Wednesday, August 13, 2014

শর্ত শিথিল, তবু সংশয়ে বেসরকারি হজযাত্রীরা:কালের কন্ঠ

সৌদি আরব সরকার নতুন নিয়ম কিছুটা শিথিল করলেও অনিশ্চয়তা পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশি হজযাত্রীদের। ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম বাধ্যতামূলক রেখেই বাড়িভাড়া পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিয়েছে সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়। এখন আগের নিয়মেই বাড়িভাড়া পরিশোধ করা যাবে। তবে শর্ত শিথিলে দেরি হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। নতুন নিয়মের জটিলতায় এত দিন তারা বাড়িভাড়া শুরুই করতে পারেনি। হজ ফ্লাইট শুরু ২৭ আগস্ট। এখন শেষ সময়ে
৯৭ হাজার বেসরকারি হজযাত্রীর বাড়িভাড়ার কাজ কতটা করা যাবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, হজ প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে এসে ব্যাংক হিসাব খোলার বাধ্যবাধকতার কারণে এ বছর বাংলাদেশের অন্তত ১৫ হাজার হজযাত্রীর হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। এখন শর্ত শিথিল হলেও এত অল্প সময়ে এত বেশি হজযাত্রীর জন্য তড়িঘড়ি করে বাড়িভাড়া করার ঝামেলা রয়েই গেল। কারণ, একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ৮০০ এজেন্সি বাড়িভাড়া করবে। এ সুযোগে বাড়ির মালিকরা হয়তো ভাড়াও বাড়াতে চাইবেন। এবার বাংলাদেশ থেকে ৯৮ হাজার ৭৬২ জনের হজে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ জন যাবেন সরকারিভাবে। অন্যদের বেসরকারি এজেন্সিগুলোর ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার কথা। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হজ ব্যবস্থাপনায় এ বছর থেকে সৌদি সরকার বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাড়িভাড়াসহ পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা এবং বাড়িভাড়া, ক্যাটারিং সার্ভিস ও মোয়াল্লেমের পাওনা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা। এর আগে ‘টিসি’ ও কার্ডের মাধ্যমে অর্থ হস্তান্তর করা হতো। সৌদি আরবে ব্যাংকে হিসাব খোলার বাধ্যবাধকতা ছিল না।  ওই সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলোকে গত ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সৌদি আরবের ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় বেঁধে দিয়েছিল সৌদি সরকার। তবে রমজানের কারণে অনেকে সে সময়ের মধ্যে সৌদি আরবে গিয়ে ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারেনি। ঈদের পর বেসরকারি এজেন্সির মালিকরা সৌদি যান। তবে নানা জটিলতায় হিসাব খুলতে পারেননি। হজযাত্রীরা যাতে গতবারের আইন মেনে এবারের মতো হজ ব্যবস্থাপনার টাকা পরিশোধের অনুমতি পান সে জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য কয়েক দিন আগে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সৌদি আরব যান। গত সোমবার সৌদি আরবের হজ-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) মো. জাহাঙ্গির আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরাও চেয়েছিলাম সৌদি সরকার এ বছর আমাদের আগের নিয়মে হজ করার অনুমতি দিক। এ জন্য ধর্মমন্ত্রী এখন সৌদি রয়েছেন। যদি এ বছর ব্যাংক হিসাব খুলতেই হয়, তবে এজেন্সিগুলো অনেক সমস্যায় পড়বে।’ তবে গতকাল মঙ্গলবার ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ধর্মমন্ত্রী সোমবার সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মোয়াছছাসার (হজ তদারকি সংস্থা) চেয়ারম্যান রাফাত ইসমাইল বদরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি এবারের মতো বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া আগের নিয়মে পরিশোধের সুযোগ দিতে বলেন। পরে সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যাংক হিসাব খোলার বাধ্যবাধকতা রেখেই বাড়িভাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়। সৌদি বাড়িওয়ালাদের বাংলাদেশিদের বাড়ি ভাড়ার টাকা ব্যাংক হিসাব ছাড়া নেওয়ার অনুমতি দেয়। হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- হাবের সভাপতি ইব্রাহীম বাহার বলেছেন, সৌদি সরকার সে দেশের সাম্বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশি হজ এজেন্সিগুলোর ব্যাংক হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এজেন্সিগুলো ওই ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলা শুরু করবে। মক্কা হজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী এম এ রশিদ শাহ সম্রাট কালের কণ্ঠকে জানান, সৌদি আরবে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। অনলাইনে ব্যাংক হিসাবের জন্য প্রথমে একটি কোড নম্বর পেতে হবে। এর পর সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেই নম্বর উল্লেখ করে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধন শেষ হলে কাগজপত্র প্রিন্ট করে এরপর ব্যাংকে যেতে হয়। অধিকাংশ এজেন্সি এখন পর্যন্ত কোড নম্বরই পায়নি। একটি এজেন্সিও হিসাব খুলতে পারেনি। মক্কা গিয়েও বাড়িভাড়া না করেই ফিরে আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে কী করব তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি।’ হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জটিলতার কারণে আমরা অনেক আগেই শর্ত শিথিল করার জন্য দাবি করেছিলাম। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ মুহূর্তে উদ্যোগ নেওয়ায় এবং শর্ত শিথিল হওয়ায় জটিলতা কমল না।’ সূত্র জানায়, দেরিতে ব্যাংক হিসাব খোলায় এবং বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রথম দিকের হজ ফ্লাইটের অনেক যাত্রীর সৌদি আরব যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কারণ এজেন্সিগুলো তাদের যথাসময়ে ক্লিয়ারেন্স দিতে পারবে না। এ জন্য প্রথম দিকের কমপক্ষে ১৫ হাজার হজযাত্রী হজ ফ্লাইটের শিডিউল পেয়েও সঠিক সময়ে বিমানে উঠতে পারবেন না। পরের বিমানেও যেতে পারবেন না। কারণ প্রতি ফ্লাইটের জন্য সৌদি সরকার জেদ্দা বিমানবন্দরে আগে থেকেই স্লট (বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের সময়) ঠিক করে দেয়। এবারের সূচিও ঠিক হয়ে গেছে। সৌদি সরকার নতুন করে কোনো স্লট দেবে না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা সব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠানোর চেষ্টা করবেন। হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, প্রথম দিকের হজযাত্রীরা আটকা পড়লে তাঁদের সৌদি পাঠাতে হলে সরকারকে থার্ড ক্যারিয়ারের অনুমতি দিতে হবে। যাতে হজযাত্রীরা অন্য বিমানে সৌদি আরব যেতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার এ বছর সব হজযাত্রীকে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসে সৌদি আরব যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

No comments:

Post a Comment