Friday, August 8, 2014

এত লাশের দায় কার:যুগান্তর

টানা ৪ দিনের অনুসন্ধান, আধুনিক সরঞ্জামসহ নানা হাঁক-ডাকের পরও শনাক্ত হয়নি (বৃহস্পতিবার রাত ৯টা) পদ্মায় ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ পিনাক-৬। বহু প্রতীক্ষিত কাণ্ডারি ২-ও সফলতা দেখাতে পারেনি প্রথমদিনে। এ নিয়ে নিখোঁজদের স্বজনদের মধ্যে বেড়েছে দীর্ঘশ্বাস। বরং মাওয়া থেকে দূর-দূরান্তে মিলছে একের পর এক লাশ। বৃহস্পতিবারও ভোলা, শরীয়তপুর ও বরিশালে পদ্মা, মেঘনা ও মোহনায় মিলেছে ৯ মরদেহ। এ নিয়ে ৪ দিনে লাশ উদ্ধারে
র সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৩৪-এ। এসব স্থানে লাশ মেলায় এবার স্বজনরা ছুটছেন মেঘনার মোহনা থেকে সাগর তীর পর্যন্ত। পদ্মা তীর ছাপিয়ে এসব স্থানেও এখন শুধুই আহাজারি আর অপেক্ষা। নিজেদের উদ্যোগে এখানেও অনেকেই নামছেন নদীতে, সাগরে। কিন্তু প্রায় সবাই ফিরছেন হতাশ হয়ে। এই শোক ও হতাশা ক্ষোভে পরিণত হয়ে এবার প্রশ্ন উঠেছে সরকার ও উদ্ধার অভিযানের দক্ষতা, সামর্থ্য এবং আন্তরিকতা নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে এত লাশের দায় কার? বৃহস্পতিবার বিক্ষুব্ধ বহু স্বজন ও স্থানীয়রা বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও অসাধু কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবিতে অবরোধ করেন ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক। দাবি উঠে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগেরও। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে এমএল পিনাক-৬ সোমবার ডুবে যায় তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে। এ ঘটনায় নিখোঁজের তালিকা হয়েছে ১৩৭ জনের। কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার হওয়া থেকে নিখোঁজদের নাম বাদ দেয়ার পরও ওই তালিকায় এখনও রয়েছে ১২০ জন। স্বজনরা ধরেই নিয়েছেন তাদের কেউ বেঁচে নেই। কিন্তু লাশটা অন্তত তারা চান-ই চান। শিগগিরই উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত বা সমাপ্তি ঘোষণা হতে পারে- এমন খবরও ছড়িয়েছে উদ্বেগাকুল স্বজনদের মধ্যে। স্বজনরা তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন। যদিও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন, তারা লঞ্চটি না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখবেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের সাব-কন্ট্রোল রুমের হিসাব মতে বুধবার রাত ১টা পর্যন্ত উদ্ধার হয় ২৫ লাশ। বৃহস্পতিবার আরও ৯টি লাশ ভেসে উঠে ভাটিতে। এ নিয়ে মোট ৩৪ লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় ১১, শরীয়তপুরে ৯, চাঁদপুরে ৫, লৌহজংয়ে ৩, বরিশালে ৪, মাদারীপুরে ১ ও লক্ষ্মীপুর থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার ৩৪ মরদেহের মধ্যে পুরুষ ১০, নারী ১৫ ও শিশু ৯ জন। লাশগুলোর মধ্য পরিচয় শনাক্ত ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে- শিবচরের গুয়াতলার নুরুল হক হাওলাদারের মেয়ে নুসরাত জাহান হীরা (২০), উৎড়াইলের আলী মিয়ার স্ত্রী হাসি বেগম (৩৮), পাঁচ্চরের নুরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৪) ক্রোকচরের আবদুর রহিম মাতব্বরের মেয়ে ইভা আক্তার (১৪), রহিম মাতব্বরের ছেলে ইব্রাহিম (১ বছর ৭ মাস), বাকেরগঞ্জ বরিশালের জাহিদ হোসেন (১৪), জাকির হোসেন ওরফে জুলহাশ (৩০), মাদারীপুর সদরের ধুরাইলের হায়দার চৌকিদারের মেয়ে ইমা (১৮), আবু ইউসুফ (২২), ঝালকাঠির কাঠালিয়ার লুৎফর রহমান আকনের ছেলে ফাইজুল করিম ফাহাদ (২৪), জাজিরার লাকী (২৫), নগরকান্দা ফরিদপুরের আবদুল হাই খলিফার মেয়ে রীতা আক্তার (২৫), জামান (২৭), সদরপুর ফরিদপুরের ফাইজা (৭), কাপাসিয়া গাজীপুরের ইব্রাহিম মুন্সীর মেয়ে ইসরাত জাহান মীম (১৪) ও কমলনগর লক্ষ্মীপুরের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে সায়েদুল হক গাজী (৫৫)। ১২ লাশ রাখা হয়েছে শিবচরের পঁাঁচ্চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার