ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং সংসদকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ঈদের পরে ঢাকায় নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং এ আন্দোলনে সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে। এ আন্দোলনের জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যদু মধু আর চোর-চোট্টা দিয়ে কাজ হবে না। দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে
বিএনপির সাথেই সরকারকে আলোচনা করতে হবে। কারণ বিএনপি হচ্ছে এ দেশের জনগণের সবচেয়ে প্রিয় দল। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ আমাদের সাথে আছেন। সরকারের বিরুদ্ধে জুলুম, নিপীড়ন, খুন, গুম, দুর্নীতি, বিচারবিভাগ নিয়ন্ত্রণ, বাকস্বাধীনতা হরণ ও লুটের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগকে ছেঁচড়া ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা দেন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার বিকেলে জামালপুর জেলা স্কুল মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন এবং সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল, গুম-খুন-হত্যা বন্ধের দাবিতে এই জনসভার আয়োজন করে জামালপুর জেলা ২০ দলীয় জোট। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার এটি চতুর্থ জনসভা। সর্বশেষ গত ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক জনসভায় খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখেন। এর আগে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে জামালপুরের সিংহজানি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বক্তব্য রেখেছিলেন খালেদা জিয়া। গতকালের সমাবেশে জামালপুর সদর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ীÑ এই সাতটি উপজেলা থেকে বাস-ট্রাক, ইঞ্জিনচালিত নৌযান, স্থানীয় ভটভটিতে চড়ে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জামালপুর ছাড়াও শেরপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এই জনসভায় যোগ দেন। তাদের অনেকের হাতে ধানের শীষ প্রতীক, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় বড় প্রতিকৃতি ছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের হাতে ছিল জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবি সংবলিত ব্যানার-ফ্যাস্টুন। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ছবিও মাঠের চার পাশে টাঙানো হয়। অনেক মিছিলে ব্যান্ড দলের উপস্থিতি নেতাকর্মীদের উৎসাহ জোগায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই জেলা স্কুল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলেও স্টেডিয়াম, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক, বনপাড়া-পাথালিয়া, দেওয়ানপাড়া এলাকার প্রায় দুই কিলোমটারজুড়ে বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া মাঠের পূর্ব প্রান্তে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়েও মানুষের ঢল নামে। মিছিলের কারণে দুপুর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জনসভা উপলক্ষে শতাধিক মাইক স্থাপন করা হয়। শহরজুড়ে ছিল স্বাগত তোরণ ও ডিজিটাল ব্যানার। জেলা স্কুল মাঠের চার পাশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল ব্যাপক। বেলা ২টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৪টায় প্রধান অতিথি বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে এসে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। জামালপুরের এই জনসভায় যোগ দিতে খালেদা জিয়া শুক্রবার ঢাকা থেকে সড়ক পথে টাঙ্গাইলে এসে যমুনা রিসোর্টে রাত যাপনের পর গতকাল দুপুরে জামালপুর পৌঁছান। বিএনপি জেলা সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীমের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আবদুল হালিম, এম এ কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুুস সালাম, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সিরাজুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সুলতান মাহমুদ বাবু, নিলুফার চৌধুরী মনি, রীতা খানম, মহিলা দলের নূরী আরা সাফা, যুবদলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, ছাত্রদলের আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে শাহ ওয়ারেশ আলী মামুন, তাপস পাঠান, আমজাদ হোসেন মল্লিক, কাজী মশিউর রহমান, সাইদুর রহমান খোকন, ফাইজুল ইসলাম, দিদার পাশা, আমজাদ হোসেন, আবদুস সালাম, শহীদুল হক খান দুলাল, আবদুল জব্বার মণ্ডল বাবুল, জয়নাল আবেদিন সরকার, সজীব খান প্রমুখ। স্থানীয় জামায়াতের মাওলানা আ খ ম নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, মির্জা মাজেদুল হক, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ আলী, বিজেপির লুৎফর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ড. অলি আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। খালেদা জিয়া জামালপুরের কৃতী সন্তান, বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম আবদুস সালাম তালুকদারের স্মৃতিচারণ করে বলেন, এ অঞ্চলের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছিলেন তিনি। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। ৯৫ ভাগ লোক ভোট দেননি : বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন? উপস্থিত সবাই হাত নেড়ে বলেনÑ না। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, সেই দিন ভোটকেন্দ্রে মানুষ যায়নি। কুকুর গিয়েছিল। ৯৫ শতাংশ লোক ভোট দেননি। এমনকি আওয়ামী লীগের লোকেরাও ভোটকেন্দ্রে যাননি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ এবং সংসদও অবৈধ। কারণ ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত। এ সংসদের সব আইন অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। বিএনপি বা দেশের জনগণ বর্তমান সরকারকে সরকার বলে না বলে দাবি করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছি বলে শেখ হাসিনা বিদেশে গিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, এ জন্য না-কি বিএনপিকে মাশুল দিতে হবে। কাফফারা দিতে হবে; কিন্তু আমি বলব ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা না গিয়ে প্রমাণ করেছি, আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে ছিলাম। দেশের ৯৫ শতাংশ লোক আমাদের সাথে আছে। বিএনপিকে নয়, আওয়ামী লীগ ও হাসিনাকে কাফফারা দিতে হবে। র্যাবের বিলুপ্তি দাবি : আইনশৃঙ্খলা ও র্যাবের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা মোটেই ভালো নয়। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। সব কিছুতে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী, গুণ্ডা ও ছিনতাইকারীর দল। এ জন্যই দেশের আজ দুরবস্থা। তিনি বলেন, র্যাব আমরা গঠন করেছিলাম। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু আমরা র্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করিনি। আমি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় র্যাবের কারো সাথে কথাও বলিনি। কিন্তু র্যাব এখন খুনি বাহিনী। তারা টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করছে। নারায়ণগঞ্জে ১১ জনকে খুন করেছে। দেশে আজ কেউ নিরাপদ নন। আমরা র্যাবের বিলুপ্তি দাবি করছি। খালেদা জিয়া বলেন, র্যাব এখন পর্যন্ত বিএনপির ৩১০ জনকে খুন এবং ৫৬ জনকে গুম করেছে। এ ঘটনার সাথে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার লোকও জড়িত। আমি পুলিশকে বলব, আপনারা জনগণের সেবক। অবৈধ সরকারের কোনো আদেশ মানবেন না। না হলে আপনাদেরও একদিন জনতার আদালতে জবাবদিহি করতে হবে। র্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে খুন-গুমের ঘটনায় র্যাবের অতিরিক্ত ডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তার চাকরিতে থাকার কোনো অধিকার নেই। অভিশংসন আইন বাতিল দাবি : সরকার ক্ষমতা স্থায়ী করতে একের পর আইন করছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারকদের অভিশংসন আইন পাস করেছে। মূলত সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায় শেখ হাসিনা। যেন সরকারের জুলুম-নিপীড়নের খবর প্রকাশ না হয়। এ আইন হলে আমাদের টিভিগুলো চলবে না। টকশোতে কথা বলতে দিচ্ছে না। সত্য কথা বলেন, এমন ব্যক্তিদের টকশোতে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ১৯৭১ সালের পরের বাকশাল সরকারও একই অবস্থা করেছিল। সেই সময় অনেক সাংবাদিক বেকার হয়েছিলেন। আজো একই অবস্থা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। অভিশংসন আইন বাতিল দাবি করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধ সরকার অবৈধ সংসদের কাছে দেশের সম্মানিত বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। বিচার বিভাগ নামে স্বাধীন হলেও বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার আমার নামে পাঁচটি এবং আওয়ামী লীগ নেত্রীর নামে ১৫টিসহ অনেকের নামেই মামলা দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই তাদের সবার মামলা প্রত্যাহার করেছে। অথচ আমাদের নামের মামলাগুলো চালু রেখেছে। শেখ মুজিবও বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এখন এই আইন করেছে নিজের ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে। কিন্তু এ আইন আমরা তথা দেশের জনগণ মানব না, মানব না, মানব না। সরকারের মানসম্মান নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, অন্যায়-অবিচার বাড়লে আল্লাহও বাড়তে দেন। আল্লাহ এখনো ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন টান দেবেন তখন ডানে-বামে তাকানোর সুযোগ পাবেন না। শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার দেখবেন। দুই খুনি এক হয়েছে : খালেদা জিয়া আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষ খুন করছে। বর্তমানেও খুনিরা এক হয়ে মানুষ খুন করছে। একসময় আওয়ামী লীগ দাবি করত তাদের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে জাসদ। আর জাসদ দাবি করত তাদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। আজকে দুই খুনি একত্র হয়ে দেশের প্রতিবাদী যুবকদের ধরে নিয়ে হত্যা করছে; কিন্তু আমরা সেটি হতে দিতে পারি না। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমলে দুর্নীতি বেশি : আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে লাখ লাখ টাকা লুট করে বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়েছে। তাদের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নিজস্ব অর্থায়নে করার কথা বলছে; কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেই। সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদককে হাতের মুঠোয় নিয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সব প্রতিষ্ঠান হাসিনার পকেটে। চাকরিতে, প্রশাসনের সর্বত্র দুর্নীতি। এ সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে দুদককে লেলিয়ে দিয়েছে, এই দুদক চলতে পারে না। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার ডেসটিনি থেকে ৩৮ হাজার কোটি, হলমার্ক গ্রুপের মাধ্যমে তিন হাজার ৫০০ কোটি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এক হাজার ২০০ কোটি, বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি, রূপালী ব্যাংক থেকে এক হাজার ২০০ কোটি, কৃষিব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি এবং জনতা ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা লুট করেছে। এভাবে সরকারি ব্যাংক চলতে পারে না। সব কিছুর হিসাব এক দিন দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। দেড় বছরের মধ্যে ২১১টি গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি নেত্রী। বিদ্যুতের মিথ্যাচার : বিদ্যুতের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। এখন ফের তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলছে। সরকার বলছে ১০ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। প্রকৃতপক্ষে সরকার ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। দেশের কোথাও বিদ্যুৎ ঠিকমতো নেই। স্থানীয় জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে দেশ থাকবে না। তারা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল ১০ টাকায় চাল, বিনামূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু দেয়নি। সারের দাম বহু গুণ বাড়িয়েছে। কৃষক ফসলের দাম পান না। তাই হাসিনাকে বিদায় করতে হবে। এ জন্য আন্দোলন করতে হবে। আপনারা (দেশবাসী) অতীতেও আন্দোলন করেছেন। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন সরকার। এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়। কিন্তু গোটা বিশ্ববাসী বলেছে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আওয়ামী লীগ ছেঁচড়া ও সন্ত্রাসীদের দল। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ চালাবে। কোনো আপত্তি থাকবে না। আওয়ামী লীগই চোর-চোট্টাদের সাথে আঁতাত করে ১৯৮৬ সালে এরশাদের সাথে নির্বাচন করেছিল। ফলে তারা স্বঘোষিত বেঈমান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। তারা বেশি দিন টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগও পারবে না। আমি বলব বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। বিএনপির সাথেই সরকারকে আলোচনা করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া আরো বলেন, শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তিনি তাজউদ্দিনের কথা শোনেননি। জিয়াউর রহমান ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। জিয়াকে রাজাকার ও আইএসআইয়ের দালাল বলে কোনো লাভ নেই। আওয়ামী লীগের ঘরেই রাজাকার। তারাই দালাল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদধারী সচিবকে নিয়ে আমেরিকা সফরে গেছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা মিথ্যা বলায় পারদর্শী। সরকার জোট ভাঙতে চাইছে : জোট ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সরকার জোট ভাঙতে চাইছে। এগুলো কার কাজ আমরা জানি। সরকারি অ্যাজেন্সিগুলোকে বলব আপনারা বিরত থাকুন। না হলে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বিএনপি নেত্রী বলেন, বিএনপি জঙ্গিদের সাথে জড়িত নয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। যারা ইসলামের নামে অশান্তি ও সন্ত্রাস করে তারাই জঙ্গি। আওয়ামী লীগের সাথে জঙ্গি আছে। শায়খ আব্দুর রহমান ছিল জামালপুরের মির্জা আজমের বোন জামাই। আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত : গত বছরের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের লোকদের হাতে অস্ত্র ছিল না। তাদের হাতে ছিল তসবিহ, কুরআন শরিফ আর জায়নামাজ। রাতের আঁধারে রাস্তার বাতি নিভিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়। আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত আর রক্ত। খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এ জন্য বলছে আগে উন্নয়ন তারপর গণতন্ত্র। মূলত প্রকল্পের নামে অর্থ লুট করতে এ কথা বলছে। সবশেষে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতা নয় জনঅধিকার, আইনের শাসন, শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আন্দোলন করছে। তাই বিএনপি জোটের সাথে থাকলে দেশবাসী লাভবান হবেন। এ জন্য দেশ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাতে দেশবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা অতীতেও আন্দোলন করেছেন। ঈদের পর ঢাকায় আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই আন্দোলনে অবৈধ খুনি সরকার বিদায় নেবে ও আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ও সংসদ অবৈধ। জনগণ ভোট দেয়নি। জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ করা ফরজ। এ সরকার জুলুম-নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে। নারীদেরও জেলে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াত কারো সাথে আঁতাত করেনি। করেও না। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সহকারী সেক্রেটারি কামারুজ্জামানসহ শীর্ষ নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে তিনি। সম্প্রচার নীতিমালা ও অভিশংসন বিল বাতিলের দাবি জানান। সমাবেশে এ ছাড়াও বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম ব্যারিস্টার সালাম তালুকদারের স্ত্রী মাহমুদা সালাম, কেন্দ্রীয় ও জোট নেতাদের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, মাহমুদুল হাসান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, লুৎফর রহমান খান আজাদ, গৌতম চক্রবর্তী, আবুল কালাম আজাদ, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল ওহাব আখন্দ, সাবেক এমপি নূরুল কবির শাহিন, মাহমুদুর রহমান রুবেল, শাহিন চৌধুরী, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, লেবার পার্টির মাহমুদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জনসভার পর খালেদা জিয়া সার্কিট হাউজে কিছুক্ষণ অবস্থান করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
No comments:
Post a Comment