Saturday, August 23, 2014

ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ ৩ পার্বত্য জেলায় জরুরি অবস্থা:নয়াদিগন্ত

তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দিন দিন মহামারীর দিকে যাচ্ছে এ পরিস্থিতি। গত সাত মাসের মধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ৪৬৪ জন। একই সময়ে চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০ জন। এর মধ্যে বান্দরবান জেলায় ১২ জন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ৯ জন এবং চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১৩ জনসহ ৩৪ জন মারা গেছেন। এ অবস্থায় গত ১৮ আগস্
ট তিন পার্বত্য জেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: সরফরাজ উদ্দিন খান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ম্যালেরিয়া ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে পার্বত্য এলাকার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জ্বর হওয়ার সাথে সাথে রক্ত পরীা ও দ্রুত কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন তিনি।  এ দিকে ১৮ আগস্ট বান্দরবান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সভাকে এক জরুরি সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতর পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে জরুরি অবস্থা জারি করে। সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা: বেনজীর আহমদ। জরুরি সভায় স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা তথ্য প্রকাশ করেন, গত সাত মাসে বান্দরবান জেলায় ১২ জন এবং রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ৯ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রকৃতপে গত জুলাই মাসে কেবল বান্দরবানের থানছি, লামা ও আলীকদম উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতেই ম্যালেরিয়ায় মারা গেছেন ২০ জন। গত সাত মাসের মধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সী ২৩ হাজার ৪৬৪ জন নারী-পুরুষ।  চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের ম্যালেরিয়া রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: মুহাম্মদ নুরুল হায়দার নয়া দিগন্তকে জানান, চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুন মাসে ৭২ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে দু’জন মারা যান। জুলাই মাসে ১৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে ১১ জন মারা যান। তিনি জানান, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৪৮ জন। এর মধ্যে দু’জন মারা যান। একই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৫ জন।  ২০১২ সালে চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী ছিল ৮৯৪ জন।  তিন পার্বত্য এলাকায় জরুরি অবস্থা : তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা: বেনজীর আহমদ। তিনি গত ১৮ আগস্ট এ বিষয়ে জরুরি সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, পার্বত্য জেলাগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতরণের জন্য সাড়ে সাত লাখ কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হবে। সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যালেরিয়ার ওষুধপত্রও সরবরাহ করা হবে। ম্যালেরিয়া রোধে এবং এ রোগে আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য তিন জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।  যে কারণে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ও মৃত্যু : ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: সরফরাজ উদ্দিন খান চৌধুরী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: মুহাম্মদ নুরুল হায়দার, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ম্যালেরিয়া রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: আবু সাঈদ ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের অফিসার মুহাম্মদ শহিদুজ্জমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘পাশের দেশ মিয়ানমার ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ম্যালেরিয়া ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে পার্বত্য এলাকার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এ ছাড়া এবার বর্ষায় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মশার বংশবৃদ্ধির সহায়ক হচ্ছে। এ ছাড়া কীটনাশকযুক্ত মশারিগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। কীটনাশকযুক্ত মশারির কার্যকারিতা হ্রাস ও সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা নিতে বিলম্বের কারণে ম্যালেরিয়ার বিস্তার ও মৃত্যু হচ্ছে।  চিকিৎসকের পরামর্শ : ম্যালেরিয়া যখন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে তখন রোগীর ফুসফুসে জটিলতা, কিডনি সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এ ছাড়া অজ্ঞান হওয়াসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এসব লণ দেখা দিলে এবং জ্বর হওয়ার সাথে সাথে রক্ত পরীা ও দ্রুত কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

No comments:

Post a Comment