Friday, July 18, 2014

ঈদের পর কী হবে:যুগান্তর

আন্দোলন ঠেকাতে সক্রিয় প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন ঈদের পর বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় ছক কষছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন মহল ইতিমধ্যে সহিংসতা দমনের নামে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে মোকাবেলায় প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারের তরফ থেকে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পুরনো মামলা সক্রিয় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিএনপ
িকে বিভ্রান্ত করতে সরকার ভিন্ন উপায়ও গ্রহণ করতে পারে। আর রাজপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদক্ষেপ কী হবে- তা শরিকদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে। সরকারি দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে রাজপথে সক্রিয় থাকবে দলীয় নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করতে তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই অংশের নির্বাচনের বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন। পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপিকে আন্দোলনে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হতে পারে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে আবারও রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে দলটির চেয়ারপারসন বলেন, আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। আন্দোলনে কোনো ধরনের বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হলে পাল্টা আঘাত করা হবে। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বাধা এলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে বিএনপির লক্ষ্য শুরুতে অর্থাৎ এখনই আক্রমণে না যাওয়া। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আজ সকালে তারা তাদের রাজনৈতিক মিত্র ১৪ দলের শরিক সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। এ বৈঠকে ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের হুমকির বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ সময় বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় শরিক সংগঠনগুলোর মতামত জানতে চাওয়া হবে। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নিজ দলীয় ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে। নেতাদের মতে, বিরোধী দলকে মোকাবেলায় রাজপথে তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি থাকবে। পাশাপাশি ঢাকায় যাতে কোনোভাবে আন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে- সেজন্য বিভক্ত ডিসিসির দুই অংশের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিও নতুন করে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ কারণে ডিসিসিতে রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে সরকার। ডিসিসির নির্বাচনের হুজুগ তুলে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে এ কৌশল নেয়া হতে পারে। বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তাদের বাধা নেই। তবে যদি কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দমন করবে। তিনি বলেন, এরা আন্দোলন করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই বিএনপির কর্মসূচি সফল হবে না। ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আন্দোলনের নামে গাড়ি পোড়ালে তারা রামকৃষ্ণ মিশনে বসে থাকবেন না। ঈদের পরও তাদের উন্নয়ন কাজ চলবে। নাসিম আরও বলেন, তারা বিরোধী দলে থাকতে আন্দোলন করেছেন। তখন সরকার পড়েনি। নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে যত আন্দোলনই হোক, লাভ নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে বিএনপির অবস্থা খারাপ হবে। হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকারের বাধা দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ২০১৩ সালের মতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে অবস্থা খারাপ হবে। এবার জনগণই তাদের শায়েস্তা করবে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিতে দেশ ফিরে যাক ক্ষমতাসীনরা আর কোনওভাবেই তা চান না। তাই আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের সহিংস হয়ে উঠতে দেয়া হবে না। তারা যাতে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে না পারে সে বিষয়টি তারা বিবেচনায় রেখেছেন। আর তাই বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা আসার পরপরই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তারা আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব, পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত এবং তারও আগে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থার খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের যেসব মামলা নিষ্ক্রিয় আছে, সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করতে পুলিশকে বলা হয়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে সারা দেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৯ হাজারের মতো মামলা দায়ের হয়। নির্বাচনের আগে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার সাত শতাধিক মামলা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় একশ’র কাছাকাছি মামলা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার মামলার খড়গ রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর। এসব মামলার অর্ধেকের তদন্ত শেষে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। এখন আন্দোলনের ঘোষণার পর বাকি মামলা তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলায় পুলিশের মামলা তদন্তের এ মিশন মূলত বিরোধীদের শক্তি সঞ্চয়ে বাধা দেয়ার কৌশল। এদিকে আন্দোলনের নামে সব ধরনের নাশকতা বা জ্বালাও-পোড়াও রোধে পুলিশ, র‌্যাব এবং সবকটি গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। পাশাপাশি তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্য সরঞ্জাম মজুদ করছে। বিরোধী নেতাকর্মীরা রাজপথে সহিংস হয়ে উঠলে প্রশাসনিকভাবে তা দমন করার নির্দেশ রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সবগুলো বাহিনীর কাছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে বিরোধী দলকে মোকাবেলার জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কারণে ঈদের পরপরই মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির ঘোষণা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নেতারা আশা করছেন, নতুন নেতৃত্ব পেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল হবে। আসছে হরতাল-অবরোধসহ শান্তিপূর্ণ প্যাকেজ কর্মসূচি হাবিবুর রহমান খান নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর আবারও রাজপথে নামছে বিএনপি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো পরিকল্পিত প্যাকেজ কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করার পরিকল্পনা করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। শুরুতেই আক্রমণাত্মক কোনো কর্মসূচি না দিয়ে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল ও গণঅবস্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এর মাধ্যমে চাঙ্গা করা হবে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মনোবল। সেই সঙ্গে ফিরিয়ে আনা হবে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের পারস্পরিক আস্থা। পাশাপাশি অব্যাহত রাখা হবে নিজেদের দাবির সপক্ষে সমর্থন আদায়ে নানা কূটনীতিক তৎপরতা। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এক ধরনের ‘ওয়ার্ম-আপ’ হবে নেতাকর্মীদের। দুর্ভেদ্য ডিফেন্স তৈরি করে তারপর মাঝমাঠ দখলের টার্গেট। এরপর মাঝ মাঠ থেকে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হবে যাতে নিশ্চিত গোল আদায় করা যায়। আর এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করাও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর যদি এ ধরনের কর্মসূচিতে আশানুরূপ ফল না আসে অর্থাৎ সরকার তার নিজের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে থেমে থেমে অথবা লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া বেশ কিছু কর্মসূচি কৌশলগত কারণে গোপন রাখা হয়েছে। যা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কার্যকর করা হবে। এছাড়া দলীয় একাধিক সূত্র আরও জানায়, আগামী কোরবানির ঈদের আগে ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে সরকার সংকট নিরসনে আন্তরিক না হলে ঈদুল আজহার পর (অক্টোবরের শেষের দিকে) কঠিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে দলটি। নভেম্বর থেকে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার ছক আঁকছেন তারা। তবে সংলাপের দরজা খোলা রেখেই আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্ত করা হবে। ঈদুল ফিতরের পরপরই দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি সমানতালে চলবে দল পুনর্গঠনের কাজও। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আন্দোলনের কৌশল নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে নেতাদের মতামত নিচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলছেন। বুধবার মহানগর বিএনপির এক ইফতার অনুষ্ঠানে ঈদের পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে সুস্পস্ট ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন দেশের মানুষ এই সরকারকে হটাতে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলন মানে মারধর, জ্বালাও-পোড়াও নয়। ঈদের পরে আমাদের আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পারছি, ঈদের পর আওয়ামী লীগও পাল্টা রাজপথে নামবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আপনারা রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভালো। তবে পুলিশ ও গুণ্ডা বাহিনী নিয়ে অস্ত্র হাতে রাজপথে নামবেন না। এটা করা হলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে। এর পরিণতি ভালো হবে না।’ জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই বিএনপি আন্দোলন করছে। ঈদের পরে গণদাবি আদায়ে দলের চেয়ারপারসন আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আশা করি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও সেই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। জনগণের দাবি আদায়ে যে কর্মসূচি দেয়া প্রয়োজন তাই দেয়া হবে। সরকার এতে বাধা দিলে জনগণই এর জবাব দেবে। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বিএনপি আন্দোলনে বিশ্বাসী দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা তো আন্দোলনই করতে চান না। সরকার সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিলে তো আন্দোলনের প্রয়োজন পড়ে না। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর দেশের বিশিষ্টজনরা এমনকি বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। বিএনপিও একই দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকার কারও কথাই পাত্তা দিচ্ছে না। তারা একদলীয় মনোভাব নিয়ে দেশ শাসন করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। হরতালসহ প্যাকেজ কর্মসূচি : দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ঈদের পরপরই স্থায়ী কমিটি ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের মতামত নেবেন তিনি। এরপর চূড়ান্ত করা হবে প্রথম ধাপের কর্মসূচি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে হরতাল, গণমিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি কয়েকটি বিভাগ ও জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিও থাকবে। তবে আন্দোলনের শুরুতে নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তারা আরও জানান, শোনা যাচ্ছে, ঈদের পরপরই জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে পারে সরকার। যদি এমন সিদ্ধান্ত আসে তাহলে এর প্রতিবাদে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে। এছাড়া আইনশৃংখলার অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংকট, ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ঘেরাওসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, দাবি আদায়ে আন্দোলনকে ধাপে ধাপে কঠোরতার দিকে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। কিন্তু সব কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রেই সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি স্কুল ও কলেজের পরীক্ষা, ধর্মীয় উৎসব, মিত্র দেশগুলোর কূটনীতিকদের পরামর্শসহ জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে দলটি। দল গোছানোর কাজ : দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি সংগঠন পুনর্গঠনেও সমান গুরুত্ব দেয়া হবে। সরকারবিরোধী যে কোনো আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে ঢাকা মহানগরীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। রাজধানীর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। অতীতের যে কোনো সফল আন্দোলনে তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। ভবিষ্যৎ আন্দোলনে স্ট্রাইকিং পজিশনে ঢাকা মহানগরীর নেতাকর্মীদের খেলানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যেই পুনর্গঠন করা হচ্ছে এ ইউনিটটিকে। ইতিমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে মহানগীর আহ্বায়ক হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের রাখা হবে। ঈদের পর পরই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। ওই কমিটির শক্তি জানান দিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। আগামী ঈদুল আজহার আগে এই সমাবেশ করা হতে পারে। ওই সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিতে পারেন খালেদা জিয়া। মহানগরীর পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল ও কৃষকদলের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। যোগ্য ও সাহসী নেতাদের দিয়ে এসব সংগঠন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ, পেশাজীবী ও কূটনীতিকদের সমর্থন আদায় : সূত্র জানায়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীকেও তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। সংকট নিরসনে আলোচনায় বসাতে সরকারের ওপর পেশাজীবীদের চাপ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এছাড়া একই দাবিতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টার উদ্যোগ নেয়া হবে। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী বলে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এই ঐক্য গড়ে তোলার চিন্তা রয়েছে। বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডিসহ বাম ঘরানার দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে। একই প্লাটফর্মে না হলেও যার যার অবস্থান থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা এ লক্ষ্যে কাজ করছেন। এছাড়া কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। দলটির নীতিনির্ধারকদের মতে, প্রতিবেশী ভারত ছাড়া প্রায় সবগুলো শক্তিশালী দেশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে। সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত একটি নতুন নির্বাচনেরও তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভারতের মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি। দলটির নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করতে। ওই নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি- মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এমন একটি স্টেটমেন্ট প্রত্যাশা করছেন তারা। এ লক্ষ্যে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা কাজও করছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনাকালে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশের বিষয়টি ওঠতে পারে। ওই সময় স্পষ্ট হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদি সরকারের অবস্থান কি।  

No comments:

Post a Comment