ভাড়া বেশি, প্রয়োজনে পাওয়া দুষ্কর—এই হলো ঢাকার ট্যাক্সিক্যাব সেবা। এর মধ্যেই আবার ভাড়া বৃদ্ধির আবেদন করেছে ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান দুটি। ফলে অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে যাত্রা করা ট্যাক্সিক্যাব ঢাকাবাসীকে কোনো আশা দেখাতে পারছে না। কারণ কী? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট চুক্তি মেনে সময়মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্যাক্সি নামায়ন
ি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) নতুন কোম্পানিকে সুযোগ দিয়ে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেনি। একচেটিয়া ব্যবসার ফল হিসেবে যাত্রীসেবা গৌণ হয়ে গেছে, কেবল লাভের তাড়না বেড়েছে। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া যায় না। ফোন করে ট্যাক্সিক্যাব ভাড়া করলে যাত্রী পর্যন্ত আসার আগেই মিটারে শতাধিক টাকা ভাড়া উঠে থাকে। আইন অনুযায়ী এ ভাড়া হওয়ার কথা ছিল ২০ টাকা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতা না থাকায় ট্যাক্সিক্যাব নামানোর আগেই নীতিমালা পরিবর্তন করে এক দফা ভাড়া বৃদ্ধি করিয়ে নিয়েছিল এই দুই প্রতিষ্ঠান। গত মে মাসে এই ট্যাক্সিক্যাব সেবা চালু হয়। দুই মাস যেতে না–যেতেই সম্প্রতি রাত ১২টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির আবেদন করেছে তারা। কিন্তু ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় বলা আছে, এ সেবা ২৪ ঘণ্টার জন্য। দিন-রাতের কোনো ফারাক নীতিমালায় নেই। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চাইলে একসঙ্গে পাঁচ-সাতটা প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ ছিল। এতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতো এবং গ্রাহকসেবাও বৃদ্ধি পেত। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনেকগুলো কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর করা হয়নি। প্রতিযোগিতাহীন বাজারের সুবিধা নিতে একের পর এক দাবিদাওয়া তুলছে কোম্পানি দুটি। জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ট্যাক্সিক্যাব নামানোর জন্য তিনি চিঠি দিয়েছেন, বৈঠক করেছেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। কিন্তু আমরা এটা অনুমোদন করব না।’ গত বছর জুলাইতে তমা কনস্ট্রাকশন ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে আড়াই শ করে ঢাকায় ৫০০ ট্যাক্সিক্যাব নামানোর অনুমতি দিয়েছিল বিআরটিএ। চার মাসের মধ্যে নামানোর কথা থাকলেও গত ২২ মে ৪৭টি ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে এর যাত্রা শুরু করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৬১টি ট্যাক্সিক্যাবের নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে তমা কনস্ট্রাকশন ১১১টি এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ৫০টি ট্যাক্সিক্যাব নামিয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও যোগাযোগসচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেছিলেন, জুনের মধ্যে ৫০০ ট্যাক্সিক্যাব নেমে যাবে। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করা যায়নি। অবশ্য আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল আরও ১৯টি ট্যাক্সিক্যাবের নিবন্ধন হয়েছে। জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দিনে গড়ে পাঁচটি মামলা দিচ্ছে পুলিশ। অবৈধ পার্কিং, ইন্ডিকেটর ও পেছনের বাতি না জ্বলার দায়ে এসব মামলা দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই সেবা বন্ধই হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অনেকগুলো ট্যাক্সিক্যাব জাহাজে উঠেছে। কিছু দেশে এসেছে, এখন রাস্তায় নামানোর অপেক্ষায় আছে। আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সব ট্যাক্সিক্যাব নামলে ভাড়া ও যাত্রী হয়রানি কমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যে ট্যাক্সিক্যাবগুলো রাস্তায় নেমেছে, সেগুলোর মূল লক্ষ্য এখন পাঁচতারা হোটেল, বড় হাসপাতাল ও বিমানবন্দরের যাত্রী। কারণ এই তিন স্থান থেকে যাত্রীরা দূরের গন্তব্যে যায়। তবে বিমানবন্দরে অন্য রেন্ট কারের ব্যবসায়ীরা ট্যাক্সিক্যাব দাঁড়াতে দেয় না। বিষয়টি সুরাহার জন্য ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনাকারীরা বিআরটিএর দ্বারস্থ হয়েছে। বিআরটিএ বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলেছে। এখন আন্তমন্ত্রণালয় সভা করারও প্রস্তুতি চলছে। ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আবিদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্যাক্সিক্যাব নামানোটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। গতকালও নতুন ১৯টি ট্যাক্সিক্যাবের নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। তিনিও দাবি করেন, পার্কিংসহ নানা সমস্যার কারণে মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের গাড়িগুলো। ট্যাক্সির ভাড়া: গত মে মাসে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে ট্যাক্সিক্যাবের যে ভাড়া হার নির্ধারণ করা হয়, তাতে প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য রাখা হয় ৮৫ টাকা। যা এশিয়ার অনেক বড় শহরের তুলনায় বেশি। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৪ টাকা। প্রতি দুই মিনিট অপেক্ষমাণ সময়ের (যানজট, যাত্রাবিরতি ও সংকেত) জন্য সাড়ে আট টাকা। গ্রাহক ফোন করে ট্যাক্সিক্যাব ভাড়া করলে বাড়তি দিতে হবে ২০ টাকা। কিন্তু এখন ফোন করলে চালক যে জায়গায় থাকেন, সেখান থেকেই মিটার চালু করে দিচ্ছেন। এতে যাত্রী ওঠার আগেই মিটারে ১০০ টাকার ওপরে ভাড়া উঠে যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment