Monday, October 27, 2014

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না অনেক উন্নত দেশ : বাণিজ্যমন্ত্রী:নয়াদিগন্ত

অনেক উন্নত দেশই বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে দেয়া নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, জেনেভা ও বালি সম্মেলনের শর্তানুযায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই সে শর্ত পূরণ করছে না। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দেয়া হলে বি
শ্ববাজারে বাংলাদেশ তার গুণগত ও মানসম্মত পণ্য রফতানি করতে পারবে। গতকাল রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার : সমসাময়িক বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এ কথা বলেন। আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ভুটানের বাণিজ্যমন্ত্রী লিওনপো নোরবু ওয়াংচুক, নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রী সুনীল বাহাদুর থাপা, মিয়ানমারের উপবাণিজ্য মন্ত্রী পিউইন্ট সান, আইসিসি মহাসচিব জন ড্যাবিলোভিচ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান প্রমুখ। দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার : সমসাময়িক বাস্তবতা, এশীয় প্রবৃদ্ধি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ, বালির ফলাফল এবং এশিয়ার বিনিয়োগ বিষয়ে চারটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা এ বি মো: আজিজুল ইসলাম ও ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সিডিপিডির ফ্যালো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বর আদিব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী তসলিম, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৈরী পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত। অথচ অনেক দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় এই পণ্যের নাম বাদ রেখেছে। জেনেভার বৈঠকে উন্নত দেশগুলো ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি উন্নত দেশ তা বাস্তবায়ন করছে না। তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশী পণ্য রফতানির েেত্র এই মুহূর্তে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাই বড় সমস্যা। উন্নত দেশগুলো যাতে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিনি আংটাড মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বালি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ উন্নত দেশে পণ্যের ডিউটি ফ্রি প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা। ভিয়েতনাম এ সুবিধা পেলেও বাংলাদেশ পাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের পণ্য আমেরিকার বাজারে শতভাগ ডিউটি ফ্রি প্রবেশাধিকার পায়। বাংলাদেশের পণ্য যদি এ সুবিধা পায় তাহলে পোশাক খাতে আমরাও ভিয়েতনামের মতো হতে পারব। এ েেত্র বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও বাংলাদেশের েেত্র তা রাখছে না। ডব্লিউটিওকে এ পপাতমূলক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, উন্নত দেশগুলোয় বর্তমানে প্রবৃদ্ধিতে ধীর গতি নেমে এসেছে; এটাও অর্থনীতির জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। ড. মোহাম্মদ আলী তসলিম বলেন, শুধু রাজনীতির জন্য অর্থনীতি নয়, অর্থনীতির জন্যও রাজনীতি নয়। দুটোকে ভিন্নভাবে প্রাধান্য দিয়েই বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে হবে। প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের চর্চা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হলে ব্যাংকঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই বাধা দূর করতে উন্নত দেশগুলোকে আন্তরিক হতে হবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, সঙ্কটের পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে চীন, জাপান ও ভারতের নেতৃত্বে এশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বমন্দা থেকে এশিয়াকে বের করতে দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করা ও বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

No comments:

Post a Comment