ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হানার বিরোধিতা ও পাকিস্তানি ‘সন্ত্রাসী’ হাফিজ সাইদের সঙ্গে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকের সাক্ষাৎ ঘিরে লোকসভায় বিজেপি সরকার নাজেহাল হলো। এই দুই প্রশ্নে গতকাল মঙ্গলবার লোকসভার দুটি কক্ষই দফায় দফায় মুলতবি হয়। ইসরায়েলি হানার বিরুদ্ধে লোকসভায় প্রস্তাব গ্রহণে সরকার অস্বীকার করায় অধিকাংশ বিরোধী সদস্য অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন। তবে হাফিজ সাইদের সঙ্গে সাংবাদিক বেদ প্রতাপ বৈদিকের
সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সরকার এদিনও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, সাইদের সঙ্গে তাঁর মোলাকাত ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগ।এতে সরকারের কোনো ভূমিকাই নেই। ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালাচ্ছে। এই হামলার ফলে গাজার জনজীবন বিপর্যস্ত। নিহতের সংখ্যা দুই শ ছুঁই ছুঁই। শত শত বাড়ি ধূলিসাৎ। আহতের সংখ্যা হাজার পেরিয়েছে। এই অমানবিক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একটি প্রস্তাব গ্রহণের জন্য বিরোধীরা লোকসভার অধিবেশনের শুরু থেকেই দাবি জানাতে থাকেন। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পিডিপি সদস্য মেহবুবা মুফতি ও তারিক হামিদ কারা বিভিন্ন পোস্টার নিয়ে লোকসভার ‘ওয়েলে’ নেমে সরকারি বিবৃতি দাবি করেন। পাশাপাশি, পাকিস্তানের জামাত উদ দাওয়া প্রধান ও মুম্বাইয়ে ২৬/১১-এর হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হাফিজ সাইদের সঙ্গে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক বেদ প্রতাপ বৈদিকের সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করেও বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করতে থাকেন। এই দুই বিষয় নিয়ে দুই কক্ষই একাধিকবার মুলতবি হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাজ্যসভায় এবং সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু লোকসভায় বলেন, ওই সাংবাদিকের পাকিস্তান সফর ও হাফিজ সাইদের সঙ্গে মোলাকাত সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত উদ্যোগ। উনি কারও দূত হিসেবে যাননি, সরকারও এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। সাংবাদিক বেদ প্রতাপ যোগগুরু রামদেবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আর রামদেব এবার নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালান। দুপুর ১২টার পর ফের সভা বসলে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা নিয়ে বিরোধীরা সরকারকে চাপ দেন। কংগ্রেস সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংসদীয় প্রস্তাব গ্রহণের দাবি জানান। একে একে অন্যরাও এই দাবি জানাতে থাকেন। কংগ্রেসের আরেক সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ, সিপিএমের কে করুণাকরণ, তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়, এমআইএমের আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব প্রত্যেকেই ভারত-ফিলিস্তিন ঐতিহাসিক সম্পর্কের উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। কিন্তু প্রবল এই দাবি সত্ত্বেও সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু জানিয়ে দেন, সদস্যদের মনোভাবের কথা সংশ্লিষ্ট মহলে জানাবেন।কিন্তু কখনোই কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের কারণ হতে পারে না।
No comments:
Post a Comment