বিনিয়োগ স্থবিরতায় কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা। ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ করছে তা বিক্রি করতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। সবমিলে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে মজুদকৃত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় নির্বা
হ করা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: আবদুল হক জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বড় আমদানির পরিমাণ কমে গেছে। এ ছাড়া রফতানি সহায়তা তহবিল (ইডিএফ) বাড়ানোর ফলে বেড়েছে রফতানি আয়। সবমিলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে দেশে বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় আমদানি প্রবাহ কমে গেছে। প্রতি মাসেই আগের বছরের তুলনায় আমদানি কম হচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ায় বিদেশ থেকে আহরিত রেমিট্যান্স নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক ব্যাংক। বাজারে চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকে বিনিয়োগ চাহিদা নেই বললেই চলে। নতুন নতুন উদ্যোক্তাও আর আসছেন না। যারা আসছেন ব্যবসায়িক মার খাওয়ার আশঙ্কায় তাদেরও ঋণ দেয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ ভালো উদ্যোক্তার অভাব রয়েছে। এর ফলে সামগ্রিক আমদানি কমে গেছে। আর এতে সমস্যায় পড়েছে ব্যাংকগুলো। অনেকেই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় উচ্চ দরের ডলার এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে ডলারের চাহিদা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আর আগের মতো ডলারের বিপরীতে টাকা দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিল নামক বন্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে নগদ টাকার ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এক মাসের জন্য আটকে যাচ্ছে। এতে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে চলছে। জানা গেছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করে তার সবটুকু ধরে রাখতে পারে না। ব্যাংকগুলো দিন শেষে কী পরিমাণ ডলার ধরে রাখতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কোটার অতিরিক্ত ডলার থাকলে তা বাধ্যতামূলকভাবে বাজারে বিক্রি করতে হয়। বাজারে বিক্রি করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী আগে ব্যাংকের মোট সম্পদের ৯ শতাংশের বেশি ডলার ধারণ করতে পারত না। কিন্তু বিনিয়োগ স্থবিরতায় এক সময় বাজারে ডলারের চাহিদা না থাকায় প্রতিটি ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত ডলার থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনলে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়, এ কারণে ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ডলার ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এর ফলে ওই সময় ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ ডলার ধারণ করার সুযোগ পায়।
No comments:
Post a Comment