Tuesday, August 12, 2014

পিনাক-৬ উদ্ধারকাজ আনুষ্ঠানিক পরিত্যক্ত:নয়াদিগন্ত

অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমএল পিনাক-৬ লঞ্চের উদ্ধারকার্যক্রম। উদ্ধারকার্যক্রমের আট দিন পর গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল এই ঘোষণা দেন। এর আগের দিন রোববার একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেছিলেন, পদ্মার তলদেশে সন্ধান পাওয়া ধাতব বস্তুটি শনাক্ত করতে কাজ করবে চট্টগ্রাম থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজ কাণ্ডারি-২
ও জরিপ-১০। কিন্তু গতকাল তিনি বলেন, আর কোনো উদ্ধারকাজ করা হবে না। তবে কোথাও লাশ পাওয়া গেলে তা উদ্ধার করবে স্থানীয় প্রশাসন। ওই লাশ যদি পিনাক-৬ এর হয়ে থাকে এমন ধারণা করলে সেটি শিবচর পাচ্চর স্কুলমাঠে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ দিকে সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত উদ্ধারকার্যক্রমে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ডুবুরিরা বলছেন, রোববার তারা একটি বস্তু শনাক্ত করেছিলেন। সোমবার ওই বস্তুটি কী তা জানতে ডুবুরি পাঠানো হয়। কিন্তু নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ও ঢেউ থাকায় ডুবুরিরা পানির ৩০ ফিট নিচে পর্যন্ত যেতে সক্ষম হন। এর নিচে আর যেতে পারেননি। তাই এই মুহূর্তে তারাও কোনো ভালো সংবাদ দিতে পারছেন না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা। এ দিকে প্রশাসনের এই ঘোষণার পর ভেঙে পড়েছেন নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনেরা। তাহলে কী হবে তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের? প্রিয়জনদের লাশ আদৌ কি খুঁজে পাবেন না? নাকি ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের? কবে কোথায় একটি লাশ ভেসে উঠবে আর তার খবরই বা কে জানাবে তাদের? শেষবারের মতো কি প্রিয় মানুষটার মুখও দেখতে পারবেন নাÑএমন সব প্রশ্ন স্বজনদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। জেলা প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল বেলা ১১টায় মাওয়ার পদ্মা সেতুর রেস্ট হাউজে পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমএল পিনাক-৬ লঞ্চের উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল। এ সময় তিনি বলেন, মাওয়ার পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমএল পিনাক-৬ লঞ্চ উদ্ধার অভিযান বন্ধ করা হয়েছে । তবে লাশ খোঁজা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বাস্তবতা, সময়, নদীর পরিস্থিতি ও আবহাওয়াÑ সব কিছু বিবেচনা করে আমরা মনে করছি, লঞ্চ শনাক্তকরণ তৎপরতা আর চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আবহাওয়া নদ-নদী অববাহিকায় এখন ৩ নম্বর সঙ্কেত এবং পদ্মায় স্রোতের গতিবেগ পাঁচ-ছয় নটিক্যাল মাইল বিরাজ করছে । এ ছাড়া পানিতে বালুর মিশ্রণ অনেক বেশি। তাই এই লঞ্চ শনাক্তকরণ তৎপরতা আমরা স্থগিত ঘোষণা করছি। তবে লাশ খোঁজা অব্যাহত থাকবে। দীর্ঘ আট দিন ধরে পিনাক-৬ লঞ্চটি খুঁজতে ব্যর্থ হয়ে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর শনাক্তকরণ তৎপরতা সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো। তিনি আরো বলেন, পিনাক শনাক্তকরণ শেষ হলেও ভাটির দিকে নৌটহল জোরদার করা হবে। যদি কোনো লাশ ভেসে আসে তবে তার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, এ জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বরিশাল, মাদারীপুর, ভোলা, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জের পুলিশ ও জেলা প্রশাসন নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয় কোনো লাশ উদ্ধার করলে তা মাদারীপুরে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, দেশের সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পদ্মার তলদেশে একটি ধাতব বস্তু শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ওই ধাতব বস্তুটি কি ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ এর কি না তা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধাতব বস্তু শনাক্ত করার পর সেটি নিশ্চিত হতে ডুবুরি নামানো হয়নি কেনÑ জানতে চাইলে অনুসন্ধানী জাহাজ কাণ্ডারি-২-এর কমান্ডার নিশ্চুপ থাকেন। তবে ডিসি সাইফুল হাসান বাদল বলেন, প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ডুবুরি পদ্মার তলদেশে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনার অষ্টম দিনেও অনেক লাশ উদ্ধার হয়নি। এ ছাড়া উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের লাশে পচন ধরে গেছে। এখনো যেসব নিখোঁজ যাত্রীর লাশ পাওয়া যায়নি, তাদের লাশ উদ্ধারের জন্য মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ ভাটি অঞ্চলের জেলার প্রশাসন ও পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুট দেশের দণিাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এ ছাড়া নৌরুটের পদ্মায় প্রায়ই নৌদুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম সব সময়ের জন্য মাওয়া এলাকায় থাকবে। এ বিষয়ে নৌমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র এক কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্ধারকার্যক্রম প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে পিনাক-৬ শনাক্ত করার কাজ চলছে। তারা পিনাক-৬ শনাক্ত করতে পারলে জেলা প্রশাসনের প থেকে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। ১৭ জাহাজেও সফলতা মেলেনি : গত ৪ আগস্ট সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাওরাকান্দি থেকে প্রায় ২৫০ যাত্রী নিয়ে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয় এমএল পিনাক-৬ নামে লঞ্চটি। যদিও লঞ্চটির ধারণক্ষতা ছিল মাত্র ৮০ থেকে ১০০ জন। লঞ্চটি মাওয়া ঘাটের এক কিলোমিটার দূরে থাকতে ডুবে যায়। এই দৃশ্য দেখে আশপাশে থাকা স্পিডবোট ও ট্রলারগুলো দ্রুত সেখানে ছুটে গিয়ে ৪৯ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে আনতে সক্ষম হয়। থেকে যায় অসংখ্য মানুষ। এরপরই বিআইডব্লিউটিএ তাৎক্ষণিক উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে। তাদের সাথে যুক্ত হন নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। লঞ্চটি উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যায়ক্রমে আনা অত্যাধুনিক প্রায় ১৭টি উদ্ধারকারী জাহাজ ও এক ডজনের বেশি স্পিড বোট। উদ্ধারকাজে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৭৫০ জন উদ্ধারকর্মী। পিনাক-৬ উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ছিল বিআইডব্লিউটিএর ৯টি জাহাজ রুস্তম, নির্ভীক, সন্ধানী, তিস্তা, টাগবোট ৮-৩৯৭, আইটি-৩৯৪, ব-দ্বীপ, তুরাগ। এ ছাড়া নৌবাহিনীর দু’টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপরে জরিপ-১০ ও কাণ্ডারি-২ নামে দু’টি জাহাজ, কোস্টগার্ডের একটি, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিশাসক, অগ্নিবিনাশ ও রেসকিউ-২ নামে তিনটি ছোট-বড় জাহাজ। এসব জাহাজ থেকে ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক সব যন্ত্র, সাইড স্ক্যান সোনার, ইকো সাউন্ডার, ইকোগ্রাফি, সাববটম প্রোফাইলারসহ আরো অনেক কিছু। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম কোনো কাজ না করলেও পাশেই অপেক্ষা করছিল। বাদ যায়নি সনাতন পদ্ধতিতে উদ্ধারকার্যক্রমও। কিন্তু কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না পিনাক-৬ লঞ্চটিকে। অবশেষে গত শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী জাহাজ কাণ্ডারি-২ পদ্মা নদীর তলদেশে একটি ধাতব বস্তু আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। ওই বস্তুটিকে ঘিরে শুরু হয় নানা কৌতূহল। মূলত বস্তুটি কী তা শনাক্ত করতে একের পর এক অভিযান চালাতে থাকে কাণ্ডারি-২ ও জরিপ-১০ নামে জাহাজ দু’টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিনাকের কাছে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেল তারা সবাই।  চলছে সনাতন পদ্ধতিতে অভিযান : মাওয়ার পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমএল পিনাক-৬ লঞ্চ উদ্ধারে বিরতি দিয়ে পর্যায়ক্রমে চালানো হচ্ছে ‘টোটকা’ অভিযান। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ও কান্দিপাড়া এলাকার স্থানীয় ডুবুরিরা গত রোববার থেকে এই অভিযান চালাচ্ছেন। মাঝে বিরতি দিয়ে গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় তারা আবার এ অভিযান শুরু করেন । এর আগের দিন বিকেলে মাঝ পদ্মায় সম্ভাব্য একটি স্থান শনাক্ত করেন তারা। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শনাক্ত বস্তুটি কী তা নির্ণয় করতে পারেননি। ডুবুরি কামাল জানান , গত রোববার বিকেলে পদ্মার মাওয়া ঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি বস্তুর সন্ধান পান। কিন্তু বস্তুটি কী ওই দিনই তা শনাক্ত করতে পারেননি। তবে ৩০ কেজি ওজনের একটি গ্রাফি দিয়ে বস্তুটি আটকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নদীতে বাতাস ও প্রচণ্ড ¯্রােতে গ্রাফিটি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। ¯্রােতের তোড়ে গ্রাফিটি নদীর তলদেশে একদিক থেকে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে । তাই ওই স্থানে একটি বয়া বেঁধে রাখা হয়েছে । তিনি আরো বলেন, সোমবার ওই বস্তুটি কী তা জানতে ডুবুরি পানিতে নামানো হয়। কিন্তু প্রচণ্ড স্রোত ও ঢেউ থাকায় পানির ৩০ ফিট নিচে পর্যন্ত যাওয়া গেছে। এর নিচে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই মুহূর্তে তারাও কোনো ভালো সংবাদ দিতে পারছেন না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা। ৪৫ লাশ উদ্ধার : পদ্মার পাড়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও শিবচর পাচ্চর স্কুলমাঠে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন নির্মিত কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী সোমবার পর্যন্ত ৪৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে ২৮টি লাশ। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ থেকে ৩টি, শরীয়তপুর থেকে ১১টি, বরিশাল ১৩টি, চাঁদপুর থেকে ৫টি, ভোলা থেকে ১০টি, লক্ষ্মীপুর থেকে ১টি, মাদারীপুর থেকে ১টি ও নোয়াখালী থেকে ১টিসহ মোট ৪৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলেছিল মোট লাশ উদ্ধার হয়েছে ৪৬টি। তাদের তথ্য মতে, বরিশাল থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৪টি। কিন্তু বরিশাল পুলিশ জানিয়েছে, ১৪টি লাশের মধ্যে সর্বশেষ যে ৩টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে একটি লাশের পাত-পা বাঁধা ছিল। এ ছাড়া লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। তা ছাড়া বরিশাল থানায় এ ধরনের একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। তাই ওই লাশটি ডুবে যাওয়া লঞ্চের নয় বলে শনাক্ত করে সেটি রেখে দেয়। ওই হিসাবে লঞ্চের নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫টি।  ১৭ লাশ বেওয়ারিশ দাফন : স্বজন না পাওযায় গত শুক্রবার প্রথমে শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয় ১২টি লাশ। এরপর শনিবার তিনটি ও রোববার সর্বশেষ ২টি মোট ১৭টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন জানান, লাশগুলো পচন ধরে দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছিল। লাশের গন্ধে এলাকার মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। এ দিকে এখানে লাশ রাখার মতো প্রয়োজনীয় হিমঘর বা মর্গ নেই। তার ওপর লাশের কোনো স্বজনও পাওয়া যাচ্ছে না, যার কারণে লাশগুলো দাফন করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তবে দাফনের আগে প্রতিটি লাশের শরীর থেকে ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এই লাশগুলোর সব ডকুমেন্ট শিবচর উপজেলা পরিষদ অথবা এসপির কার্যালয়ে রাখা হবে। কোনো স্বজন লাশের সন্ধানে এলে তার ডিএনএ টেস্ট করার পর দু’টি ম্যাচ করা হবে। টেস্ট রিপোর্ট মিলে গেলে ধরে নেয়া হবে লাশটি ওই ব্যক্তির স্বজন ছিল। ডিএনএ টেস্টের জন্য জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমের সদস্যরা সব আলামত সংগ্রহ করেছেন। ইকবাল হোসাইন আরো বলেন, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রতিটি লাশ দাফন করা হয়েছে। ৬১ জন নিখোঁজ : নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা মোট ১৩৯ জনের নাম লেখান। তাদের মধ্যে ৪৫ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের প থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের দেয়া ফোন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হয়েছেন ৫০টি নাম ভুয়া লেখা হয়েছিল। এ বিষয়ে লৌহজং থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন জানান, তারা প্রতিটি নম্বরে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ জনের নাম লেখানো হয়েছে, যাদের জীবিত পাওয়া গেছে। রোববার বিকেল পর্যন্ত ২১ শিশুসহ ৬১ জন নিখোঁজের নাম চূড়ান্ত করেছেন তারা। নিখোঁজরা হলেনÑ শিবচরের বন্দরখোলা গ্রামের মিলি (৭), দণি কোবরার চরের মিরাজ (৮), গহরতলা গ্রামের ফাতেমা আক্তার (১৬), সন্ন্যাসীর চরের বিল্লাল (২৩), ফরহাদ (২৭), শিল্পী (২৫), ফাহিম (৯), আগ্রা পুকুর পাড়ের রাবেয়া (৮), উত্তর বাগারকান্দি গ্রামের শাহীনুর (১৭), কালকিনির মিদিখানের ফরিদা পারভীন (৪৫), পশ্চিম কমলপুরের তৃষা (২২), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের সুলতান দিঘিরপাড়ের পলি (২৮), তার মেয়ে মেঘলা (৭), বড়দিয়ার মাকসুদা (২৮), তার ছেলে হানিফ (আড়াই বছর), আলীপুরের তসলিমা (২৫), চরকান্দি গ্রামের সাদিয়া (৯), মানিকপুরের ফালানী (২০), কৃষ্ণপুর গ্রামের মিন্টু মোল্লা (২৬), গোবিন্দপুরের নিজাম (২০), বরিশালের উজিরপুরের ভরাকাটা গ্রামের মিজানুর (৪০), তার ছেলে ইমতিয়া (৯), গৌরনদীর বয়রাকান্দি গ্রামের অপর্ণা (২০), তৌহিদা (২), নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জান্নাত (৬), ফতুল্লার আয়েশা (৩৪), সারা (১১), রোজিনা (১২), হালিমা (২০), তানজিমা (১৩), মাদারীপুর সদর থানার চিরাপইপাড়ার কফিল উদ্দিন (৭০), আলী আকবর (৩৮), ফরিদপুরের ভাঙার পল্লী বেড়া গ্রামের রেজাউল (২৮), শাহীনুর (২৩), আমিনাবাগের শেখ আলী (৩৫), হট্টা গ্রামের রোজিনা আক্তার (২৬), সরাইনকাজি গ্রামের রবিউল মাদবর (৪০), ভাঙাপাড়ার আল আমিন (২৭), ফরিদপুরের সাতরশির সোবহান (৩৭), ইতি বেগম (৩০), ইভান মাদবর (৮), কুমিল্লার বরুড়া থানার পেড্ডা গ্রামের শিমুল পারভীন (৩৫), ফাতেমা (২০), ঢাকার মগবাজার নয়াটোলা আমবাগানের আফরোজা (১৭), গাজীপুরের কাপাসিয়ার মিম আক্তার (১৪), ঢাকার মুগদা থানাধীন মাণ্ডা এলাকার শিল্পী আক্তার (২৫), ফরিদপুরের সদরপুরের আড়িয়ালখাঁর মাহবুবুর রহমান (৪২), আজিজুল হক (২৮), রূপালী বেগম (২১), আরজু (৭), নগরকান্দা উপজেলার সরমাঝি গ্রামের স্বপ্না বেগম (২৭), আবদুল্লাহ (২০), হরিনারপুর গ্রামের উনেজা (১১), লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার চরমার্টিন গ্রামের মিরা (৬০), মকবুল আহমেদ (৪৫), ঝালকাঠির শিলছড়ি গ্রামের শারমীন (২৭) ও মেরাজ (৯)। কী হবে ৬১ লাশের? : কী হবে হতভাগ্য এই ৬১টি লাশেরÑ এমন প্রশ্ন এখন সবার মধ্যে। উদ্ধারকার্যক্রম পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পদ্মার পাড়ের সবার মুখে এখন এই একই প্রশ্ন। এরা কি লঞ্চের কেবিন ও ব্রিজে আটেক রয়েছে? না কি নদীর স্রোতে ভাসতে ভাসতে চলে গেছে অজানার উদ্দেশে। পদ্মাপাড়ের মানুষ বলছেন, দুর্ঘটনার সময় লঞ্চের নিচের ডেকের জানালা রশি আর তাঁবু দিয়ে বাঁধা ছিল, যাতে ঢেউয়ের পানি ভেতরে যেতে না পারে। উপরের কেবিনের দরজাও বাঁধা ছিল। তাই দুর্ঘটনার সময় অনেকেই হয়তো বের হতে পারেননি। তাহলে কি তাদের সলিল সমাধি হয়েছে, নাকি ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে স্বজনদের। কবে, কোথায় ভেসে উঠবে তার প্রিয় মানুষটির লাশ। উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট সোমবার মাওয়ার লৌহজং চ্যানেল পদ্মায় প্রায় ২৫০ যাত্রী নিয়ে এমভি পিনাক-৬ নামে লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে কমপে ৮৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার হয়েছে ৪৫টি। এর মধ্যে পরিচয় শনাক্ত ও হস্তান্তর হয়েছে ২৮ জনের। ১৭ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment