Monday, September 1, 2014

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত মিয়ানমার:নয়াদিগন্ত

দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আবার শুরু হচ্ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তালিকভুক্ত দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে মিয়ানমার সরকার। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সচিবপর্যায়ের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এ কথা জানান। বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থেইন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সম্মতি জানিয়ে মিয়ানমার স্বীকার করে নিলো যে বাংলাদেশে অবস্থানরত উদ্বাস্তুরা তাদের নাগরিক। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়পক্ষ সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সম্মতি আদায় বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে দুই দেশের একটি যৌথ কমিটি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করবে। মিয়ানমার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ বৈঠকে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা চেয়েছিল। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে কি নাÑ এমন প্রশ্নকে ভবিষ্যৎনির্ভর বলে পররাষ্ট্র সচিব এড়িয়ে যান। জাতিগত সঙ্ঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে। উদ্বাস্তুবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্যানুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন। এর বাইরে আরো প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বলে সরকারের প থেকে বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও ২০০৫ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। শহীদুল হক জানান, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি যৌথ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী জানুয়ারিতে মিয়ানমার সফরে যাবেন। তিনি বলেন, বৃহত্তর রূপরেখার আওতায় সার্বিক বিষয়গুলো আলোচনার জন্য বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব মিয়ানমারকে দিয়েছে। ‘আস্থা ও উন্নয়নের জন্য সহযোগিতার রূপরেখা’ শীর্ষক এ খসড়া প্রস্তাবের উপাদানগুলো হলো আস্থা সুদৃঢ় করা, নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংলাপ, বাণিজ্য ও যোগাযোগ, জ্বালানি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বঙ্গোপসাগরভিত্তিক সহযোগিতা। সব বিষয় আলোচনার জন্য একটি অভিন্ন ফোরাম হবে এটি। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাথেও বাংলাদেশের একই ধরনের ফোরাম রয়েছে বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান। বৈঠকে উভয় দেশ পরস্পরের আটক হওয়া নাগরিকদের ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। বর্তমানে ১৯০ জন বাংলাদেশী মিয়ানমারের জেলে এবং ১১০ জন মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশের কারাগারে আটক রয়েছে। বৈঠকে রাখাইন প্রদেশের সিটওয়ে গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশে গ্যাস আমদানির ব্যাপারেও আলাপ হয়েছে। বৈঠক শেষে উ থেইন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

No comments:

Post a Comment