজছিলেন বাসাবোর লিমা জোহরা। রাস্তায় এক পাশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে ঈদকার্ড বিক্রির আয়োজনের দৃশ্যটা বেশি দেখা গেছে পুরান ঢাকায়। এসব দোকানের বেশির ভাগের উদ্যোক্তা শিশু-কিশোর। ওয়ারীর পদ্মনিধি লেন এলাকায় সাব্বির, ফারদিন, ফরহাদকে দেখা গেল, সেখানকার একটি গলিতে দোকান সাজিয়ে বেচাকেনায় ব্যস্ত। এই তিন নবীনের অস্থায়ী দোকানে ফুল, পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবির পাশাপাশি কার্টুনসদৃশ কার্ড রয়েছে। বেচাকেনা কেমন? জানতে চাইলে ফারদিনের জবাব, ‘খারাপ না। তয় টেনশনে আছি। চান রাইতের আগে সব কার্ড বেচা হইব কি না বুজতাছি না! বিক্রির সব টাকা জমাইয়া চান রাইতে মার্কেটে যামু।’ সঙ্গে থাকা সাব্বির গুমর ফাঁস করে দিলেন, ‘সব বিক্রি না হইলেও আমগো টাকা উইঠা গ্যাছেগা!’ রাজধানীর হলমার্ক, আর্চিজ গ্যালারির একাধিক শোরুমে তরুণ-তরুণীদের ঈদকার্ড কিনতে দেখা যায়। কার্ডের পাশাপাশি ব্রেসলেট, চেইন, আংটিও উপহার হিসেবে কিনছেন অনেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, ঈদকার্ডের পাশাপাশি লাভকার্ডও বিক্রি হচ্ছে বেশ। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা দামের কার্ডও মিলবে এখানে। কার্ডের পাশাপাশি ঘড়ি, শোপিস ও পুতুল চলছে বেশ। প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে অনেকেই আবার শখ করে হাতের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দেন। ফকিরাপুলের বাসিন্দা হাসনাত শাহিন পেশায় সংবাদকর্মী। পেশাদার শিল্পী না হলে স্কেচে পোট্রে৴ট অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত তিনি। জানালেন, বাজার থেকে সাদা কার্ড কিনে সেখানে প্রিয় কয়েকজন মানুষকে তাঁদের পোট্রে৴টে এঁকে নিজেই তৈরি করছেন ব্যতিক্রমী ঈদকার্ড। শুভেচ্ছার ভাষাটা ছাপার বদলে নিজের হাতের লেখায় বাড়তি আনন্দ আছে বৈকি। প্রযুক্তির কল্যাণে যুগ বিস্তর পাল্টেছে। প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি, নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হয় জীবনে। তবু চিঠির একটা অন্য রকম আবেদন এখনো আছে। ঈদকার্ডও তেমনি। ফেসবুক, টুইটার-প্রজন্মের কাছে এখনো ঈদের উপহার দেওয়া-নেওয়ার আনন্দ নেহাত কম নয়।

No comments:

Post a Comment