বিকালে পাঁচ্চর উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় অজ্ঞাতনামা লাশ শুক্রবার বাদ জুমা শিবচর পৌরসভা কবরস্থানে ধর্মীয়মতে দাফন করা হবে। তবে এর আগে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কোনো স্বজন আসলে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। অজ্ঞাতনামা লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হবে। শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে এদিন পাখি ড্রেস ও হাফপ্যান্ট পরা আনুমানিক ১১ বছরে এক মেয়ে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পদ্মায় লঞ্চডুবিতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে সৌদি আরব থেকে এসেছেন এক যুবক। বাড়িতে না গিয়ে সরাসরি চলে আসেন মাওয়াঘাটে। সেখানে তার বুকফাটা আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধান জাহাজ কাণ্ডারি-২ ঘটনাস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার ভাটি পর্যন্ত ঘণ্টায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার বেগে সাববটম প্রোফাইল যন্ত্র দিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় জাহাজটি। কাণ্ডারি জাহাজের কমান্ডার মঞ্জুর জানান, পলি ও কাদা মাটির ৭০ ফুট ও বালু মাটির ১৮ ফুট পর্যন্ত গভীরে লঞ্চটি থাকলে সাববটম প্রোফাইলে ধরা পড়বে। কাণ্ডারি ছাড়াও আরও রয়েছে ১৫টি জাহাজ। প্রতীক্ষার প্রহর : নদী তীরে শোকাহত স্বজনরা অপেক্ষার অসহ্য যন্ত্রণার প্রহর গুনছেন। সময় যতই গড়াচ্ছে স্বজনের লাশ পাওয়ার আশাটুকুও হারিয়ে ফেলছেন তারা। তারা বুঝে গেছেন, প্রিয়জনদের আর জীবিত পাওয়ার কোনো আশা নেই। এখন শুধু লাশের অপেক্ষা। স্বজনরা বলছেন, অনেক লাশ নদীতে ভেসে সাগরে চলে গেছে। সেগুলো হাঙ্গর-কুমিরের পেটে গেছে। ফলে বহু লাশ আর কখনোই পাওয়া যাবে না। মাওয়াঘাটে ক্ষুব্ধ জনতা রাসেল বলেন, লঞ্চটি শুধু ভাটির দিকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তারা উজানের দিকে যাচ্ছে না। ওই সময় পানির ঘূর্ণন ও তীব্র বাতাসের কারণে যে স্রোত ছিল তাতে লঞ্চটি উজানের দিকেও চলে যেতে পারে। তাই সেদিকেও অনুসন্ধানের দাবি করেন তারা। মাদারীপুর সদর উপজেলার খালাশীগ্রামের মতিউর রহমান এসেছেন তার শ্যালিকা আফরোজার খোঁজে। তিনিও ছবি হাতে নিয়ে ৪ দিন ধরে ঘোরাঘুরি করছেন। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ ফুলে গেছে, গলা ভেঙে গেছে। কিন্তু তার প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকায় ঢাকা-খুলনা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। ২ ঘণ্টা অবরোধে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। লাশ উদ্ধার : ভোলা প্রতিনিধি অমিতাভ অপু জানান, ভোলায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত আরও ৫ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুটি জেলা সদরের মেঘনা নদীর কাচিয়া ও ইলিশা থেকে, একটি লালমোহনের মঙ্গল সিকদার ও অন্যটি মনপুরা থেকে। এ নিয়ে দু’দিনে ১১টি লাশ উদ্ধার হল ভোলায়। সকালে কাচিয়া দাসেরহাট এলাকায় জেলেদের জালে এক কিশোরীর লাশ উঠে আসে। বয়স ১৪/১৫ বছর। হাতে ঘড়ি। ইলিশা মডেল কলেজের পেছনে ভাসমান লাশটি দুপুরে উত্তোলন করা হয়। ভোলার মাছঘাট ও বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেরা মাছ ধরার পাশপাশি মরদেহও তল্লাশি করছে। লালমোহন প্রতিনিধি মোঃ জসিম জনি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেঘনা নদীর বাতিরখালসংলগ্ন ঘাটে এক পুরুষের লাশ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পুলিশকে খবর দেন তারা। লালমোহন থানার ওসি গাজী সাহিদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করেছি। মনপুরা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ পাটোয়ারী জুয়েল জানান, সকাল ১০টায় হাজিরহাট চরফৈজুদ্দিনের আনসার চেয়ারম্যান ঘাটসংলগ্ন মেঘনা থেকে এক মহিলার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। আনুমানিক