প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম,পবিত্র ধর্ম। কোনো কোনো মহল ইসলামকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করার চেষ্টা চালায়। এর মাধ্যমে তারা ইসলামকে কলুষিত করতে চায়। কিন্তু আমরা চাই না ইসলামকে ব্যবহার করে কেউ এর বদনাম করুক। তিনি বলেন, আমরা চাই সারা দেশে ইসলামের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাক। আমরা জঙ্গিবাদ দমনে জেলায়, উপজেলায় ও ইউনিয়নপর্যায়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল ‘হজ কার্যক্রম ২০১৪’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। নগরীর আশকোনায় হাজীক্যাম্পে অনুষ্ঠিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ধর্ম মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন, সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুন ও ঢাকাস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন নাসের আল বুশাইরি। স্বাগত ভাষষ দেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় উন্নতির লক্ষ্যে আমরা বেশ কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০০৯ সালে হজ উইংয়ের অফিস জেদ্দা থেকে মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ মিশনে স্থানান্তর করি। আমাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে গত পাঁচ বছরে হজ ব্যবস্থাপনায় হাজীদের সেবা প্রদান অনেক সহজলভ্য ও উন্নততর হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হজযাত্রীদের দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হজযাত্রী পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০০৯ সালে আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অগ্রাধিকার লাভ করে। হজযাত্রী পরিবহন, মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবাসহ সব ক্ষেত্রে আগের সরকারগুলোর সব অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর ফলে হাজীদের সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধিসহ হজব্রত পালন সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির আওতায় এসেছে। হজ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করে হজ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং হজবিষয়ক ওয়েবসাইট প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হাজী সাহেবরা সহজেই সব সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। দেশ-বিদেশ থেকে হজযাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা হাজী সাহেবদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারছেন। হজযাত্রীরা ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিক্যাল সুবিধা, সৌদি আরব গমন ও প্রত্যাগমন সেবা পাচ্ছেন। হজযাত্রীদের সুবিধার্থে ২০১০ সাল থেকে জেদ্দা টার্মিনাল প্লাজা ভাড়া করা হয়। চারদলীয় জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হজযাত্রীদের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় হাজীর সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৯৮৩ এবং ৪৫ হাজার ৭৬৩ জন। আমাদের সরকারের বিগত সময় হজযাত্রীর সর্বোচ্চ সংখ্যা বছরে এক লাখ ৯ হাজার ৯৫২ জন। আমাদের সরকারের সময়ে হজযাত্রী বৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় যে, হজ ব্যবস্থাপনায় আমরা কতটা উন্নতি করেছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলামের খেদমতে নিবেদিত। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। ইতোমধ্যে সরকারিপর্যায়ে সর্বপ্রথম আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কর্মসূচি ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি বিরাট মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠনের সাথে সাথেই ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাকার্যক্রম প্রকল্প পুনরায় চালু করি। এর ফলে এ দেশে হাজার হাজার আলেমের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশে ইসলামের নামে মানুষ হত্যা ও বোমাবাজি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। আর এসব করা হয়েছে পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে। কতিপয় বিপথগামী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী এখনো ইসলামের নামে ধ্বংসাত্মক ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। এ কলঙ্কের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজ আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সম্মানে এখানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। হজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে আল্লাহর মেহমান হিসেবে যারা পবিত্র মক্কা ও মদিনায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন, আমি আজ তাদের উদ্দেশে কথা বলার পূর্বে মহান আল্লাহর নিকট শোকরিয়া আদায় করছি।’ তিনি বলেন, সম্মানিত হজযাত্রীরা সুষ্ঠু ও নিরাপদে হজব্রত পালন করে দেশে ফিরে আসবেন এ দোয়া করছি। হজ পালনকালে বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য হাজীদের দোয়া করতে তিনি অনুরোধ জানান।
No comments:
Post a Comment