খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর গুদামে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার তৈরী পণ্য মজুদ রয়েছে। অন্য দিকে পাট কেনার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকাও ছাড় হচ্ছে না। ফলে মিলগুলো পাট কিনতে পারছে না। ইতোমধ্যে কাঁচা পাট কেনার ভরা মওসুম প্রায় শেষ। কাঁচা পাটের মজুদও আছে কম। এ জন্য উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মিলগুলো পড়েছে মহাসঙ্কটে। বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলে বিজেএমসির
নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ৯টি জুটমিলের জন্য চলতি মওসুমে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৩ কুইন্টাল পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রিসেন্ট জুটমিলের ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৮ কুইন্টাল, প্লাটিনামের ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৬৮ কুইন্টাল, খালিশপুর জুটমিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৯ কুইন্টাল, স্টার ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৬ কুইন্টাল, আলিম ৫৭ হাজার ২৯৬ কুইন্টাল, কারপেটিং ৩১ হাজার ৩৭১ কুইন্টাল, ইস্টার্ন ৭১ হাজার ৩২৭ কুইন্টাল, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) ৯৮ হাজার ৭৬৯ কুইন্টাল এবং দৌলতপুর জুটমিলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ১৮৯ কুইন্টাল। গত মওসুমে এসব মিলের কাঁচা পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ লাখ ৯১ হাজার ৪০৫ কুইন্টাল। অর্থাভাবে উক্ত লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল এবং বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের খুলনা আঞ্চলিক অফিসে গত বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিলগুলো ঘাটে দুই দিন থেকে সর্বোচ্চ ২৪ দিন চলার মতো কাঁচা পাট মজুদ আছে। মিলওয়ারী হিসাব এরকম আলিম জুটমিলের আড়াই দিন চলার ৮৭ কুইন্টাল, কার্পেটিং ২৪ দিনের ৪ হাজার ১১৫ কুইন্টাল, ক্রিসেন্ট ১২ দিনের ১১ হাজার ৪১৬ কুইন্টাল, দৌলতপুর ২০ দিনের ৪ হাজার ২৮১ কুইন্টাল, ইস্টার্ন ১০ দিনের ২ হাজার ৫৭৭ কুইন্টাল, জেজেআই ৯ দিনের ৩ হাজার ৮০ কুইন্টাল, খালিশপুর ২৩ দিনের ১৫ হাজার ৭৭৫ কুইন্টাল, প্লাটিনাম ১২ দিনের ৯ হাজার ৫৩৯ কুইন্টাল এবং স্টার ১৮ দিনের ৮ হাজার ৪৭৬ কুইন্টাল কাঁচা পাট রয়েছে। এ ছাড়া এসব মিলের এজেন্সিতেও কোনো পাট নেই। এ দিকে এসব মিলে তৈরী পণ্যের বিশাল মজুদ এখনো রয়ে গেছে। হেসিয়ান, স্যাকিং, সিবিসি এবং অল্প পরিমাণ ইয়ার্ন মিলে গত বুধবার পর্যন্ত ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। মিলওয়ারী হিসাব হচ্ছে আলিম জুটমিল ২ হাজার ২৫৫ টন, কার্পেটিং ৫৭২ টন, ক্রিসেন্ট ৮ হাজার ৭৭৬ টন, দৌলতপুর ১৬১৩ টন, ইস্টার্ন ৩ হাজার ৫০৫ টন, জেজেআই ৪৮০ টন, খালিশপুর ৯ হাজার ১৭৩ টন, প্লাটিনাম ৬ হাজার ৫৯৭ টন এবং স্টার ৪ হাজার ৬৩৪ টন। বিপুল পরিমাণ তৈরী অবিক্রীত পণ্যের কারণে স্বাভাবিকভাবে অর্থসঙ্কটে পড়েছে এসব মিল। আবার সরকার পাট কেনার জন্য ২০০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ করলেও ব্যাংকগুলোর নানা বাহানায় সে অর্থ ছাড় হচ্ছে না। এ তহবিলের মধ্যে অবশ্য সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবে ৮০ কোটি টাকা। বাকি ৪০ শতাংশ বেসরকারি পাটকলগুলো ও ২০ শতাংশ পাবে রফতানিকারকরা (শিপারস)। পাটকল সূত্র মতে তাদের অর্থ ছাড় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পত্র নাই, সহায়ক জামানত প্রয়োজন ইত্যাদি অজুহাতে টাকা ছাড়ে বিলম্ব করছে বলে মিল সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে পাট কেনার ভরা মওসুম আগস্ট-নভেম্বর সময়ের তিন-চতুর্থাংশই পার হয়ে গেছে। এ সময়ে মিলগুলো পাট কিনতে পারলে অনেক টাকা সাশ্রয় করতে পারত। কিন্তু এখন তাদের পাট ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে বর্ধিত দামে পাট কিনতে হবে। এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা এ এস এম মামুনুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগের দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আমাদের পাটজাত পণ্যেও প্রধান প্রধান ক্রেতা সিরিয়া, ইরাক, মিসর প্রভৃতি দেশের পরিস্থিতির কারণে তৈরী পণ্য মজুদ হয়ে গেছে। এখন প্রাপ্ত অর্ডারের বিপরীতে পণ্যের উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে নতুনভাবে মজুদ বাড়ছে না। এখন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পাটপণ্য ব্যবহারের ম্যান্ডেটরি অ্যাক্ট কার্যকর হলে তৈরী পণ্য বিক্রি হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। সরকারি বরাদ্দের অর্থ ছাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর কাগজপত্র জটিলতায় কোনো কোনো মিলের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে, তবে দ্রুতই তা সুরাহা হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment