জ করছে। গত সপ্তাহে পারাবর্থা ও বড়কাউ মৌজার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাজউকের ঠিকাদাররা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। তারা গাছ উপড়ে মাটি ভরাট করার কাজে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে। বড়কাউ মৌজার কৃষক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এলাকাবাসী উচ্চ আদালতের নির্দেশনা জানিয়ে কাজ বন্ধ করার আবেদন জানালেও ঠিকাদারের লোকেরা কথা শুনছে না। তারা বলছে, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে নেই। তারা ঠিকাদারের কাজ করেন। কাজ বন্ধ করতে ঠিকাদার তাদের কোনো নির্দেশ দেননি। জলাভূমি ভরাট করছে, গাছ কেটে ফেলছে। একই এলাকার আরেক কৃষক মফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, এখানকার গজারি, শাল, নানা ধরনের দামি ফলদ বাগান রক্ষা করার জন্য রাজউক অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তারা উচ্চ আদালতে অঙ্গীকার করলেও কার্যক্ষেত্রে এর কোনো প্রতিফলন নেই। পারাবর্থার বাসিন্দা সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ুন জানিয়েছেন, শত বছরের এ বন উজাড় হওয়ায় এখানকার যে জীববৈচিত্র তা ধ্বংস হয়ে গেছে। বড়কাউ ও পারাবর্থা মৌজায় শতাধিক একর গজারি বন, শাল বন ও ফলের বাগান কেটে উজাড় করে দেয়া হয়েছে। এমনকি এখানকার ৫০ থেকে ৬০ ফুট উচ্চতার লালমাটির টিলা কেটে সমান করে দিয়েছে রাজউক। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের লোকেরা এর কিছুই দেখল না তাদের জানানোর পরও। এটা খুবই দুঃখজনক। এখানকার বনভূমি উজাড় না করার জন্য পূর্বাচলে এ দুই মৌজার অধিবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলে তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ সে আবেদনে নিজের হাতে সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশে বলেছিলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতঃপূর্বেকার প্রতিশ্রুতি রক্ষাকল্পে উল্লেখিত কৃষিজমি ও বনভূমি হুকুমদখল না করার জন্য জোর সুপারিশ করা হলো।’ হুমায়ুন জানান, এখন পরিবেশ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রীর সুপারিশও কেউ মানছে বলে মনে হচ্ছে না। পারাবর্থা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় রায়েরদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: শাজাহান সরকার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ১৬৬.৪৮ একর জায়গায় বিরাজমান গজারি বন ও ফলের বাগান উজাড় না করে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই রেখে দেয়া হবে বলে রাজউক উচ্চ আদালতে যে মুচলেকা দিয়েছিল তারা তা ভঙ্গ করেছে। এই বন ভাওয়ালের গড়ের বর্ধিতাংশ। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনাঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনে যে বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে এই বনাঞ্চল তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। ঢাকার মানুষের অক্সিজেন সরবরাহে এই বনাঞ্চলের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এখানে রয়েছে অনেক বিরল প্রজাতির জীব। এখানকার নিচু ভূমিতে বর্ষাকালে অথৈ পানি থাকে। সে সময় মানুষ মাছ চাষ করে সংসার চালান। এখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেছে। তাদের কোনো কাজ নেই। রাজউকের এস্টেট ও ভূমি বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পারাবর্থা ও বড়কাউ মৌজার বিভিন্ন অংশে বনজ, ফলদ, বড়, মধ্যম ও ছোট চারা গাছ রয়েছে। এ দুই মৌজায় রাজউক গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গাছের দাম হিসেবে চেকের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ২০০৯ সালে ১৫ অক্টোবর ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬১ টাকা এবং ২২ কোটি আট লাখ ১৭ হাজার ৪৮০ টাকাসহ মোট ৩৮ কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪১ টাকা পরিশোধ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর ২১ কোটি ১৯ লাখ ২৩ হাজার ২৩৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। রাজউকের এস্টেট ও ভূমি অফিসের তথ্যমতে, গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে গাছের যে তথ্য পাঠানো হয়েছে তিন হাজার ৫০৪ পৃষ্ঠার। এস্টেট ও ভূমি অফিসের লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী এতসংখ্যক পৃষ্ঠা সংবলিত গাছের হিসাব করতে হলে তাদের এক মাস বা তারও বেশি সময় প্রয়োজন। ভলিউম করা হলে ১১টি করা যাবে। বড়কাউ মৌজার জমির মালিক ও উত্তরখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বন উজাড় হোক এলাকাবাসী তা চাচ্ছে না। এ কারণে পারাবর্থা ও বড়কাউ মৌজার বেশির ভাগ জেলা প্রশাসন থেকে গাছের দাম এমনকি জমির দামও নেয়নি। আমরা চাই এ এলাকার আদি পরিবেশ রক্ষা হোক। বনভূমি যেন কোনো অবস্থাতেই ধ্বংস করা না হয়।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Friday, November 28, 2014
