পর্যায়ক্রমে আল-কায়েদার শাখা স্থাপন করা হচ্ছে। জাওয়াহিরির ভিডিওবার্তায় উদ্বিগ্ন ভারতের সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জরুরি বৈঠক করেছেন। দেশে জারি করা হয়েছে ‘জরুরি সতর্কতা’। তবে আল-কায়েদা নেতার শাখা স্থাপনের ঘোষণায় উদ্বিগ্ন না হলেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সতর্ক থাকছে বাংলাদেশ। গতকাল সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, আল-কায়েদার বিষয়ে সব সময়ের মতোই সতর্ক আছে বাংলাদেশ। জাওয়াহিরির নতুন এ ঘোষণার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে গোয়েন্দারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, নতুন সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে আল-কায়েদার বিরোধপূর্ণ অবস্থানের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার শাখা স্থাপনের ঘোষণাটি এসেছে। তবে বাংলাদেশে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী আল-কায়েদা। দেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদার ভাবাদর্শের মিলও আছে। সম্প্রতি আলোচিত আনারুল্লাহ টিম, আনসারুল্লাহ সুন্নাহ, জামাতুল মুসলিমীন, জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদার আদর্শগত মিল খুঁজে পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসব সংগঠনকে আল-কায়েদা সমন্বিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। এর আগেও এক অডিওবার্তায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জাওয়াহিরি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বিষয়ে ভারত ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। জাওয়াহিরি ৫৫ মিনিটের নতুন ভিডিওবার্তায় আরবি ও উর্দু ভাষার মিশ্রণে বলেন, “এই পদক্ষেপ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইনের প্রসার ও জিহাদের পতাকা সমুন্নত রাখবে। এটা বাংলাদেশ, মিয়ানমার, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য ‘আনন্দের খবর’।” তিনি উল্লেখ করেন, আল-কায়েদার নতুন এ শাখা অন্যায় ও অবিচার থেকে মুসলমানদের উদ্ধার করবে। অঞ্চলটির (উপমহাদেশ) মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বিভক্তকারী কৃত্রিম সীমান্ত নবগঠিত বাহিনী ভেঙে দেবে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরাও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছি। জঙ্গি বিষয়ে আমরা সব সময়ই সতর্ক আছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভিডিওটি কোথা থেকে কিভাবে এলো তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এরপর দুই-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব।’ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর আগের অডিও বার্তায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকলেও এবার জাওয়াহিরি ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখানে নতুন শাখা করার পেছনে দুটি দিক দেখি- এক. এখানে আইএসের চেয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করা; ২. তুলনামূলক শান্ত এ অঞ্চলকে অশান্ত করে তোলা। তবে তিন দেশের সরকারই জঙ্গিবিরোধী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে কাজও করছে। তবে মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরএসওর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আস্থার ঘাটতি আছে। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ভোগাতে পারে।’ জাওয়াহিরির নতুন শাখা করার ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য হুমকি কি না জানতে চাইলে আব্দুর রশীদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। অনেক জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশের পর তাদের মধ্যে ভাবাদর্শের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। এটাই ভয় যে এসব সংগঠনকে সমন্বিত করে তারা কিছু করতে পারে। জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে তারা সফল হতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের এই ভেবে চুপচাপ বসে থাকার সুযোগ নেই।’ এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরো বলেন, ‘ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যেই কেবল জঙ্গিবাদ এখন সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বা সারদা গ্রুপের সঙ্গে উগ্রবাদীদের যোগাযোগ ভূ-রাজনীতির বিষয়টি প্রকাশ করে। অর্থকে জঙ্গিবাদের অক্সিজেন বলা হয়। অর্থসংস্থানের খাতকে অচল করে দিলে এখানে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিতে পারবে না।’ আব্দুর রশিদের মতে, আইএসকে প্রতিহত করতেই আল-কায়েদার শাখা করার ঘোষণা এসেছে। তবে এ ঘটনা আমাদের জন্য কতটুকু হুমকি তা খতিয়ে দেখতে হবে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) জিয়াউল আহসান বলেন, ‘এই ভিডিও বার্তাটি আয়মান আল জাওয়াহিরির কি না, তা আমরা নিশ্চিত নই। এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আল-কায়েদার প্রসঙ্গে আমরা সতর্ক আছি, তবে উদ্বিগ্ন নই। বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। এখানে দেশীয় বা অন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনেরই তৎপরতা চালানোর সুযোগ নেই।’ দেশীয় জঙ্গিদের সঙ্গে মতাদর্শের মিল এবং সহায়তার প্রসঙ্গ তুললে কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘আমাদের অভিযানে জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীরসহ জঙ্গি সংগঠনগুলো কোণঠাসা আছে। আল-কায়েদার মতো ভঙ্গুর সংগঠন এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে কিছু করতে পারবে না। আল-কায়েদার নতুন করে আলোচনায় আসার জন্য হয়তো ওই বার্তা ছাড়ানো হয়েছে।’ জিয়াউল আহসান যোগ করেন, ‘এর আগে জওয়াহিরির অডিও বার্তা প্রচারের অভিযোগে আমরা এক যুবককে আটক করি। এ ঘটনার তদন্তে মতাদর্শের মিল থাকা ওই যুবকের নিজস্ব তৎপরতা ছাড়া সাংগঠনিক কোনো তথ্য মেলেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ এভাবে অপতৎপরতা চালালে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে রয়টার্স, এএফপি, জি মিডিয়া ব্যুরোসহ কয়েকটি বার্তা সংস্থা আল-কায়েদা নেতার ঘোষণা-পরবর্তী উদ্বেগের খবর প্রকাশ করেছে। গতকাল সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভার পাশাপাশি ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, আল-কায়েদার এ ঘোষণা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ আল-কায়েদা আইএসের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। তাই আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গিবাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখা আল-কায়েদার জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা নতুন নতুন এলাকায় শাখা খুলে তাদের আওতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। ভিডিও বার্তায় জাওয়াহিরি জানিয়েছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের মিয়ানমার, বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং কাশ্মীরের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুসলমানদের ওপর অবিচার ও নিপীড়ন থেকে উদ্ধার করতে এসব এলাকায় আল-কায়েদার শাখা খোলা হবে। ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ভিডিও বার্তায় উল্লিখিত বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং মিয়ানমার এলাকা সাম্প্রদায়িকভাবে খুবই স্পর্শকাতর। আর এ এলাকার প্রগতিবাদী যুবকদের ওপর আক্রমণ করতেই আল-কায়েদা এ নকশা করেছে। তা ছাড়া যাদের আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে, তারাও আল-কায়েদার লক্ষ্য। ২০১৩ সালে আইএসের জন্ম। ৫০টি দেশের প্রায় ২০ হাজার যুবক এই সংগঠনে আছে। আইএসপ্রধান আবু বকর আল বাগদাদি নিজেকে মুসলমানদের একজন ‘খলিফা’ হিসেবে দাবি করেন। ২০১৩ সালে সিরিয়ায় আল-কায়েদার বিস্তার নিয়ে জাওয়াহিরির সঙ্গে ভিন্ন মত থাকায় একদল যুবক আল-কায়েদা থেকে বের হয়ে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে। জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জিহাদের ডাক সম্পর্কিত জাওয়াহিরির এক অডিও বার্তা প্রচারের অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মাঝিপাড়া এলাকা থেকে রাসেল বিন সাত্তার খান নামে এক যুবককে আটক করে র্যাব। ‘বাংলাদেশ : ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স’ শিরোনামের ২৯ মিনিটের ওই বার্তায় বাংলাদেশে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে জাওয়াহিরির ইন্তিফাদার হুমকির কথা ছিল। এতে গত বছরের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের চিত্র দেখানো হয়। আর মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচার হচ্ছে যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে, তার কাজ নিয়ে জাওয়াহিরি ক্ষোভ জানান। তবে তাঁর বক্তব্যে সরাসরি হেফাজত বা জামায়াতের কথা ছিল না। অনলাইন নিরাপত্তাবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনসাইট বাংলাদেশের পরিচালক তানভীর হাসান জোহা কালের কণ্ঠকে বলেন, আল-কায়েদার সহযোগী ‘আল আস-সাহাব মিডিয়ার’ তৈরি করা ২৮ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তাটি আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে আপলোড করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসিতে অস্টিন পি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক তাজ হাশমি দাবি করেন, গত ১৪ জানুয়ারি প্রচারিত ওই বার্তাটি ছিল জাওয়াহিরিরই। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি উদার, সহনশীল মুসলিম দেশ, যেখানে আল-কায়েদার মতো উগ্রবাদীদের জায়গা নেই।’ বাংলাদেশের পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দারা তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত হলেও এর সঙ্গে দেশের আর কেউ জড়িত ছিল কি না তা বের করতে পারেনি। সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে জাওয়াহিরির ওই ‘অডিও টেপ’ প্রকাশ করা হয়। ১৪ জানুয়ারি জিহাদোলজি ডটনেট নামে একটি ওয়েবসাইটে এটি ছড়ায় বলে জানায় গোয়েন্দা সূত্র। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার যুবক রাসেল জানান, ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ’ নামের একটি ওয়েবসাইটে জাওয়াহিরির অডিও ক্লিপটি পেয়ে তিনি বিভিন্ন সাইট ও ফেসবুকে সেটি ‘পোস্ট ও শেয়ার’ করেন। বিদেশে অবস্থানকারী অন্তত ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা দাবি করেন রাসেল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হলেও পরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাঁরা সবাই আল-কায়েদার অনুসারী। গত বছরের ৫ মে ‘হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও আলেম-ওলামাদের মৃত্যু’ নিয়ে তাঁরা প্রতিক্রিয়াশীল। সূত্র জানায়, অডিও বার্তাটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ নিয়ে জাওয়াহিরির আগ্রহের বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দারা। জাতীয় সংসদে টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে আল-কায়েদা নেতারা দেশে একাধিকবার এসেছেন বলে দাবি করা হয়। গোয়েন্দারাও ২০০১ সালে জাওয়াহিরির চট্টগ্রাম সফর করার তথ্য পায়। তবে এখন পর্যন্ত এ তথ্যের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ মেলেনি। গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, জেএমবির সাবেক আমির সাইদুর রহমান ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলোর অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়ে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা কখনো জাওয়াহিরির বাংলাদেশ সফর নিয়ে কোনো তথ্য দেননি। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আদর্শগত মিল আছে আল-কায়েদার সঙ্গে। নতুন করে আলোচনায় আসার পর আল-কায়েদার নেটওয়ার্ক নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর কার্যালয় থেকে জব্দ করা নথিপত্র থেকে আল-কায়েদার নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। গত ২৯ জুলাই জেএমবির সাবেক তিন কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, তারা এখন জামাতুল মুসলেমিনের সদস্য। দুটি সংগঠনই আল-কায়েদার আদর্শের অনুসারী। অতিসম্প্রতি আনসারুল্লাহ সুন্নাহ নামে একটি সংগঠনের অস্তিত্ব জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। এ সংগঠনটিও আল-কায়েদার আদর্শে বিশ্বাসী। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবীতে ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করে আলোচনায় আসা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি তরুণ দল গ্রেপ্তারের পর জানায়, দেশে শতাধিক টিম আছে, যারা ‘ইসলাম কায়েমের’ জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে প্রস্তুত। আফগান-ফেরত শতাধিক জঙ্গিও আল-কায়েদার আদর্শের অনুসারী বলে জানায় গোয়েন্দা সূত্র।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Friday, September 5, 2014
