Friday, August 8, 2014

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার গেজেট প্রকাশ:নয়াদিগন্ত

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সম্প্রচার) মো: আবুল হোসেন জানান, গতকাল বিকেলে সম্প্রচার নীতিমালার গেজেট জারি করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী গেজেট জারির দিন থেকেই এই নীতিমালাটি কার্যকর হবে। নীতিমালা অনুযায়ী স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃত্ব থাকবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের। তথ্য মন্ত্রণালয় থে
কে কর্তৃত্ব স্বাধীন কমিশন গঠনের কাছে দ্রুত হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এই নীতিমালার আলোকে আইন প্রণয়ন করে শিগগিরই সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে।  সশস্ত্র বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইমেজ ুণœ হয় অথবা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ায়, এমন বিষয় প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য গত সোমবার সম্প্রচার নীতিমালা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ হবে না বলে সরকার বলে এলেও বিএনপি বলছে, এই নীতিমালার মাধ্যমে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে। নীতিমালার বিভিন্ন ধারা নিয়ে বেসরকারি টিভির প্রতিনিধিদের মধ্যে অস্বস্তি ছিল। এর মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটা বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না, অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ইমেজ বিনষ্ট করার মতো দৃশ্য বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে না, জনস্বার্থ বিঘিœত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রচার করা যাবে না। এসব ধারাসহ নীতিমালার খসড়াটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়, কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠী, দেশের মর্যাদা বা ইতিহাসের জন্য তিকর এমন কোনো কিছু, বিদেশী রাষ্ট্রের অনুকূলে যায় এমন কিছু প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না। টক শোতে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন না করার কথাও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। সেই সাথে ব্যক্তিগত বিষয়ে তিকর কোনো কিছু প্রচার বা প্রকাশ না করার কথা বলা হয়। নীতিমালায় বেতার বা টিভির লাইসেন্স কিভাবে দেয়া হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। মূল্যবোধ, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুভূতি, রাষ্ট্র প্রশাসনের মূলনীতি ও তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্যই নীতিমালা করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁঞা জানান। বাংলাদেশে প্রণীত প্রথম এই পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করবে বলে তাৎণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি দাবি করলেও তা নাকচ করা হয়েছে সরকারের প থেকে। এ নীতিমালার আলোকে স্বাধীন কমিশন গঠিত হলে তারা লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স ফি নির্ধারণ, সম্প্রচার কার্য়ক্রম তদারকি করবে। এই কমিশনে সাংবাদিকরাও থাকবেন। সম্প্রচার কমিশন ও আইন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার-সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত নেবে, কারণ নীতিমালা বাস্তবায়ন সরকার করে থাকে, এটি হবে সাময়িক। নতুন নীতিমালায় সাতটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পটভূমি, ল্য, উদ্দেশ্য ও নীতিমালা বাস্তবায়নের কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে সম্প্রচার লাইসেন্সের বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে লাইসেন্স প্রদান ও পদ্ধতি এবং এ েেত্র সম্প্রচার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। লাইসেন্স প্রদানের েেত্র কমিশনের একটি বড় ভূমিকা থাকবে। সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের বিষয়ে বলা হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। বিশেষ করে অনুসরণীয় মানদণ্ড কী হবে, তা এখানে আছে। এখানে বলা হয়েছে সংবাদ ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্প্রচার মাধ্যমকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ লালন, উন্নয়নমূলক বিষয় জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। কী কী বিষয় অনুসরণ করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়ে। বিজ্ঞাপন প্রচারের েেত্র পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। বিজ্ঞাপনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ সহায়ক হতে হবে। একই সাথে শিশু ও নারী অধিকার সুরা করতে হবে। পঞ্চম অধ্যায়ে সম্প্রচারের েেত্র আরো কিছু বিবেচ্য বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। কোন কোন বিষয় সম্প্রচার করা যাবে না, করা সমীচীন হবে না, তার উল্লেখ রয়েছে এখানে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে সম্প্রচার কমিশন সম্পর্কে বলা হয়েছে। কমিশন গঠন, আইনি কাঠামো, দায়িত্ব, কাজের পদ্ধতি, কী কী অভিযোগ কমিশন গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করবে এ বিষয়গুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়টি বিবিধ বিষয়ে। সম্প্রচার কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত কিভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হবে, সে বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। এই নীতিমালা বেসরকারির পাশাপাশি সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমের জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। এর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত, সম্প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত এবং স্বাধীন দায়িত্বশীল গণমাধ্যম বিকশিত করতেই এ নীতিমালা করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment