কে যে কখন কোন স্টাইলে খেলবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। সবকিছ্ইু নির্ভর করে কোচ মহোদয়ের ওপর। তিনি ডাগ আউটে থেকে খেলা যতটা ভালো দেখেন বা বুঝেন ততটুকু খেলোয়াড়েরা বুঝেন না। তাই ম্যাচের ভালো কিংবা মন্দের দায়ভার অনেকাংশেই কোচের ওপর বর্তায়। তবে কোচের কথামতো বা নির্দেশমতো খেলোয়াড়েরা না চললে বা না মানলে অবশ্যই শাস্তির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় সেই খেলোয়াড়কে। সে ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। নিজের পা বাঁচিয়ে খেললে
অনেক রকমেই খেলা যায়। ম্যাচে এখন শুধু পা, হাঁটুই বিপজ্জনক নয়। পিঠ, ঘাড় কিংবা কোমর। কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। এ কারণেই হয়তো আর্জেন্টিনা প্রথমেই গোল করার পর বাকিটা সময় গা বাঁচিয়ে খেলেছে। ডি মারিয়া থাই ইনজুরিতে পড়ে চলে গেলেন মাঠের বাইরে। তিনি যতক্ষণ ছিলেন, আক্রমণের একটা ধারা ছিল। ৩৩ মিনিটে তার বদলে এলেন পেরেজ। মারিয়া ও পেরেজের পার্থক্যটা টের পেয়ে গেলেন পৃথিবীজোড়া ভক্তরা। মেসি কিছু সময় ঝলক দেখিয়েছেন। তবে উল্লেখ করার মতো নয়। ম্যাচের শেষ দিকে যে মিসটি করেছেন, তা বেদনা দিয়েছে ভক্তদের। তবে যারা ফুটবলের সাথে জড়িত তারা এটিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। মিস খেলারই একটি অংশ। তবে কাব ফুটবলে মেসি সাধারণত এমন মিস করেন না। আমার মনে হয়েছে, আর্জেন্টিনা শিবিরে সবাই কান্ত ও পরিশ্রান্ত। কয়েকদিনের মধ্যে পাঁচটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। প্রতিটি ম্যাচই ছিল সম্মান বাঁচানোর ম্যাচ। এখন পর্যন্ত ভাগ্য ভালো ইংল্যান্ড, ইতালি, উরুগুয়ের মতো বিদায় হতে হয়নি। দুই যুগ পর সেমিতে আর্জেন্টিনা। ওই সময়ে ম্যারাডোনা এই সময়ে মেসি। যোগ্য জবাব দেয়ার জন্য মেসিকে থাকতে হবে নিরাপদ অবস্থানে। মেসি ঝলক দেখাতে পারে আর না পারে, তার মাঠে থাকাই প্রতিপক্ষের জন্য চাপ। ব্রাজিলের নেইমারকে দেখে কিছুটা চিন্তিত আর্জেন্টিনা শিবির। তাই কোচেরও হয়তো নির্দেশ থাকতে পারে ফুল অ্যাটাকে অ্যাফোর্ট না দেয়ার। সেই নির্দেশ মেনেছে শিষ্যরা। বেলজিয়ামও চেয়েছে গোল। তবে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে। উভয় দলেরই কাউন্টার অ্যাটাকগুলো ছিল ভয়াবহ। প্রতিটি আক্রমণই নসাৎ হয়েছে গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় এবং কিছুটা নিয়তির গুণে। ম্যাচে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় ছিল, উভয় দলই একসাথে ওপরে উঠেছে এবং নেমেছে। কিন্তু ডিফেন্স কেউ খালি করেনি। শেষ দিকে গোল পরিশোধে মরিয়া বেলজিয়ামের সবাই ওপরে উঠে গেলেই আকর্ষণীয় সুযোগটি পায় মেসি। যেটি শেষপর্যন্ত কার্যকর হয়নি। তা ছাড়া অতদূর বল টেনে নিয়ে শেষতক শক্তি জোগাড় করতে পারেননি। আর্জেন্টিনা আরো যে কাজটি করেছে সেটি হলো সবাই দম রেখে খেলেছে। দমের ঘাটতিতে কেউ পড়েনি। দুর্ভাগ্যই বলতে হতো, যদি নেদারল্যান্ডস হেরে যেত। পরিশ্রমের ফসল তারা উপভোগ করেছে। রোবেন ও পার্সি যে পরিশ্রম করেছেন। তার প্রতিদান পেতে টাইব্রেকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই কোস্টারিকা দ্বিতীয় রাউন্ডে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হারায় গ্রিসকে। সেসময় সেরাটা দিতে পারলেও নেদারল্যান্ডসের কাছে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ডাচদের কোচ যে রিস্ক নিয়েছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। এই সময়ে এমন গুরুতর রিস্ক আরো একজন নিতে পারেন। তিনি হলেন ব্রাজিলের কোচ সোলারি। এখানেই কোচের মহিমা। তা না হলে ১১৯ মিনিট গোল পোস্ট আগলে রাখা চিলেসেনকে কেন বসিয়ে টিম ক্রুলকে মাঠে নামাবেন। কোচ ভ্যান গাল হয়তো চিন্তা করেছেন নতুন গোলরক্ষককে কিছুতেই বুঝতে পারবে না কোস্টারিকা। চিলেসেনকে তারা বুঝে ফেলেছে। হয়েছেও তাই। টিম ক্রুল কোস্টারিকার দুইজনের বল ফিরিয়ে দিলেন। অথচ কোস্টারিকার পোস্টে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানো নাভাস টাইব্রেকারে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। চার গোল হজম করতে হয়েছে তাকে। বিশ্বকাপ থেকে কোস্টারিকা বিদায় হলেও গোলরক্ষক নাভাস ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন পৃথিবীর কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে। আলফাজ আহমেদ, সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় ফুটবল দল।
No comments:
Post a Comment