Wednesday, August 27, 2014

জাতীয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ:প্রথম অালো

মানবতার জয়গানে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান—/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্...’। তিনি দ্রোহে ও প্রেমে, কোমলে-কঠোরে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। সেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) তিনি ঢাকায় পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মানুষ স্মরণ করবে তাঁকে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত-বৈভবের কাছে। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি জীবনেও। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও অপরটি ‘ভাঙ্গার গান’। ১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই বাংলা কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল। শুধু কবিতাতেই নয়, গান রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন ধ্রুপদি ধারার সঙ্গে। রাগনির্ভর গানকে ভেঙেচুরে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য ও শ্রুতিমধুর করেছেন। এক রাগের সঙ্গে অন্য রাগের মিলন ঘটিয়ে সংগীতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তিনি তাঁর কবিতার পঙ্ক্তিমালায় তুলে ধরেন নিপীড়িত মানুষের কথা। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন নজরুল। কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দেওয়া হয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। ৭৭ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি নজরুল তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,/যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই’। সেই বিবেচনাতেই কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। কর্মসূচি: জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও আলোচনা। নজরুল ইনস্টিটিউটের আয়োজনে বিকেল চারটায় জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে নজরুর পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমী ও নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ যৌথভাবে আয়োজন করেছে ‘ফিরিয়া যদি সে আসে’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালায় অনুষ্ঠানটি শুরু হবে।

No comments:

Post a Comment