বয়স ৩০। মাথার চুল পড়ে গেছে। দুই কানে স্বর্ণের দুল রয়েছে। বাম হাতে দু’টি চুড়ি ও একটি রাবার আছে। কালো বোরখায় জড়ির কারুকাজ। পরনে কালো-সাদা গোল গোল চেক সালোয়ার। শরীয়তপুর প্রতিনিধি রায়হান কবীর জানান, দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা চরশ্রীপুর পদ্মা নদী থেকে ১০/১১ বছরের মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর গোসাইরহাট উপজেলার আবুপুরে মেঘনা থেকে ১৮ বছরের এক কিশোর ও ২০ বছরের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ নিয়ে শরীয়তপুরে উদ্ধার লাশের সংখ্যা ৬। নড়িয়া থানার ওসি কবিরুল ইসলাম ও গোসাইরহাট থানার ওসি সৈয়দ মান্নান আলী জানান, লাশগুলো শিবচরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালের বিভিন্ন নদী থেকে এ পর্যন্ত ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জের তেঁতুলিয়া নদী থেকে ১ জন, মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ-মেঘনা নদীর মোহনা আবুপুর পয়েন্ট থেকে শিশুসহ ২ জন, হিজলার গৌরব্দী ইউনিয়নের বালুরচরে মেঘনা থেকে শিশুসহ ৩ জন এবং বাকেরগঞ্জের বালদপাড়া এলাকা থেকে ১ তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বুধবার বরিশালের ছোট কালাবদর এবং মেঘনা থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাকেরগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার বাদলপাড়াসংলগ্ন নদী থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার কোনো পরিচয় না পাওয়ায় মুন্সিগঞ্জ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। হিজলা উপজেলার গৌরব্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মিলন জানান, বালুরচরসংলগ্ন মেঘনা থেকে ১ শিশু, ১ মহিলা এবং ১ যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মুলাদী প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন জানান, বেলা ২টায় মুলাদীর ভেদুরিয়া এলাকায় জয়ন্তী নদী থেকে এক বৃদ্ধ ও এক ছেলে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। মুলাদী থানার ওসি মোঃ আলাউদ্দিন জানান, আনুমানিক ২ বছর বয়সের শিশুটির পরনে লাল প্যান্ট, ধূসর গেঞ্জি এবং ৩০ বছরের যুবকের পরনে নীল জিন্সের প্যান্ট ও লাল গেঞ্জি ছিল। লাশ দুটি ঘোষেরহাট থানার মাধ্যমে শিবচরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি আবুল কালাম জানান, মেহেন্দিগঞ্জের চাঁনপুরে ইলিশা নদীতে জিন্সের প্যান্ট পরিহিত লাশ ভাসতে দেখে জেলেরা থানায় খবর দেয়। পকেটে থাকা আইডি কার্ড দেখে জানা যায়, লাশটি বাকেরগঞ্জের কৃষ্ণকাঠি গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে জাকির হোসেনের (৪৫)। লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ ও রামগতি প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মাতাব্বর হাটে মেঘনা থেকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় অজ্ঞাত পরিচয় (২২) এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করা হয়। কমলনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানান, তার পরনে খয়েরি রঙের সালোয়ার-কামিজ রয়েছে। আরেকটি লাশ নদীতে ভেসে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু অধিক স্রোতের কারণে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সবার চোখ পদ্মা-মেঘনায় : দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক অনেক ভাটিতে সেই মেঘনার মোহনায় ভেসে উঠছে লাশ। স্বজনদের চোখ পদ্মার ঢেউয়ের দিকে। ঢেউয়ের তোড়ে কখন লাশ ভাসে সেই অপেক্ষা। ভোলার সাগরপাড়ে স্বজনরা : ভোলা প্রতিনিধি অমিতাভ অপু আরও জানান, পদ্মায় লঞ্চ ডুবির স্থল থেকে ২শ’ কিলোমিটার দূরে ভোলা ও আশপাশে মেঘনায় ও মোহনায় একের পর এক ভেসে উঠছে লাশ। প্রাকৃতিকভাবে ভোলার মেঘনা নদীর শাহবাজপুর চ্যানেল দিয়ে দেশের প্রধান ৩টি নদীর পানি সাগরে পড়ছে। এতে প্রিয়মুখগুলোর সন্ধান মিলতে পারে এ আশায় মোহনা ও সাগরপাড়ে