Tuesday, September 30, 2014

২ শ’ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে:নয়াদিগন্ত

ঈদবাজারে ২০০ কোটি টাকার জাল নোট নিয়ে বাজারে নেমেছে জালিয়াতচক্র। তাদের টার্গেট পশুর হাট। ইতোমধ্যে ৫০ কোটি টাকা বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই জালিয়াতচক্রের খপ্পরে অনেকেই এবার প্রতারিত হবেন। তবে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট সতর্ক। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জাল টাকার সরবরাহকারীরা মাঠে নেমেছে। প্রতারকেরা রাজধানীসহ সারা দেশের পশুহাটগুলোয় এসব জ
াল নোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিপুল অঙ্কের নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে অবহিত করেছে। জাল টাকা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ারও আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্র জানায়, ঈদুল আজহায় ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত পশুহাট হচ্ছে ২২টি। এর বাইরে অননুমোদিত হাট বসতে পারে ১৫ থেকে ২০টি। এসব হাটে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হতে পারে। সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে জাল নোটের কারিগরেরা আগে থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। উৎসব ও পার্বণে বাজারে জাল টাকা বা জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার সুবিধাটা বেশি বলে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির ৩০টি চক্র সক্রিয়। এরাই সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে জাল টাকা। তাদের প্রথম পছন্দ ১০০০ টাকার নোট। পশুহাটে বিশাল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করেছে গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, রাজধানীর পশুহাটে ১৭৫ কোটি টাকা হাটের ইজারাদারেরা কমিশন বাবদ গ্রহণ করতে পারেন। সংস্থাটি সরকারকে জানিয়েছে, রহমতগঞ্জ ফ্রেন্ডস কাব খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে বুড়িগঙ্গা বাঁধসংলগ্ন মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, ধুপ খোলা মাঠ, কাঁচকুড়া গরুর হাট, ইনু সাহেব বালুর মাঠ, বিশ্ব ইস্তেমা মাঠ, আগারগাঁও পশুর হাট, কর্ণপাড়া ডিপজলের মাঠ এবং গাবতলী পশুর হাটে আধিপত্য নিয়ে প্রভাবশালীদের মধ্যে বিরোধ হওয়ার আশঙ্কা করেছে গোয়েন্দারা। এ বিরোধকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাটি পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের কাছে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাটগুলোতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন এবং গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা করা, হাট ব্যবস্থাপনায় গণ্যমান্য ব্যক্তি গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করা, চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর পদপে নেয়া, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনতে প্রকৃত ক্রেতা-বিক্রেতার মাধ্যমে পশু কেনাবেচা নিশ্চিত করা, হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করা, হাটে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, বিষাক্ত খাবার সরবরাহ বন্ধ করা, মাস্তান ও প্রভাবশালীদের কার্যক্রম গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা, পাইকার ও ক্রেতাদের টাকা বহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ দিকে পশুহাটগুলোয় জাল নোট শনাক্ত করার যন্ত্র বসানো হলেও তা খুব একটা কাজে আসে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, জালিয়াতচক্রকে গ্রেফতারে পুলিশ সক্রিয় আছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হয়েছে। আর হাটগুলোয় জাল নোট শনাক্ত করতে প্রত্যেকটি হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি পুলিশের মেশিন থাকবে। কেউ চাইলেই ওই মেশিনে নোট পরীক্ষা করে নিতে পারবেন। র‌্যাবের মিডিয়া উইং প্রধান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, কোরবানির ঈদ এবং রোজার ঈদে টাকা লেনদেনের পরিমাণ যেহেতু বেড়ে যায় তখন জাল নোট সরবরাহকারীরাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে জাল নোটের পরিমাণ কত তা নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জাল নোট প্রতারকদের গ্রেফতারে র‌্যাবের সব ক’টি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ধরাও পড়েছে। তিনি বলেন, পশুর হাটগুলোয় জালিয়াতচক্র যাতে প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য প্রতিটি হাটে নোট শনাক্তকরণের জন্য মেশিন থাকবে। আর হাটগুলোর ভেতরে গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হবে। র‌্যাব-২ গত ২৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের আবুল কাশেম খান সড়ক থেকে জাল টাকা ব্যবসায়ী লিটন সরদার (২৪) নামের এক প্রতারককে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ২১টি এক হাজার টাকার জাল টাকার নোট উদ্ধার করে। লিটন জানিয়েছে, জাল মুদ্রা দুই ভাবে মুদ্রণ করা হয়। ভালো মানের কাগজে আঠা ও সিকিউরিটি থ্রেড বসিয়ে ভাঁজ করা হয়। এরপর স্ক্যানার ও প্রিন্টিং মেশিনের সহায়তায় সূèভাবে যেকোনো মূল্যের জাল টাকা তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ওয়াশ পদ্ধতিতেও জাল নোট তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে আসল টাকার নোট ওয়াশ করে শুকানো হয়। পরে ওই নোটের ওপর টাকার অঙ্ক বসিয়ে ছাপ দেয়া হয়। যেমন ১০০ টাকার নোট ওয়াশ করে সাদা করে তার ওপর ৫০০ টাকার অঙ্ক বসিয়ে বাজারে ছাড়া হয়। লিটন জানায়, তিন ধাপে জাল টাকা বাজারে ছাড়া হয়। প্রথম ধাপে পাইকারি হিসেবে এক লাখ টাকার একটি বান্ডেল ২৫-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দ্বিতীয় ধাপে পাইকারি কারবারিরা আবার এসব টাকা খুচরা কারবারির কাছে ৪০-৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। তৃতীয় ধাপে খুচরা কারবারিরা এসব টাকা নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে তা সরাসরি কৌশলে ঢাকার লালবাগের কেল্লা মোড়, বাবুবাজার, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, আজিমপুর গোরস্থান, গুলিস্থান ও কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বৃদ্ধ, দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের লোকেরাই হচ্ছে নোট জালকারীদের মূল টার্গেট।

No comments:

Post a Comment