Wednesday, August 13, 2014

ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে জাতিসঙ্ঘের প্যানেল:নয়াদিগন্ত

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য একটি প্যানল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস যুদ্ধে কোনো অপরাধ করে থাকলে তাও খতিয়ে দেখবে এই প্যানেল। ২০১৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এই প্যানেল জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের কাছে তাদের রিপোর্ট প্রদান করবে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জাতিসঙ্ঘের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইসরাইল তদন্ত প্যানেল গঠনের
উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে প্যানেলকে একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এ দিকে গাজার ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধবিরতির সুযোগে তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফেরার চেষ্টা করেছেন। দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও রেডিও তেহরানের।  জাতিসঙ্ঘ প্যানেল গঠন : জাতিসঙ্ঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৩ জুন ২০১৪ থেকে গাজায় পরিচালিত সামরিক অভিযানে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘনের সব ধরনের ঘটনা স্বাধীন এই তদন্ত প্যানেল তদন্ত করে দেখবে। তদন্ত প্যানেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কানাডার আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাবাস। সদস্য হিসেবে থাকবেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ সেনেগালের নাগরিক দোদো দিয়েনে ও লেবানিজ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আইনজীবী আমাল আলামুদ্দিন। তবে আমাল এই প্যানেলের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছেন, ব্রিটেনে তার হাতে আটটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকায় তিনি এই মুহূর্তে জাতিসঙ্ঘ প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।  গাজায় হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি গতকাল বলেছেন, ‘গাজায় দখলদার বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য জাতিসঙ্ঘ যে তদন্ত প্যানেল গঠন করেছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি এই প্যানেল অতি দ্রুত তার কাজ শুরু করবে।’ অন্য দিকে ইসরাইল এই প্যানেল প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্লেখ্য, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই গত ৩১ জুলাই বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন গাজায় সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করেছে। সে জন্য বিশ্ব শক্তিগুলোর উচিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলকে দায়ী করা।  গাজা-অবরোধ না তুললে আবার যুদ্ধ শুরু হবে : জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের সিনিয়র কর্মকর্তা জেমস রাওলে বলেছেন, দারিদ্র্যপীড়িত গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে না নিলে আবারো যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাওলে বলেন, গাজা উপত্যকাকে পুনর্গঠনের জন্য দীর্ঘ দিনের অবরোধ তুলে নিতে হবে। এ ছাড়া গাজার জনগণকে বহির্বিশ্বের সাথে ব্যবসায়বাণিজ্যের সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ঠিক গাজার মানুষ ১০ বছর আগে যা করতেন তা-ই করতে দিতে হবে তাদের। এ পর্যায়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজার ওপর থেকে যদি ইসরাইল অবরোধ তুলে না নেয় তাহলে আরেক দফা যুদ্ধ শুরু হবে। এর পাশাপাশি ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে গাজার জনগণকে রায় ব্যর্থতার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজেরও সমালোচনা করেন জাতিসঙ্ঘের এ কর্মকর্তা।  রাওলের হিসাব মতে, ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় ১০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজার শিল্প-কারখানার বিরাট অংশ। এ ছাড়া গাজার কৃষিেেত্রর প্রায় অর্ধেক ধ্বংস এবং তিন লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার গাজায় যাবে তুরস্কের ত্রাণবাহী জাহাজ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে তুরস্কের মানবিক ত্রাণ ফাউন্ডেশন আইএইচএইচ। সংস্থাটি বলেছে, আবার তারা গাজা উপত্যকার ওপর ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করবে। চার বছর আগে তুর্কি ত্রাণ ফাউন্ডেশন গাজা অভিমুখে ফ্রিডম ফোটিলা নামে জাহাজভর্তি সহায়তা পাঠিয়েছিল। কিন্তু জাহাজ বহরটি ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক পানি সীমায় থাকতেই ইসরাইলের সেনারা তাতে হামলা চালায় এবং গুলিতে অন্তত নয়জন নিহত হন এবং আহত এক ত্রাণকর্মী চলতি বছরের মে মাসে দীর্ঘ ভোগান্তির পর মারা গেছেন।  ব্রিটেনে ইসরাইলি অস্ত্র কারখানা বন্ধ করল বিােভকারীরা : ব্রিটেনে ফিলিস্তিন সমর্থক একদল বিােভকারী ইসরাইলি মালিকানাধীন একটি ড্রোন ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিয়েছে। বিােভকারীরা ওই কারখানার ছাদে উঠে ফ্যাক্টরির কার্যক্রম বন্ধ করার দাবিতে বক্তব্য ও স্লোগান দেয়। দ্য লন্ডন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ বলেছে, তারা বার্মিংহামে অবস্থিত কারখানার দরজায় শিকল লাগিয়ে দিয়েছে এবং তারা ছাদেই অবস্থান নেবে। ছাদে তারা একটি ব্যানার লাগিয়ে ওই ব্যানার সরানোর ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। এলবিটের ওই ফ্যাক্টরিটি ইসরাইলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তৈরির কারখানা। এই ফ্যাক্টরি থেকে পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোনও রফতানি করা হয়।  ইসরাইলের নিন্দায় কোরিয়ার চলচ্চিত্র পরিচালকেরা : যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলের নিন্দা জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন কোরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতারা। কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ইসরাইলি দূতাবাসে ওই স্মারকলিপি দেন তারা। স্মারকলিপিতে শতাধিক নামকরা ব্যক্তি স্বার করেন। স্বারকারীদের মধ্যে রয়েছেন ওল্ড বয়, স্টকার, জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়ার মতো চলচ্চিত্রের পরিচালক পার্ক চান-উক এবং দ্য বার্লিন ফাইল, দ্য আনজাস্ট ফিল্মের ডিরেক্টর রিও চিউং ওয়ানের মতো বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর ছাড়াও বহু শিাবিদ, আইনবিদ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বও।  স্মারকলিপিতে অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। স্মারকলিপির অনুলিপি সিউলে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদ এবং দণি কোরিয়ার বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন হলিউডের বিখ্যাত তারকা দম্পতি অস্কার বিজয়ী পেনিলপ ক্রুজ ও জ্যাভিয়ের বারডেম। তারা ইসরাইলি আগ্রাসন বিরোধী এক খোলা চিঠিতে স্বার করেন।

No comments:

Post a Comment