নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এ মুহূর্তে কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়েই রাজপথে নামছে তারা। আন্দোলনের প্রথম ধাপে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, গণঅনশন, গণমিছিলের মতো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির দিকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে জোটটির। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির পাশাপাশি চলবে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনও
। এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে রোববার স্থায়ী কমিটি ও পরের দিন শরিকদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকেই প্রথম ধাপের কর্মসূচির রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপি ও জোটের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই তারা আন্দোলন করছে। তাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনও হবে গণতান্ত্রিক। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ধরন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ, গণমিছিল, মানববন্ধন এসবই তো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পর্যায়ে পড়ে। আন্দোলনের প্রথম ধাপে এসব কর্মসূচি নিয়েই ভাবা হচ্ছে। সরকার যদি তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সেটা জনগণ দেখবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া যুগান্তরকে বলেন, তাদের লক্ষ্য থাকবে জনগণকে সম্পৃক্ত করা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই গণদাবি আদায় করতে চাই। সে লক্ষ্যেই আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সভা-সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধনকেই বোঝানো হয়। তারা সেদিকেই জোর দিচ্ছেন। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি বিএনপি দেবে না। কারণ, তারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে। তবে সরকার যদি তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয়, তবে জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েই পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনা হবে। বিএনপির প্রধান লক্ষ্য, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবির প্রতি জনগণকে সম্পৃক্ত করা। ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় জনসভা করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট গড়ে তোলার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি চলবে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজও। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে টানা কয়েক মাস আন্দোলন করে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়ে। মামলা-হামলা ও গ্রেফতারে সাংগঠনিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। নির্বাচনের পর তারা সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করে। বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। ঈদের আগে পুনর্গঠন করা হয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। যুবদল, ছাত্রদলসহ আরও কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের কমিটিও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সূত্র জানায়, এবারের আন্দোলনে নতুন কৌশলে রাজপথে নামার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। রাজধানী কেন্দ্রিক বেশি কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। সরকার বাধা না দিলে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই প্রথম ধাপের আন্দোলন শেষ করতে চায় তারা। সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার কোনো প্রস্তাব না পেলে কিছুটা কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করবে তারা। আগামী ঈদুল আজহার পর কিছুটা আঁটঘাট বেধে রাজপথে নামার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। তবে আন্দোলনের কৌশল কি হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী যুগান্তরকে বলেন, তাদের কর্মসূচি যে নিয়মতান্ত্রিক হবে তা তো জোটনেত্রী বারবারই বলে আসছেন। সভা-সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধনের মতো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়েই তারা রাজপথে নামতে চান। কিন্ত সরকারের আচরণে তো মনে হচ্ছে তারা নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিও পালন করতে দেবে না। আওয়ামী লীগ একটি সংগ্রামী দল। তারা ক্ষমতায় এসে যে আচরণ করছে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে তারা বিশ্বাস করে না। অতীতে তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করে সরকারই ভায়োলেন্স তৈরি করেছে। এতে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর, কোনো বিনিয়োগ নেই। গণদাবি মেনে না নিয়ে সরকার যদি আবারও ধ্বংসাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে তবে দেশের কি অবস্থা হবে তা ক্ষমতাসীনদের অনুধাবন করতে হবে। জোটের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, দেশের জনগণ ২০ দলীয় জোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েই সরকারবিরোধী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, তারা সবসময়ই গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, ভবিষ্যতেও তাই করা হবে। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা। আর জনগণ কোনো দাবি নিয়ে রাজপথে নামলে কোনো সরকারের পক্ষে তা অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। কিন্তু সরকার যদি গণদাবিকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় থাকতে চায় তবে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে। জোটের আরেক শরিক এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম যুগান্তরকে বলেন, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি যেমন গণঅনশন, গণমিছিল, সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে রাজপথে নামবে বিরোধীদলীয় জোট। সরকার এতে বাধা দিলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। কর্মসূচি প্রণয়ন ও সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, কর্মসূচি প্রণয়নে জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি করা উচিত। আর আন্দোলন সফল করতে শরিক দলগুলোর মহাসচিবদের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি করার প্রস্তাব করেন তিনি। নামসর্বস্ব দল নিয়ে জোটের পরিধি না বাড়িয়ে আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার দিকে জোর দেয়া উচিত।
No comments:
Post a Comment