Tuesday, October 28, 2014

গুইসাপের ডিম:প্রথম অালো

এক পাশে বাগান, অন্য পাশে মাঠ। মাঠটির দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে একটি মরা নারকেলগাছ। গাছটির রং কালো। বছর দুই আগে ওটার মাথায় বজ্রপাত হয়েছিল। ওই বজ্রপাতের কারণেই হয়তো গাছটির গোড়ার বড় বড় উইয়ের ঢিবিটার উইপোকারা ঢিবি ছেড়ে গিয়েছিল। পরিত্যক্ত এখন ওটা। গেল জুলাই মাসে বাগেরহাটের ফকিরহাটে গ্রামের বাড়িতে গেছি, আমরা দু-তিনজনে ওই নারকেলগাছটির পাশেই মরা আরেকটি নারকেলগাছের ওপরে বসে আছি পা ঝুলিয়ে। সামনের
জল-থইথই মাঠটায় রোজই নাকি এ রকম সময়ে তিনটি ভেড়ারকোট হাঁস নামে, ছবি তুলতে হবে। আমরা বসা মরা নারকেল–গাছটার গোড়া থেকে আনুমানিক ২৫ হাত দূরে। একসময় দেখি, এক জোড়া বেজি আমাদের থোড়াই কেয়ার করে পেছনের বাগান থেকে বেরিয়ে এসে এগিয়ে গেল উইয়ের ঢিবিটার দিকে। দুটিতে মিলে ওই উইয়ের ঢিবিটা সামনের দুই পা দিয়ে সমানে খুঁড়ে চলেছে। বেজিদের আমি উইপোকা ও ওদের ডিম-বাচ্চা খেতে দেখেছি বটে, কিন্তু এটা তো পরিত্যক্ত ঢিবি! যথেষ্ট খোঁড়ার পরে দেখা গেল ডিম-জাতীয় কিছু একটা খাচ্ছে ওরা। কৌতূহলী আমরা উঠে পড়লাম। বেজি দুটো লেজ তুলে পালাল। ওমা! এ দেখছি অনেকগুলো সাদা সাদা ডিম, প্রায় দেশি মুরগির ডিমের মতো বড়! মাটি সরালে বেরিয়ে পড়ল অনেকগুলো ডিম। চিনতে দেরি হলো না। গুইসাপের ডিম ওগুলো। গুইসাপ যত বেশি বয়সী বা বড় হবে, ডিম তত বেশি বড় হবে। দেশি মুরগির ডিমের মতোই, আকারে একটু লম্বাটে। রং মেটে সাদা। একেকটির ওজন হয় গড়ে ১৪-২৩ গ্রাম। লম্বা গড়ে ৪-৬ সেন্টিমিটার, মাঝখানের বেড় ৭-৮ সেন্টিমিটার। ওরা, প্রকৃতি-পরিবেশের বন্ধু। কৃষকের বন্ধু—ফসলের খেতের পোকাপতঙ্গ ও ধেনো ইঁদুর খেয়ে এরা দারুণ উপকার করে। গুইসাপেরা একই সঙ্গে মাটিতে ও জলের তলা দিয়ে যেমন চলতে পারে সাবলীলভাবে একই গতিতে, তেমনি ভালো গাছেও চড়তে পারে। এরা ডিম পেড়েই ওদের কর্তব্য শেষ করে। সময়মতো ছানারা ডিম ভেঙে বেরিয়ে পড়ে, উঠে বসে আশপাশের গাছপালাগুলোতে। বোকা বোকা চাহনি আর দুষ্টু দুষ্টু চেহারার ছানাদের আনাড়িপনা খুবই উপভোগ্য। শরীরে থাকে অসংখ্য ছিটছোপ। যে প্রজাতির গুইসাপের ডিম আমরা পেলাম, সেটির ইংরেজি নাম Bengal Monitor, বৈজ্ঞানিক নাম Varanus Bengalensis। মাপ প্রায় পাঁচ-সাত ফুট।

No comments:

Post a Comment