সংরক্ষিত বন কাটা বন্ধ হচ্ছে না পূর্বাচলের গাজীপুর অংশে:নয়াদিগন্ত
জ করছে। গত সপ্তাহে পারাবর্থা ও বড়কাউ মৌজার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাজউকের ঠিকাদাররা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। তারা গাছ উপড়ে মাটি ভরাট করার কাজে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে। বড়কাউ মৌজার কৃষক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এলাকাবাসী উচ্চ আদালতের নির্দেশনা জানিয়ে কাজ বন্ধ করার আবেদন জানালেও ঠিকাদারের লোকেরা কথা শুনছে না। তারা বলছে, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে নেই। তারা ঠিকাদারের কাজ করেন। কাজ বন্ধ করতে ঠিকাদার তাদের কোনো নির্দেশ দেননি। জলাভূমি ভরাট করছে, গাছ কেটে ফেলছে। একই এলাকার আরেক কৃষক মফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, এখানকার গজারি, শাল, নানা ধরনের দামি ফলদ বাগান রক্ষা করার জন্য রাজউক অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তারা উচ্চ আদালতে অঙ্গীকার করলেও কার্যক্ষেত্রে এর কোনো প্রতিফলন নেই। পারাবর্থার বাসিন্দা সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ুন জানিয়েছেন, শত বছরের এ বন উজাড় হওয়ায় এখানকার যে জীববৈচিত্র তা ধ্বংস হয়ে গেছে। বড়কাউ ও পারাবর্থা মৌজায় শতাধিক একর গজারি বন, শাল বন ও ফলের বাগান কেটে উজাড় করে দেয়া হয়েছে। এমনকি এখানকার ৫০ থেকে ৬০ ফুট উচ্চতার লালমাটির টিলা কেটে সমান করে দিয়েছে রাজউক। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের লোকেরা এর কিছুই দেখল না তাদের জানানোর পরও। এটা খুবই দুঃখজনক। এখানকার বনভূমি উজাড় না করার জন্য পূর্বাচলে এ দুই মৌজার অধিবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলে তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ সে আবেদনে নিজের হাতে সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশে বলেছিলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতঃপূর্বেকার প্রতিশ্রুতি রক্ষাকল্পে উল্লেখিত কৃষিজমি ও বনভূমি হুকুমদখল না করার জন্য জোর সুপারিশ করা হলো।’ হুমায়ুন জানান, এখন পরিবেশ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রীর সুপারিশও কেউ মানছে বলে মনে হচ্ছে না। পারাবর্থা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় রায়েরদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: শাজাহান সরকার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ১৬৬.৪৮ একর জায়গায় বিরাজমান গজারি বন ও ফলের বাগান উজাড় না করে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই রেখে দেয়া হবে বলে রাজউক উচ্চ আদালতে যে মুচলেকা দিয়েছিল তারা তা ভঙ্গ করেছে। এই বন ভাওয়ালের গড়ের বর্ধিতাংশ। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনাঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনে যে বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে এই বনাঞ্চল তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। ঢাকার মানুষের অক্সিজেন সরবরাহে এই বনাঞ্চলের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এখানে রয়েছে অনেক বিরল প্রজাতির জীব। এখানকার নিচু ভূমিতে বর্ষাকালে অথৈ পানি থাকে। সে সময় মানুষ মাছ চাষ করে সংসার চালান। এখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেছে। তাদের কোনো কাজ নেই। রাজউকের এস্টেট ও ভূমি বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পারাবর্থা ও বড়কাউ মৌজার বিভিন্ন অংশে বনজ, ফলদ, বড়, মধ্যম ও ছোট চারা গাছ রয়েছে। এ দুই মৌজায় রাজউক গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গাছের দাম হিসেবে চেকের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ২০০৯ সালে ১৫ অক্টোবর ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬১ টাকা এবং ২২ কোটি আট লাখ ১৭ হাজার ৪৮০ টাকাসহ মোট ৩৮ কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪১ টাকা পরিশোধ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর ২১ কোটি ১৯ লাখ ২৩ হাজার ২৩৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। রাজউকের এস্টেট ও ভূমি অফিসের তথ্যমতে, গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে গাছের যে তথ্য পাঠানো হয়েছে তিন হাজার ৫০৪ পৃষ্ঠার। এস্টেট ও ভূমি অফিসের লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী এতসংখ্যক পৃষ্ঠা সংবলিত গাছের হিসাব করতে হলে তাদের এক মাস বা তারও বেশি সময় প্রয়োজন। ভলিউম করা হলে ১১টি করা যাবে। বড়কাউ মৌজার জমির মালিক ও উত্তরখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বন উজাড় হোক এলাকাবাসী তা চাচ্ছে না। এ কারণে পারাবর্থা ও বড়কাউ মৌজার বেশির ভাগ জেলা প্রশাসন থেকে গাছের দাম এমনকি জমির দামও নেয়নি। আমরা চাই এ এলাকার আদি পরিবেশ রক্ষা হোক। বনভূমি যেন কোনো অবস্থাতেই ধ্বংস করা না হয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment