Wednesday, August 13, 2014

৭ খুনে জড়িত কাউকে-না-কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন আইভী:নয়াদিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে না কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেনকে নিজের লোক নয় বলে দাবি করে তিনি বলেন, নূর হোসেন ঘটনার সাথে কোনো না  কোনোভাবে জড়িত। নূর হোসেন আমার লোক হলে আইভী তাকে বড় বড় পদ দেন কেন। নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলে
ন, আমার হাতে মতা থাকলে কালকেই নূর হোসেনকে নিয়ে আসতাম। গতকাল সচিবালয়ে গঠিত প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির কাছে শামীম ওসমান সাক্ষ্য দেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া এ সাক্ষ্য চলে প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত। সাক্ষ্য শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের পর সাতজনের শরীরে ২৪টি করে ইট বেঁধে পেট কেটে নদীতে ফেলে দেয়ার পর সব লাশ একসাথে কিভাবে ভেসে উঠলÑ তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সরকারি দলের এ সংসদ সদস্য। এ ঘটনায় তিনি মনে করছেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এ ঘটনার সাথে ‘ওয়ান-ইলেভেন’এর লোকজন জড়িত থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ঘটনার আগে থেকেই তাদের নারায়ণগঞ্জে আনাগোনা করতে দেখা যায়।  সোমবার কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে মেয়র আইভী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদাররাই প্রত্যক্ষ ও পরোভাবে সাত খুনের সাথে জড়িত। গডফাদার কারা জানতে চাইলে আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে কারা ‘গডফাদার’ তা দেশের সবাই জানে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলার কিছু নেই। মেয়র আইভীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, সাত খুনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আইভী প্রথমে আমার নাম বলেছিলেন। পরে গডফাদারের কথা বললেন। এরপর এটাও থাকবে না। আমার মনে হয় তিনি কাউকে না কাউকে সেভ করতে চাইছেন। নারায়ণগঞ্জের গডফাদার কারাÑ এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গডফাদারের শাব্দিক অর্থ আমি জানি না। এই শব্দ নিয়ে এসেছে একটি পত্রিকা। নারায়ণগঞ্জবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে মেয়র আইভীর প্রশ্ন তোলা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব এলাকার মানুষ যেমন নিরাপদ তেমনি নারায়ণগঞ্জের মানুষও নিরাপদ।  শামীম ওসমান দাবি করেন, ওই খুনের ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই মন্তব্য করেছিলাম, সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দু-একজন কর্মকর্তা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমার কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনার সাথে যারা জড়িত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলাম তা-ই সত্যি হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে দেয়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খুনিরা কি বেরিয়ে আসবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সহায়ক হবে। তদন্ত কমিটিকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শও দিয়েছেন বলে তিনি জানান। সোমবার তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে মানুষ এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এ ব্যাপারে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সারা দেশের মানুষের মতোই নিরাপদ। আর খুন তো ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিদিন একটি করে হয়। নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার আগে শামীম ওসমানের সাথে টেলিফোনে তার কথোপকথনের একটি অডিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নূর হোসেনের সাথে ওই ফোনালাপের কথা স্বীকারও করেন শামীম। গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি তাকে বাঁচাতে ফোনে কথা বলিনি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে তার সাথে কথা বলতে হয়েছে। তার পাসপোর্টে কোন কোন দেশের ভিসা লাগানো আছে জানতে চেয়েছিল ওই গোয়েন্দা সংস্থা। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, নূর হোসেন যদি ধানমন্ডিতেই অবস্থান করে ছিল, তবে ওই গোয়েন্দা সংস্থা তাকে গ্রেফতার করল না কেন। তিনি বলেন টেলিফোনের কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া যেভাবে প্রচার করল, অথচ এ খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইভীর বক্তব্যসহ একটি সিডি আপনাদের (সাংবাদিক) আমি দিয়েছি। সেটা নিয়ে কেউ লিখল না। তিনি দাবি করেন, ‘আইভী একটি করাপটেড মেয়ে’।  তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজন মনে করায় কমিটির সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারি দলের এমপি শামীম ওসমানের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য ও একজন সাী হিসেবে শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম সহযোগিতা করেছেন এবং বিভিন্ন ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতের কাছে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে এ কমিটির। নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন বলে জানান কমিটির প্রধান। চাঞ্চল্যকর এ সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এ প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সাথে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরো ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি নাÑ গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করবে এ কমিটি। অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা  বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি নাÑ কমিটিকে তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছেন আদালত। তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত ৩৫০ জনের বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যাদের মধ্যে র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারাও আছেন। ইতোমধ্যে কমিটি হাইকোর্টে কয়েক দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে, ঘটনার সাথে কারা জড়িত সেটা তারা জানতে পেরেছেন। কী কারণে তারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এখন তা জানতে তদন্ত চলছে। গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম। এরপর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং পয়লা মে অপরজনের লাশ ভেসে ওঠে শীতল্যায়। অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের প থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন। শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও পরে গা-ঢাকা দেন নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হন।

No comments:

Post a Comment