বাংলাদেশের জন্য বিপৎসংকেত!:কালের কন্ঠ
পর্যায়ক্রমে আল-কায়েদার শাখা স্থাপন করা হচ্ছে। জাওয়াহিরির ভিডিওবার্তায় উদ্বিগ্ন ভারতের সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জরুরি বৈঠক করেছেন। দেশে জারি করা হয়েছে ‘জরুরি সতর্কতা’। তবে আল-কায়েদা নেতার শাখা স্থাপনের ঘোষণায় উদ্বিগ্ন না হলেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সতর্ক থাকছে বাংলাদেশ। গতকাল সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, আল-কায়েদার বিষয়ে সব সময়ের মতোই সতর্ক আছে বাংলাদেশ। জাওয়াহিরির নতুন এ ঘোষণার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে গোয়েন্দারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, নতুন সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে আল-কায়েদার বিরোধপূর্ণ অবস্থানের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার শাখা স্থাপনের ঘোষণাটি এসেছে। তবে বাংলাদেশে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী আল-কায়েদা। দেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদার ভাবাদর্শের মিলও আছে। সম্প্রতি আলোচিত আনারুল্লাহ টিম, আনসারুল্লাহ সুন্নাহ, জামাতুল মুসলিমীন, জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদার আদর্শগত মিল খুঁজে পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসব সংগঠনকে আল-কায়েদা সমন্বিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। এর আগেও এক অডিওবার্তায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জাওয়াহিরি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বিষয়ে ভারত ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। জাওয়াহিরি ৫৫ মিনিটের নতুন ভিডিওবার্তায় আরবি ও উর্দু ভাষার মিশ্রণে বলেন, “এই পদক্ষেপ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইনের প্রসার ও জিহাদের পতাকা সমুন্নত রাখবে। এটা বাংলাদেশ, মিয়ানমার, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য ‘আনন্দের খবর’।” তিনি উল্লেখ করেন, আল-কায়েদার নতুন এ শাখা অন্যায় ও অবিচার থেকে মুসলমানদের উদ্ধার করবে। অঞ্চলটির (উপমহাদেশ) মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বিভক্তকারী কৃত্রিম সীমান্ত নবগঠিত বাহিনী ভেঙে দেবে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরাও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছি। জঙ্গি বিষয়ে আমরা সব সময়ই সতর্ক আছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভিডিওটি কোথা থেকে কিভাবে এলো তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এরপর দুই-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব।’ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর আগের অডিও বার্তায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকলেও এবার জাওয়াহিরি ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখানে নতুন শাখা করার পেছনে দুটি দিক দেখি- এক. এখানে আইএসের চেয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করা; ২. তুলনামূলক শান্ত এ অঞ্চলকে অশান্ত করে তোলা। তবে তিন দেশের সরকারই জঙ্গিবিরোধী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে কাজও করছে। তবে মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরএসওর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আস্থার ঘাটতি আছে। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ভোগাতে পারে।’ জাওয়াহিরির নতুন শাখা করার ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য হুমকি কি না জানতে চাইলে আব্দুর রশীদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। অনেক জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশের পর তাদের মধ্যে ভাবাদর্শের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। এটাই ভয় যে এসব সংগঠনকে সমন্বিত করে তারা কিছু করতে পারে। জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে তারা সফল হতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের এই ভেবে চুপচাপ বসে থাকার সুযোগ নেই।’ এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরো বলেন, ‘ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যেই কেবল জঙ্গিবাদ এখন সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বা সারদা গ্রুপের সঙ্গে উগ্রবাদীদের যোগাযোগ ভূ-রাজনীতির বিষয়টি প্রকাশ করে। অর্থকে জঙ্গিবাদের অক্সিজেন বলা হয়। অর্থসংস্থানের খাতকে অচল করে দিলে এখানে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিতে পারবে না।’ আব্দুর রশিদের মতে, আইএসকে প্রতিহত করতেই আল-কায়েদার শাখা করার ঘোষণা এসেছে। তবে এ ঘটনা আমাদের জন্য কতটুকু হুমকি তা খতিয়ে দেখতে হবে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) জিয়াউল আহসান বলেন, ‘এই ভিডিও বার্তাটি আয়মান আল জাওয়াহিরির কি না, তা আমরা নিশ্চিত নই। এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আল-কায়েদার প্রসঙ্গে আমরা সতর্ক আছি, তবে উদ্বিগ্ন নই। বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। এখানে দেশীয় বা অন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনেরই তৎপরতা চালানোর সুযোগ নেই।’ দেশীয় জঙ্গিদের সঙ্গে মতাদর্শের মিল এবং সহায়তার প্রসঙ্গ তুললে কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘আমাদের অভিযানে জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীরসহ জঙ্গি সংগঠনগুলো কোণঠাসা আছে। আল-কায়েদার মতো ভঙ্গুর সংগঠন এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে কিছু করতে পারবে না। আল-কায়েদার নতুন করে আলোচনায় আসার জন্য হয়তো ওই বার্তা ছাড়ানো হয়েছে।’ জিয়াউল আহসান যোগ করেন, ‘এর আগে জওয়াহিরির অডিও বার্তা প্রচারের অভিযোগে আমরা এক যুবককে আটক করি। এ ঘটনার তদন্তে মতাদর্শের মিল থাকা ওই যুবকের নিজস্ব তৎপরতা ছাড়া সাংগঠনিক কোনো তথ্য মেলেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ এভাবে অপতৎপরতা চালালে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে রয়টার্স, এএফপি, জি মিডিয়া ব্যুরোসহ কয়েকটি বার্তা সংস্থা আল-কায়েদা নেতার ঘোষণা-পরবর্তী উদ্বেগের খবর প্রকাশ করেছে। গতকাল সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভার পাশাপাশি ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, আল-কায়েদার এ ঘোষণা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ আল-কায়েদা আইএসের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। তাই আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গিবাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখা আল-কায়েদার জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা নতুন নতুন এলাকায় শাখা খুলে তাদের আওতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। ভিডিও বার্তায় জাওয়াহিরি জানিয়েছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের মিয়ানমার, বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং কাশ্মীরের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুসলমানদের ওপর অবিচার ও নিপীড়ন থেকে উদ্ধার করতে এসব এলাকায় আল-কায়েদার শাখা খোলা হবে। ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ভিডিও বার্তায় উল্লিখিত বাংলাদেশ, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং মিয়ানমার এলাকা সাম্প্রদায়িকভাবে খুবই স্পর্শকাতর। আর এ এলাকার প্রগতিবাদী যুবকদের ওপর আক্রমণ করতেই আল-কায়েদা এ নকশা করেছে। তা ছাড়া যাদের আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে, তারাও আল-কায়েদার লক্ষ্য। ২০১৩ সালে আইএসের জন্ম। ৫০টি দেশের প্রায় ২০ হাজার যুবক এই সংগঠনে আছে। আইএসপ্রধান আবু বকর আল বাগদাদি নিজেকে মুসলমানদের একজন ‘খলিফা’ হিসেবে দাবি করেন। ২০১৩ সালে সিরিয়ায় আল-কায়েদার বিস্তার নিয়ে জাওয়াহিরির সঙ্গে ভিন্ন মত থাকায় একদল যুবক আল-কায়েদা থেকে বের হয়ে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে। জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জিহাদের ডাক সম্পর্কিত জাওয়াহিরির এক অডিও বার্তা প্রচারের অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মাঝিপাড়া এলাকা থেকে রাসেল বিন সাত্তার খান নামে এক যুবককে আটক করে র্যাব। ‘বাংলাদেশ : ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স’ শিরোনামের ২৯ মিনিটের ওই বার্তায় বাংলাদেশে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে জাওয়াহিরির ইন্তিফাদার হুমকির কথা ছিল। এতে গত বছরের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের চিত্র দেখানো হয়। আর মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচার হচ্ছে যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে, তার কাজ নিয়ে জাওয়াহিরি ক্ষোভ জানান। তবে তাঁর বক্তব্যে সরাসরি হেফাজত বা জামায়াতের কথা ছিল না। অনলাইন নিরাপত্তাবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনসাইট বাংলাদেশের পরিচালক তানভীর হাসান জোহা কালের কণ্ঠকে বলেন, আল-কায়েদার সহযোগী ‘আল আস-সাহাব মিডিয়ার’ তৈরি করা ২৮ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তাটি আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে আপলোড করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসিতে অস্টিন পি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক তাজ হাশমি দাবি করেন, গত ১৪ জানুয়ারি প্রচারিত ওই বার্তাটি ছিল জাওয়াহিরিরই। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি উদার, সহনশীল মুসলিম দেশ, যেখানে আল-কায়েদার মতো উগ্রবাদীদের জায়গা নেই।’ বাংলাদেশের পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দারা তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত হলেও এর সঙ্গে দেশের আর কেউ জড়িত ছিল কি না তা বের করতে পারেনি। সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে জাওয়াহিরির ওই ‘অডিও টেপ’ প্রকাশ করা হয়। ১৪ জানুয়ারি জিহাদোলজি ডটনেট নামে একটি ওয়েবসাইটে এটি ছড়ায় বলে জানায় গোয়েন্দা সূত্র। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার যুবক রাসেল জানান, ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ’ নামের একটি ওয়েবসাইটে জাওয়াহিরির অডিও ক্লিপটি পেয়ে তিনি বিভিন্ন সাইট ও ফেসবুকে সেটি ‘পোস্ট ও শেয়ার’ করেন। বিদেশে অবস্থানকারী অন্তত ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা দাবি করেন রাসেল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হলেও পরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাঁরা সবাই আল-কায়েদার অনুসারী। গত বছরের ৫ মে ‘হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও আলেম-ওলামাদের মৃত্যু’ নিয়ে তাঁরা প্রতিক্রিয়াশীল। সূত্র জানায়, অডিও বার্তাটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ নিয়ে জাওয়াহিরির আগ্রহের বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দারা। জাতীয় সংসদে টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে আল-কায়েদা নেতারা দেশে একাধিকবার এসেছেন বলে দাবি করা হয়। গোয়েন্দারাও ২০০১ সালে জাওয়াহিরির চট্টগ্রাম সফর করার তথ্য পায়। তবে এখন পর্যন্ত এ তথ্যের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ মেলেনি। গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, জেএমবির সাবেক আমির সাইদুর রহমান ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলোর অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়ে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা কখনো জাওয়াহিরির বাংলাদেশ সফর নিয়ে কোনো তথ্য দেননি। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আদর্শগত মিল আছে আল-কায়েদার সঙ্গে। নতুন করে আলোচনায় আসার পর আল-কায়েদার নেটওয়ার্ক নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর কার্যালয় থেকে জব্দ করা নথিপত্র থেকে আল-কায়েদার নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। গত ২৯ জুলাই জেএমবির সাবেক তিন কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, তারা এখন জামাতুল মুসলেমিনের সদস্য। দুটি সংগঠনই আল-কায়েদার আদর্শের অনুসারী। অতিসম্প্রতি আনসারুল্লাহ সুন্নাহ নামে একটি সংগঠনের অস্তিত্ব জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। এ সংগঠনটিও আল-কায়েদার আদর্শে বিশ্বাসী। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবীতে ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করে আলোচনায় আসা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি তরুণ দল গ্রেপ্তারের পর জানায়, দেশে শতাধিক টিম আছে, যারা ‘ইসলাম কায়েমের’ জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে প্রস্তুত। আফগান-ফেরত শতাধিক জঙ্গিও আল-কায়েদার আদর্শের অনুসারী বলে জানায় গোয়েন্দা সূত্র।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment