Tuesday, August 26, 2014

বিএনপি জোটের ১৬০ জনের বিচার শুরু:কালের কন্ঠ

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, বিরোধীদলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক জাগপার শফিউল আলম প্রধানসহ ১৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় আমান, রিজভী, ফারুক, প্রধানসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় এবং আমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধিতে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা পৃথক
আরেকটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ১৬০ নেতা-কর্মীর বিচার শুরু হলো। এর মধ্যে আদালতে হাজির না থাকায় ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পল্টন থানার মামলায় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এবং বিমানবন্দর থানার মামলায় ২০ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার ৬ নম্বর দ্রুত বিচার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তারেক মঈনুল ইসলাম পল্টন থানার মামলায় এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক বিমানবন্দর থানার মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় মামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতা-কর্মীরা শুধুই আমান, রিজভী নন, দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা এখন আদালতে। কোনো কোনো মামলা এখনো তদন্তাধীন। এর মধ্যে ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩৭ মামলায়, মওদুদ আহমদ ছয়টি মামলায়, মির্জা আব্বাস প্রায় ৪০টি মামলায়, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ১০টি মামলায়, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির প্রায় সব নেতাই একাধিক মামলার আসামি। খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতির মামলায় এখনো কারাবন্দি। গত ১৪ আগস্ট খন্দকার মোশাররফের বিরুদ্ধে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। রবিবার খোকার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করেছে দুদক। এ ছাড়া পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৭৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুলিশকে মারধর, রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দণ্ডবিধি আইনে একটি এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অন্য অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্র দুটিতে ঘটনাস্থল, আসামির সংখ্যা এক ও অভিন্ন। এ মামলায় মির্জা ফখরুলের নাম এজাহারে না থাকলেও তদন্তে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে মর্মে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার কারাভোগ করেছেন। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় গত বছর ৩০ নভেম্বর পেট্রলবোমা বিস্ফোরণে পথচারী হাবিবুর রহমান নিহতের ঘটনায় গত বছর ১ ডিসেম্বর রমনা থানায় করা মামলায় হাইকোর্ট থেকে গত ৭ এপ্রিল জামিন পান ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পল্টন থানায় দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ ৪১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়েছে রবিবার। অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় মওদুদ ছাড়াও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ ৪১ জন আসামি রয়েছেন। গত বছর ৬ মার্চ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি চলাকালে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা ও মারধর করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় গত বছরের ২৭ মার্চ দ্রুত বিচার আইনে ব্যারিস্টার মওদুদসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন রাজধানীর পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে পল্টন থানার এ মামলায় আসামি করা হয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান, রিজভী, সালাহ উদ্দিন আহমদ ও মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফোরকান ই আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ, জামাল শরিফ হিরু, তাজুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন রাসেল, মনজুর হোসেন, এহসানুল হক, আজিজুল ইসলাম মুনির, আলাউদ্দিন মানিক, ইকবাল মোর্শেদ খান, কামাল আহমেদ, মনির হোসেন, তাইমুল ইসলাম, ইকবাল, মজিবর রহমান, মিঠু তালুকদার, মামুন, ওমর ফারুক, জুলফিকার আলী ভুট্টু, মামুন, দেলোয়ার হোসেন, রবিউল আউয়াল, জসিম উদ্দিন, কামরুজ্জামান ওরফে রিপন, লিটন, আব্দুল মান্নান, শহিদুজ্জামান, আমির হোসেন জুয়েল, রেজাউল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মো. জুয়েল, আল আমিন, ওমর ফারুক, মিজানুর রহমান, শাহীন মো. শাহান শাহ, জাকির হোসেন, আজগর আলী, শাহজাহান, মুকুল সরকার, মো. মাসুদ, খোরশেদ আলম, শাহজাহান পাঠান, শিহাব উদ্দিন, রবিউল, কামাল উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, সবুজ, নিজাম উদ্দিন হাওলাদার, আলতাফ হোসেন, মইনুল ইসলাম, আরেফিন আহমেদ খান সাজু, মনিরুজ্জামান, নাসির আহমেদ খোকা, সোহেল, হাফেজ সাইফুল্লাহ, আবু সালেহ, মামুনুর রশিদ, ওয়াহিদুজ্জামান, আল আমিন, আবুল হোসেন, মাসুদ রানা রিয়াজ, আবুল কালাম, মিজান, বাচ্চুু, সিরাজুল ইসলাম মানিক, শাহীন, শামসুদ্দিন, কামরুল, এশাকুল ইসলাম লিটু, রুবেল মাহমুদ, মো. মিয়া হোসেন, মেহেদি হাসান লিটু, শাহাবুদ্দিন, লিটন, সালাউদ্দিন, সেন্টু শেখ, আব্দুল কাদের, আশিক, শাহমান শাহাদাৎ, জহিরুল ইসলাম, আনোয়ার, তোজাম্মেল হক সোহাগ, কাজী রওনাকুল ইসলাম, শাহজাহান, আব্দুল হালিম খান, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কাদির জিলানি ভূঁইয়া, রুহুল আমিন, খোকন এরশাদ, জিয়াউল হক জিয়া, ইকবাল হোসেন গনি, বশিরুল আলম টিটু, আল আমিন, এ্যানি, সুমন আহমেদ রাজ, জুয়েল, আসাদ্জ্জুামান শিমুল, এম এ বারি, আবদুল্লাহ, মনির হোসেন, রাসেল, নাসির তালুকদার, বাবুল শিকদার, হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, কায়সার, মোশাররফ হোসাইন, ওয়াসিম আলম, জাহিদুল আলম মিলন, মাসুদ রানা, সোহেল, সাইফুল্লাহ, আবুল কালাম, মালেক, এম এ কাশেম মজুমদার, এম এ জহিরুল ইসলাম, রতন মিয়া, মোহাম্মদ আলী, কে এম সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট জেড মোর্তজা চৌধুরী, এম আর আলী ফাহিম, নজরুল ইসলাম, ফেরদৌস ও ইমরুল কায়েস, প্রফেসর আবু তাহের, সম্রাট, আলমাস, বিলাল হোসেন, রেজাউল করিম, ইলিয়াস, আলমগীর, তুষার, ফরহাদ, দাউদ চৌধুরী, আশরাফুল ইসলাম শুকুর, তানভীর হায়দার, শাহীন ও আবদুলাহ আল হাসানকে। তাঁদের সবাই জামিনে ছিলেন। গতকাল আমান, রিজভীসহ ১০০ নেতা-কর্মী আদালতে হাজির ছিলেন। অন্য ৪৭ জন আদালতে হাজির না থাকায় তাঁদের পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়। তবে সে আবেদন খারিজ করে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ পড়ে শোনান। তবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে অব্যাহিত চান। বিএনপির নেতা-কর্মীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মোহসীন মিয়া, মোসলেহ উদ্দিন জসীম প্রমুখ। গত বছরের ১১ মার্চ নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশ এ ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনে এবং দ্রুত বিচার আইনে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা করে। উভয় মামলায় অভিন্ন আসামি করা হয়। এর মধ্যে একই বছরের ২৪ মার্চ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ১৪৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের ৪/৫ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মারা যাওয়ায় ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো গতকাল। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তার ওপর, টপ কালেকশনের গলি ও নয়াপল্টন মসজিদ গলির সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও যানবাহন ভাঙচুর করে। পর পর ১৮-২০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ও রাস্তার ওপর সাতটি স্থানে টায়ার, চট, কাগজ দিয়ে আগুন ধরিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। পুলিশ এতে বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ এবং কর্তব্যরত পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকেও তারা পুলিশের ওপর আরো দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালিয়ে তৃতীয় তলায় দাপ্তরিক রুমের বাথরুম থেকে দুটি, কনফারেন্স রুমের বাথরুম থেকে দুটি, চতুর্থ তলায় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অফিসের পূর্বকোণের বারান্দায় নির্মাণসামগ্রীর আড়ালে রাখা চারটিসহ মোট ১০টি তাজা হাতবোমা উদ্ধার করে। বিমানবন্দর থানার মামলা ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থানা এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় আমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট আমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। গতকাল তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাঁরা হলেন আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজুর রহমান, রাসেল, মোকসেদ আলম, লোকমান হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, নাসিরউদ্দিন, চান মিয়া, আমিনুল হক, আব্দুল জাব্বার, বাবুল ওরফে রিকশা বাবুল, রানা, জুলহাস ও ফজলু মিয়া।

No comments:

Post a Comment