বিজয় দিবস উদ্যাপনের আগেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণের জোর চেষ্টা চলছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শাসক দল বিজেপির বিভিন্ন সূত্রে এই তৎপরতার কথা জানা গেছে। চেষ্টা চলছে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবসের আগেই ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষে বিলটি পাস করাতে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হবে ২৪ নভেম্বর। চলবে ঠিক এক মাস। সাবেক ইউপিএ সরকারের আমলে সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণের জন্য সবকিছু ঠিক হয়ে গেল
েও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম শাখা বেঁকে বসায় বিলটি প্রায় ভেস্তে যায়। শেষ পর্যন্ত একরকম জোর করেই গত বছরের শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেস সংবিধান সংশোধন বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করে। নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা লাভ এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মনোভাব বিল পাসের বাধাগুলো দূর করতে সাহায্য করেছে। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাস করানোর পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের তোড়জোড় শুরু করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আগেই বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। মোদিও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। সীমান্ত বিলের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ আমলে যেভাবে কোমর কষে নেমেছিল, সেই অবস্থান থেকে তারা এখন অনেকটাই সরে এসেছে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। তিনি শুধু চান, এই হস্তান্তরের পর ভারতে যাঁরা চলে আসবেন, তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টি যেন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রকে কথা বলে সব চূড়ান্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘মানুষ খুশি মনে মেনে নিলে আপত্তি করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’ তবে তিস্তার পানিবণ্টনে তাঁর যে সায় নেই, সে কথা তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। মমতার এই পরিবর্তিত অবস্থানের একটা কারণ যদি হয় রাজ্যে বিভিন্নভাবে তাঁর দল ও সরকারের বিপর্যস্ত হওয়া, অন্য কারণটি তাহলে বিজেপির উত্তরোত্তর শক্তি সঞ্চয় ও প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থান। সারদা কেলেঙ্কারি, বর্ধমান বিস্ফোরণ, শিক্ষিত ও উন্নয়নকামী জনতার আস্থাহীনতার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান মমতাকে অনেকটাই নরম করে দিয়েছে। তার ওপর তিনি বুঝেছেন উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে ছিটমহল বিনিময় কতখানি কাম্য। গত নির্বাচনে কোচবিহারে ভোটের প্রচারে গিয়ে তিনি তা উপলব্ধিও করেন। বিজেপির এক সূত্র বুধবার প্রথম আলোকে জানায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গেছেন, সীমান্ত বিলকে জবরদস্তি ঠেকানোর কোনো উপায় আর নেই। তাই তিনি এখন ভালো সাজতে চাইছেন। সম্ভাব্য সাফল্যের ভাগ পেতে চাইছেন।’ মমতা গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের নতুন সরকারের মধ্যে ‘সহযোগিতার প্রতিযোগিতা’ শুরু হয়েছে। দুই দেশই এটা বুঝেছে, পারস্পরিক স্বার্থেই সহযোগিতা জরুরি। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে সম্প্রতি যে আলোচনা সভা হয়ে গেল, যেখানে দুই দেশের সাবেক কূটনীতিকেরা অংশ নিয়েছিলেন, সেখানে সবাই সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই কূটনীতিকদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, তিস্তা নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন থাকলেও সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণে অনাবশ্যক দেরি করার কারণই নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশ মনে করছে, ১৬ ডিসেম্বরের আগে সীমান্ত বিল রূপায়িত হলে বাংলাদেশের বিজয় দিবস আরও অর্থবহ হয়ে উঠবে।
No comments:
Post a Comment