Tuesday, October 28, 2014

জনগণই সরকারকে গণধোলাই দেবে : খালেদা জিয়া:নয়াদিগন্ত

ক্ষমতাসীন সরকারকে অবৈধ ও অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত অপকর্ম করেছে তা দেশের জনগণ জানে। মতা থেকে বিদায় নিলে আমাদের হাত দিতে হবে না, জনগণই সরকারকে গণধোলাই দেবে। অতিষ্ঠ হয়ে গেলে জনগণই বিএনপিকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করবে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি। এবার জনগণের তীব্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ একঘরে হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। গতকাল সোমবার রাত সোয়া ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ বরিশাল বিভাগের চারজন মেয়র, ১৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ১৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং খুলনা বিভাগের মেয়র ১৮ জন, চেয়ারম্যান ১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২৪ জন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, দুই বিভাগের বিএনপি নেতাদের মধ্যে মুজিবুর রহমান সারোয়ার, মশিউর রহমান, অধ্যাপক মাজেদুল হক, শফিকুল ইসলাম, সাবেরুল হক সাবু, কুষ্টিয়ার মেহেদী হাসান, মেহেরপুরের আমজাদ হোসেন, আমিরুল ইসলাম, ঝিনাইদহের মশিউর রহমান, আব্দুল মালেক, চুয়াডাঙ্গার অহিদুল ইসলাম, মাগুরার কবীর মুরাদ, বাগেরহাটের এম এ সালাম, নড়াইলের বিশ্বাস জাহাঙ্গীর ও সাতক্ষীরার রহমতুল্লাহ, টি এস আইয়ুব, বরিশাল সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল, খুলনার সিটি মেয়র মনিরুল ইসলাম মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সরকারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, নিজেদের দুর্নীতি অপকর্ম থেকে সরকারি দলের নেতারা দায়মুক্তি নিচ্ছেন। কিন্তু এতে কাজ হবে না। জনগণের সম্পদ আত্মসাতের জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে ও সাজা ভোগ করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ-ই জঙ্গিদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা। তাদের সময়-ই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। তারা জঙ্গিবাদ দমনের নামে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দেয়। তাদের (ক্ষমতাসীনদের) হাতে দেশ নিরাপদ নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ কারণেই জনগণের ওপর তাদের দায়বদ্ধতা নেই। তাদের একটি মাত্র লক্ষ্য হলোÑ মামলা, হামলা ও গুম-খুন করে মতায় টিকে থাকা। এখন ভালো মানুষ জেলে, আর সন্ত্রাসী ও ফাঁসির আসামিরা ছাড়া পাচ্ছে। ‘বিএনপির পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ কথার জবাবে খালেদা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা সভা-সমাবেশ করছি। গণসংযোগ করছি। পায়ের নিচে মাটি না থাকলে দাঁড়াতে পারতাম না। আমাদের পায়ের তলায় শক্ত মাটি আছে। ডিসি-এসপি দিয়ে মাইকিং করে মানুষকে জনসভায় আনতে হয়নি। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। আওয়ামী লীগের পায়ের তলায়-ই মাটি নেই। গত বৃহস্পতিবার নীলফামারীর সমাবেশের দিন কোনো টেলিভিশন যেন সরাসরি সম্প্রচার করতে না পারে সে জন্য একই সময় তিনিও (শেখ হাসিনা) সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ‘খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ওনার (শেখ হাসিনার) ডানে-বামে কারা। ওনাদের জিজ্ঞেস করুন। এরশাদ খুনি। ইনুরাও খুনি। এসব বই-পুস্তকে আছে। এখন বলছে তারা ভালো লোকদের (বিএনপি) সাথে সংলাপ করবে না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আগামীতে আমরা সরকার গঠন করলে আপনাদের কাজ দেবো। আপনাদের দায়িত্ব দেবো। এমনকি জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। যাতে সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়। তিনি দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনারা অতীতে আন্দোলন করেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ। আবারো আন্দোলন হবে। আপনারা প্রস্তুতি নেন। গ্রুপিং না করে যোগ্য লোকদের দিয়ে নিজেরাই নেতৃত্ব ঠিক করে নেবেন। যারা আন্দোলনে থাকবেন, তাদেরই ভবিষ্যতে দায়িত্ব দেয়া হবে। আন্দোলনে যারা সামনে থাকবেন তারাই দায়িত্ব পাবেন। গ্রুপিং না করে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। সময়মতো কর্মসূচি দিলে আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, ২০ দল আছে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল সবগুলোর নেতৃত্ব ঠিক করতে হবে। সময়মতো এমন আন্দোলন হবে, আওয়ামী লীগ এক ঘরে হয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি। নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে তারা ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ মিথ্যা কথা বলে গদি দখল করেছে। দশ মাস সময় দিয়েছি। আর নয়। আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত স্থানীয় নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। তারা ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই করেছে। সুতরাং অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সরকারকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশ আজ গণতন্ত্রহীন। দেশের গণতন্ত্র নির্বাসিত। ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের দ্বারা মানুষ পদে পদে নির্যাতিত। নিজেরা অন্যায়-অপকর্ম করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। পুরো দেশকে কারগারে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, দেশবাসী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। দেশবাসী তো নয়ই বরং বিশ্ববাসীও এ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। প্রশাসন, বিচার বিভাগে দলীয়করণ, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণাসহ সরকারের নানা অপকর্মের কড়া সমালোচনা করেন বেগম খালেদা জিয়া।

No comments:

Post a Comment