Sunday, September 14, 2014

তিস্তা ও সীমান্ত ইস্যুতে ভারতের সাথে বৈঠক ২০ সেপ্টেম্বর:নয়াদিগন্ত

তিস্তা চুক্তি সই, সীমান্ত চুক্তি অনুস্বাক্ষর এবং ট্রানজিটসহ বিভিন্ন অনিষ্পন্ন ইস্যুতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ২৭ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও ইস্যুগুলো আলোচনায় আসবে। ভারতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীপর্যায়ে সার্বিক ইস্যুতে এবং শীর্ষপর্যায়ে অনি
ষ্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই দেশ প্রথমবারের মতো আলোচনা করবে। জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) আওতায় বাংলাদেশ ও ভারত সার্বিক দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনা করে থাকে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে জেসিসির আওতায় আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষে তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত চুক্তি অনুস্বাক্ষর এই মুহূর্তে অগ্রাধিকারে রয়েছে। আর ভারতের জন্য নিরাপত্তা ও ট্রানজিট ইস্যুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জেসিসির আওতায় এর বাইরেও বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সরাসরি জাহাজ চলাচল, জ্বালানি খাতে সহায়তা, ভিসাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে। বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে আটক উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া এবং কলকাতায় আটক নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ও আলোচনায় আসবে বলে জানা গেছে। জেসিসি বৈঠককে সামনে রেখে সম্প্রতি হিন্দুস্থান টাইমসকে  দেয়া সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক করিম বলেছেন, তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে দিল্লির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ঢাকা সচেতন রয়েছে। ইস্যু দু’টি নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে। তবে আমাদের ধৈর্য আছে। ভারতে এখন নতুন সরকার এসেছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করলেও রাজ্যকে সাথে নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার অগ্রসর হতে চায়। তিস্তা চুক্তির জোরালো বিরোধিতাকারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে হাইকমিশনার বলেন, পররাষ্ট্র সম্পর্কে দরকষাকষি হয় কেন্দ্রের সাথে। আমরা সব রাজ্যের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। তবে ভারতের কেন্দ্রকেই রাজ্যের সাথে সম্পর্কের মধ্যস্থতা করতে হবে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে। এটা হতাশাজনক কি না প্রশ্ন করা হলে তারিক করিম দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূরাজনীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, অভ্যন্তরীণ, দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সম্পর্ক মাঝে মধ্যেই গুলিয়ে যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তিনি বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় সীমান্ত চীন বা পাকিস্তানের সাথে নয়, বরং বাংলাদেশের সাথে। ভারতের প্রতিবেশী অন্য দু’টি দেশের সাথে প্রাকৃতিকভাবে প্রাচীর নির্মিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে সীমান্তটি অনেক বেশি সম্পৃক্ত। জ্বালানি সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তারেক করিম বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমরা বলেছি, আপনারা উৎপাদন করুন, উৎপাদিত বিদ্যুতের বেশির ভাগ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নিয়ে যান, শুধু বাংলাদেশের জন্য ২০ হাজার মেগাওয়াট রেখে যান। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরাও বিনিয়োগ করব; আবার আমরাই কিনে নেবো। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। আর সীমান্ত চুক্তি ভারতের রাজ্যসভায় উত্থাপনের পর এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিবেচনাধীন রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে সংসদের অধিবেশন বসবে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক করে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্টের সুবিধার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট প্রয়োজন। দেশভাগের আগে সড়ক, রেল ও নদীপথে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল ত্রিপুরা। এ সুবিধা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নবিষয়ক ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভে কে সিং গেল মাসে ঢাকা সফর করে গেছেন। তিনি ভারতের সাথে বাণিজ্য বাড়াতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দুয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতের ভেতর দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ জানালে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সইয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

No comments:

Post a Comment