ছুটে আসছেন স্বজনরা। আর না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কখনও কখনও কান্না পরিণত হচ্ছে ক্ষোভে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভোলায় ১১টি মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আরও ৩ লাশের সন্ধানে সহকারী পুলিশ সুপার রামানন্দ সরকার ট্রলার নিয়ে অভিযানে নেমেও শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেননি। এসব মরদেহ পিনাক ৬-এর যাত্রী ছিল বলে জানান জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা। ফরিদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী সাইদ জানান, তার দু’চাচাতো ভাইকে খুঁজতে এসেছেন। ভোলা সদরের রামদাসপুর চ্যানেলে, দৌলতখান ও তজুমদ্দিন এলাকায় জেলেদের কাছে ছুটছেন তিনি। একই কথা জানান আবদুর রাজ্জাক, মিরাজ উদ্দিন, আবদুস সহিদ, সাইফ উদ্দিনের মতো কয়েকশ’ স্বজনহারা। জেলেরাই এখন ভরসা। জেলায় যে কটি লাশ পাওয়া গেছে তার সব কটিই জেলেরা উদ্ধার করেছেন। চাঁদপুর প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী জানান, লাশের সন্ধানে চাঁদপুরের মেঘনার তীরে স্বজনরা ভীড় করছে। অনেকে স্বজনদের লাশের সন্ধানে চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ট্রলারের মাধ্যমে চষে বেড়াচ্ছে। চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, অভিযান চলছে চরভৈরবী থেকে শুরেশ্বর পর্যন্ত। গোপালগঞ্জের ৩ উপজেলার ১২ গ্র্রামে মাতম : গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর জানান, গোপালগঞ্জের ৩ উপজেলায় এখন চলছে শোকের মাতম। নারী-শিশুসহ নিখোঁজ রয়েছে ২০ যাত্রী। এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি তাদের। নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে পদ্মার পাড়ে দিন কাটছে ওইসব পরিবারের লোকজনের। অন্তত স্বজনের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান তারা। নিখোঁজদের মধ্যে ১০ জন মুকসুদপুরের। কাশিয়ানী উপজেলার নিখোঁজ রয়েছেন- রাজপাট গ্রামের মিরাজ (২২); খায়েরহাট গ্রামের মনিরুল মোল্লা (২৭), ছেলে রুমান (২), বড়বন গ্রামের টুটুল মোল্লা (২৪), তার স্ত্রী রোশনী (২০), ছেলে মোত্তাকিম, মেয়ে রুমি আক্তার; সজাইল গ্রামের রুমা বেগম (২৫); একই গ্রামের জাহিদ গাজী (৩৫) ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মিলন বিশ্বাস (৩০)। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মিলন বিশ্বাস (৩০) নিখোঁজ রয়েছেন। মুকসুদপুরে ৫ গ্রামে শোকের মাতম : টেকেরহাট প্রতিনিধি খোন্দকার রুহুল আমিন জানান, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুলাতন দীঘিরপাড়, বড়দিয়া, গোবিন্দপুর, কৃষ্ণাদিয়া ও আলীপুর গ্রামে চলছে শোকের মাতম। নিজে বেঁচে গেলেও স্ত্রী পলি বেগম ও শিশু কন্যা মেঘলাকে বাঁচাতে পারেননি সুলতানদিঘীরপাড় গ্রামের মিরাজ খোন্দকার। শোকে এখন নির্বাক তিনি। স্ত্রী মাকসুদা বেগম, ছেলে হানিফ ও মেয়ে মেরী আক্তার নিখোঁজ। এদের হারিয়ে বড়দিয়া গ্রামের ইবদুল ইবাদুল মুষড়ে পড়েছেন। কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের মিণ্টু মোল্লা নিখোঁজ। একমাত্র ও উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পিতা সালাম মোল্লা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। তোবা গার্মেন্টের বেতন নেয়া হল না রিতার : ফরিদপুর ব্যুরোর জাহিদ রিপন জানান, আন্দোলনরত তোবা গার্মেন্টের বেতন-ভাতা তুলতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে মাওয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যান রিতা আক্তার (২৫)। বুধবার চাঁদপুরের পদ্মা মোহনা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে ফরিদপুরের নগরকান্দার পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। একই দিনে মানিকনগর গ্রামের মনিরউদ্দিন মল্লিকের পুত্র জামাল মল্লিকের লাশ উদ্ধার করে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।  

No comments:

Post a Comment