কালা বাবু একা নন। চাচা ফয়সল আহমেদ ওরফে রনি, নিজের আপন ভাই শাহাদত এবং রাজুকে নিয়ে ২৮ আগস্ট রাতে রানু আক্তার, বিল্লাল ও মুন্নাকে হত্যা করেছিলেন মগবাজার এলাকার এই সন্ত্রাসী। মামলার এজাহারে এ কথা বলা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এদের কেউ-ই এখনো ধরা পড়েননি। কালা বাবু, ফয়সল, শাহাদত ও রাজু নিহত রানুর ভাই মো. শামীম ওরফে কালা চানের করা মামলার যথাক্রমে ১ থেকে ৪ নম্বর আসামি। আগে মগবাজা
রের মাহবুব ও এক আনসার সদস্য হত্যা মামলার আসামি হলেও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াতেন কালা বাবু। এই মামলার দুই আসামি ফারুক শামীম হোসেন ও সোহেল খান নামে দুজনকে গত শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা মামলার ১৫ আসামির মধ্যে ৯ ও ১০ নম্বরে রয়েছেন। ফারুক ও সোহেলকে শুক্রবার রাতে নির্দিষ্ট কোন সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কিছু জানাননি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার (ডিসি) কৃষ্ণপদ রায়। গতকাল শনিবার ডিএমপির তথ্যকেন্দ্রে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মগবাজারের নয়াটোলা থেকে ফারুককে এবং সোহেল খানকে সোনালীবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিসি কৃষ্ণপদ রায় আরও জানান, মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটে আনসার সদস্য হত্যা এবং স্থানীয় আরেক সন্ত্রাসী মাহবুব হত্যা মামলার আসামি কালা বাবু। মগবাজারের তিন হত্যা মামলায় সিরাজ, ঠান্ডু, দিলীপ, অপু, মারুফ, আরিফ, বিল্লাল, পিচ্চি রনি এবং জনি নামের আরও নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের জায়গা দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে। প্রায় আট বছর আগে রেলওয়ের সোয়া এক কাঠা জায়গা অবৈধভাবে দখল করেন ফয়সল। আট মাস আগে রানু আক্তারের কাছে ৭৯ নম্বর সোনালীবাগের জায়গাটি বিক্রি করেন তিনি। চার লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেও ওই জায়গার ওপর নজর রয়েই যায় ফয়সলের। এ বছরের শুরুতে রানু আক্তার ওই জায়গার ওপর চারটি ঘর সংস্কারে হাত দিলে ফয়সলের ভাতিজা শাহ আলম ওরফে কালা বাবু পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দাবির ঘটনায় ১২ মার্চ রমনা থানায় কালা বাবু ও তাঁর ভাই শাহাদত ও রাজুকে আসামি করে মামলা করেন রানু। তবু চাঁদার জন্য হুমকি দিতেন কালা বাবু। চাঁদা না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মগবাজারের সোনালীবাগে চান বেকারির গলির ওই বাড়িতে কালা বাবুর নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এ সময় গুলিতে রানুর বাসার ভাড়াটে বিল্লাল হোসেন, মুন্না ও রানুর ভাই হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন। পরে সন্ত্রাসীরা ধাওয়া করে গলিতে নিয়ে রানু আক্তারকে গুলি করে। গতকাল ৭৯ নম্বর সোনালীবাগের ওই বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, চারটি ঘরের মধ্যে তিনটিই তালা দেওয়া। একটি ঘরে মাহমুদ নামে এক গৃহিণী বসবাস করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন,‘দুই মাস আগে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। আমার স্বামী চাকরি করেন। তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে এখানে থাকছি। এই ঘটনার পর আতঙ্কে আছি। বাসায় থাকব নাকি গ্রামের বাড়ি চলে যাব, বুঝতে পারছি না।’ মামলার বাদী কালা চান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্চে আমার বোন রানু কালা বাবুর বিরুদ্ধে মামলা করছিল। তখন কিছু করলে আজ এ ঘটনা ঘটত না।’ রেলের জায়গা কেন কিনলেন—এ প্রশ্নের জবাবে কালা চান বলেন, ‘আমরা থাকনের লইগা কিনছিলাম।’
No comments:
Post a Comment