পূর্ব ইউক্রেনে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমানকে ‘পেণাস্ত্র ছুড়ে ভূপাতিত করার’ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছেন বিশ্ব নেতারা। ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীরা এ ঘটনার তদন্ত ও উদ্ধারকাজে সব রকমের সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার পর রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর টানাপড়েন আরো বাড়তে পারে, পরিস্থিতি মোড় নিতে পারে আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ই
উক্রেনে রাশিয়াসমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই ভূমি থেকে পেণাস্ত্র ছুড়ে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করেছে বলে মনে করছে ওয়াশিংটন। ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী ওই পেণাস্ত্র ছুড়েছেÑ এমন কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র পায়নি। আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার পথে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ফাইট এমএইচ১৭ বিধ্বস্ত হয়। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, রাশিয়ার আকাশসীমায় ঢোকার আগে ইউক্রেনের আকাশে বিমানটির সাথে তাদের সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। এরপর রাশিয়া সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার দূরে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক শহরের নিকটবর্তী রাবোভো গ্রামের কাছের একটি মাঠে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও অনেকের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, বিমানটি কিভাবে ভূপাতিত হলো সে জবাব রাশিয়াকেই দিতে হবে। ওই ফাইটে নেদারল্যান্ডসের ১৫৪ জন, অস্ট্রেলিয়ার ২৭ জন, মালয়েশিয়ার ৪৫ জন ও ৯ জন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন বলে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স জানিয়েছে। বিমানটিতে কারা পেণাস্ত্র ছুড়েছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এ ঘটনাকে একটি ‘ট্র্যাজেডি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্ব নেতাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। ওবামা বলেছেন, বিধ্বস্ত বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ইউক্রেনেই রাখতে হবে, যাতে সেগুলো আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের কাজে লাগে। উদ্ধার ও তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তকারীরা যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের ওই এলাকায় যেতে পারেন, তা-ও নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনও এ ঘটনার একটি স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক তদন্তের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত ও উদ্ধারকারী দলকে সহায়তা দেবে রুশপন্থীরা : ইউক্রেন ও রাশিয়ার সীমান্তবর্তী রুশপন্থী অধ্যুষিত অঞ্চল সাখাতারস্কের গ্রাবোভো গ্রামে বিধ্বস্ত মালয়েশীয় যাত্রীবাহী বিমান এমএইচ১৭কে ঘিরে তদন্তকারী দলকে প্রবেশাধিকার দেয়া থেকে শুরু করে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে রুশপন্থীরা। এ ছাড়া বিধ্বস্ত বিমানের চতুর্দিক ঘিরে নিরাপত্তা দেবে তারা যেন নির্বিঘেœ লাশ উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারে। ইউরোপীয় প্রতিরামূলক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ এ তথ্য জানিয়েছে। ইউক্রেন ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলটিকে উড্ডয়নরুদ্ধ অঞ্চল (নো ফাই জোন) হিসেবে ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের আকাশসীমা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিকে এই ইস্যুতে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে দেশের আকাশসীমায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সব দায়ভার সে দেশেরই নেয়া উচিত’। রুশপন্থীদের নেতা আলেক্সান্দার বোরোদাই ইউক্রেনীয় সরকারকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। বিপরীতে ইউক্রেনের প্রতিরা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রুশপন্থীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর কোনো যুদ্ধবিমান বা বিমানবিধ্বংসী কামান ওই এলাকায় সে মুহূর্তে সক্রীয় ছিল না। রাশিয়াই রুশপন্থীদের এসএ-১১ মডেলের বিমানবিধ্বংসী কামান দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। জরুরি বৈঠক ডাকলেন ক্যামেরন : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গতকাল শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডাকেন। ক্যামেরনের ডাউনিং স্ট্রিট দফতরের মুখপাত্র সরকারের ক্রাইসিস কমিটির কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় কোবরা বৈঠক ডাকা হয়। মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্স জানায়, বিধ্বস্ত ওই বিমানে ব্রিটেনের ৯ জন নাগরিক ছিলেন।
No comments:
Post a Comment