ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের ভর্তি পরীায়ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ১৫ ভর্তিচ্ছুকে হাতেনাতে এবং পরে জালিয়াতি চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আটককৃতদের মধ্যে এক থানার ওসির ছেলে থাকার কথা জানতে পারলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন। এ ঘটনায় সবার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে
বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী পরীক্ষাগুলোতে জালিয়াতি রোধে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় জালিয়াতি চক্রের যে সদস্যদের নাম শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন পুনরায় তাদের নাম এসেছে ক ইউনিটের জালিয়াতিতেও। এর মধ্যে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন সবুজ, ইমদাদুল হক খোকন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান জনির নামও রয়েছে। জনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে এসব শিক্ষার্থী আটক হওয়ার সাথে সাথে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে সবুজ এবং তার সহযোগীরা প্রক্টর অফিসের সামনে মহড়া দেয়। পরে তার সহযোগী খোকনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের হাতে তুলে দেয়। স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগে নেতা জনি প্রক্টর অফিসে কয়েকজনকে ছাড়িয়ে নেয়ার তদবিরে দীর্ঘক্ষণ থাকলেও তাকে আটক করা হয়নি। তার মোবাইল কিছুক্ষণ আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জনি অভিযুক্ত কিনা আমরা নিশ্চিত নই। সে কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে সে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া যাদের নাম একাধিকবার পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে আটক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সবার সাথেই এক থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করে জালিয়াতি চক্র। ুদ্র আকৃতির ব্লুটুথ ডিভাইস এবং মোবাইল ব্যবহার করে এ জালিয়াতি করা হয়। যাদের সাথে ব্লুটুথসহ মোবাইল ডিভাইস ছিল তারা শুনে প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন। বাকি যাদের কাছে শুধু মোবাইল ছিল তাদের নিকট এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর পাঠিয়ে দেয়া হয়। এগুলো ব্যবহার করতে গিয়েই ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের বিভিন্ন কেন্দ্রের ১৫ জন শিক্ষার্থী আটক হন। আরো অনেক শিক্ষার্থী এর সাথে জড়িত থাকতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আটককৃতরা হলেন অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জায়েদ হাসান (রোল-৪৪৬২৮৭), গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে প্রিয়ম সরকার (রোল-৪৩৫৩৭৮), কার্জন হলের ফিশারিজ বিভাগ থেকে সাদমান আহমেদ সৈকত (রোল-৪০৩৬৬৬), নীলতে হাইস্কুল থেকে মো: বদিউজ্জামান (রোল-৪৩৩০৬৩), নটর ডেম কলেজ থেকে তরিকুল ইসলাম (রোল-৪৬৪০৯৬), নাফিয়া হাসান (রোল-৪৮২১৪৯), মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সৈয়দ আলমগীর কবির (রোল-৪৯৪৬৮৫), মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে রাইসুল ইসলাম (রোল-৪৬৯৪৬০), মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি গার্লস স্কুল থেকে ফারহা ফারজানা নিশাত (রোল-৪৭৩৭৫৭), কে এম রেজওয়ানুল এহসান (রোল-৪৭২৮০০) ও ইফরাতুল কাওছার (রোল-৪৭২৭৬১), ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ থেকে রুহুল আমিন সেতু (রোল-৪৫২৭২৭) ও মো: ফুয়াদ হাসান (রোল-৪৫২৭৩১) এবং কর্মচারী মো: রহিম। এ ছাড়া জালিয়াতি চক্রের একজন মো: ইমদাদুল হক খোকনকে প্রক্টর অফিসের সামনে থেকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরে লালবাগ থানায় আটক দুইজনের নাম এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। ওদিকে পরীক্ষা শুরুর আগে সকালে এই প্রতিবেদকের নিকট ভর্তি পরীক্ষার একটি পূর্ণাঙ্গ সেটের প্রশ্নপত্র আসে। যেগুলো পরে প্রক্টরের কাছে জমা দেয়া হয়। তবে পরীার প্রশ্নের সাথে এ প্রশ্নের কোনো মিল পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ বলেন, আটককৃত সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে। এদের মধ্যে একজন পুলিশের একটি থানার ওসির ছেলে বলে শুনেছি। জড়িত যে-ই হোক কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃত মেধাবীরাই ভর্তি হোক। আগামী পরীক্ষাগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এ সময় তিনি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিাবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ক-ইউনিটের প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীা ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের মোট ৭৬টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলে। এক হাজার ৬৪০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৮০ হাজার ৪৪২ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। আসনপ্রতি আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪৯টি। পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ক-ইউনিট ভর্তি পরীার প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মো: ইমদাদুল হক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা প্রমুখ বিভিন্ন পরীাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আটক শিক্ষার্থী ও তাদের দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে গতকাল নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা রুজু করেছে। যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা হলো : জায়েদ হাসান (রোল-৪৪৬২৮৭), প্রিয়ম সরকার (রোল-৪৩৫৩৭৮), সাদমান আহমদ সৈকত (রোল-৪০৩৬৬৬), মো: বদিউজ্জামান (রোল-৪৩৩০৬৩), তরিকুল ইসলাম (রোল-৪৬৪০৯৬), সৈয়দ আলমগীর কবীর (রোল-৪৯৪৬৮৫), রাইসুল ইসলাম (রোল-৪৬৯৬৬০), ফারহানা ফারজান নিশাদ (রোল-৪৭৩৭৫৭), কে এম রেজওয়ানুল এহসান (রোল-৪৭২৮০০), ইসরাতুল কাওসার (রোল-৪৭২৭৬১), রাফিয়া হাসান (রোল-৪৮২১৪৯), মো: রুহুল আমিন সেতু (রোল-৪৫২৭২৭), মো: ফুয়াদ হাসান (রোল-৪৫২৭৩১)। সহযোগীরা হলো : ইমদাদুল হক খোকন (পিতা জাবেদ আলী) ও মো: আব্দুর রহিম (ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের কর্মচারী)। এসব শিক্ষার্থী যাতে ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
No comments:
Post a Comment