ইচ্ছাপত্র জমা দেয়া হয় ২০০১ সালে। মূল্যায়নও হয় সে বছর। কিন্তু দাম পরিশোধ করা হয় এক যুগেরও বেশি সময় পরে, ২০১২ সালে। ইচ্ছাপত্র দেয়া হয় দু’টি গুদামের। রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয় চার চারটি সরকারি গুদাম। এমন অসংখ্য অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়েছে। অধুনাবিলুপ্ত জুট করপোরেশনের (বিজেসি) গুদাম বিক্রির ক্ষেত্রে। প্রাথমিকভাবে সরকারের ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭১২ টাকা ক্ষতি নিরূপণ করে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করেছে দুর্ন
ীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য কয়েক দফায় চিঠি দিলেও প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও করপোরেশনের কাছ থেকে। দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল প্রেস হাউজের ১ একর ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমিসহ চারটি গুদাম বিক্রির ক্ষেত্রে চরম আর্থিক অনিয়মের আশ্রয় নেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালাই অনুসরণ করা হয়নি। এই অপকর্মের সাথে তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিজেসির সম্পত্তি বিক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী ইচ্ছাপত্র জারির ৩০ দিনের মধ্যে উদ্ধৃত মূল্যের ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশ সমান তিন কিস্তিতে ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। বিশেষ বিবেচনায় আরো তিন মাস সময় বাড়ানোর বিষয়টিও অবশ্য উল্লেখ আছে নীতিমালার আরেক অংশে। এই নীতিমালা অনুযায়ী হস্তান্তরের সময় থেকে সর্বোচ্চ ২১০ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করতেই হবে। কিন্তু বিজেসির এই সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মোটেই মানা হয়নি। উল্টো ইচ্ছাপত্রে ছিল না এমন সম্পত্তিও ১২ বছর আগে মূল্যায়িত দামে হস্তান্তরের মাধ্যমে সরকারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয়ার উদ্দেশ্যে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র এসব গুদামে অগ্নিসংযোগও করেছিল। সোনার বাংলা জুট বেলিং নামক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া থাকা অবস্থায় ১৯৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এসব গুদাম আগুনে পুড়ে যায়। গুদামে সংরক্ষিত বহু পাট পুড়ে যাওয়ায় সোনার বাংলা জুট বেলিং সে সময় বিপুল তির সম্মুখীন হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তখন একটি মামলাও করে মালিকপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত সোনার বাংলা জুট বেলিং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে মানবিক সহযোগিতা চেয়ে একাধিক আবেদন করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। উল্টো মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সোনার বাংলার ভাড়া করা গুদামগুলো দখল করে নেয় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। দুদকের প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশের মাধমে সম্পত্তি বিক্রি করতে গিয়ে সরকারের ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭১২ টাকা ক্ষতি করেছেন। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্রসহ সংশ্লিষ্ট নথি চেয়ে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে দুদকের পক্ষ থেকে দু’টি চিঠি দেয়া হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় তৃতীয় দফা চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
No comments:
Post a Comment