সরকারি চাকরিজীবীদের প্রস্তাবিত নতুন বেতন ও ভাতা বাস্তবায়ন করতে বছরে প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বেতন বাবদ বাড়তি অর্থ লাগবে ১০ হাজার ৯১ কোটি এবং বিভিন্ন ভাতা বাবদ ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এ অর্থ জোগাড় করতে বিভিন্ন ধরনের কর, ভ্যাটের আওতা, ঢাকা প্রবেশ পথে টোল আদায়, স্ট্যাম্পের মূল্য ও ভূমি কর বাড়ানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় বেতন কমিশন।
ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'> অষ্টম জাতীয় বেতন কমিশনের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের বেতন ও বিভিন্ন ভাতা বাবদ বছরে ব্যয় হচ্ছে ২৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন বাবদ ১১ হাজার ২৮৪ কোটি এবং বিভিন্ন ভাতা দিতে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। কমিশনের প্রস্তাবিত বেতন ও ভাতা বাস্তবায়ন করতে হলে মোট অর্থের প্রয়োজন হবে ৪০ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন খাতে ২১ হাজার ৩৭৫ কোটি এবং বিভিন্ন ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ১৯ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।বিভিন্ন ভাতার বাড়তি ব্যয় : কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া বাবদ বছরে প্রয়োজন হবে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। বর্তমানের তুলনায় বাড়তি ব্যয় হবে ৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। চিকিৎসা ভাতায় প্রয়োজন হবে ১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। বাড়তি ব্যয় ৯৯৮ কোটি টাকা। শিক্ষা সহায়ক ভাতায় ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাড়তি ব্যয় এক হাজার ২৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যাতায়াত ভাতায় প্রয়োজন হবে ৭৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাড়তি ব্যয় ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। উৎসব ভাতায় প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা, বাড়তি ব্যয় এক হাজার ৭১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শ্রান্তি বিনোদনে প্রয়োজন হবে ৮৯০ কোটি ৬২ লাখ টাকা, বাড়তি ব্যয় ৫৭১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। টিফিন ভাতায় প্রয়োজন হবে ৩০৮ কোটি টাকা, বাড়তি ব্যয় ১৫৪ কোটি টাকা। পাহাড়ি ও দুর্গম ভাতায় প্রয়োজন হবে ১৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, বাড়তি ব্যয় প্রায় ৮৪ কোটি টাকা।বাড়তি অর্থ সংগ্রহে কমিশনের ১৩ দফা সুপারিশ : ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারণ ও ভ্যাট প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে বিপুল পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আধুনিকায়ন করতে একটি প্রকল্প গ্রহণ, কার্যকর কর ফাঁকি রোধ করার সুপারিশ করা হয়।মন্ত্রণালয়ের ফি, ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি : বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার করবহির্ভূত রাজস্ব আয়ের বিভিন্ন ধরনের ফি, কমিশন, ভাড়া, সার্ভিস চার্জ বাজারের প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে পুনর্মূল্যায়ন করার সুপারিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বছরের পর বছর এসব ফি ও কমিশন পুনর্মূল্যায়ন না করায় সরকারের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে না।ভূমি কর ও স্ট্যাম্পের মূল্য বৃদ্ধি : জুডিসিয়াল ও নন-জুডিসিয়াল ফি, প্রমোদ কর বাড়ানো এবং বেতনাদি পরিশোধের সময় ব্যবহারিত স্ট্যাম্পের মূল্য ১০ টাকার বিপরীতে ২০ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়।যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ : নতুন লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অগ্রাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। রাজস্ব ব্যয় সংকুলানের সঙ্গে সুষমকরণ প্রয়োজন। সার্ভিস ডেলিভারি সন্তোষজনক হলে জনগণ বাড়তি মাশুল দিতে প্রস্তুত বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়।অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যয় কঠোরভাবে সীমিত : সরকারের উন্নয়নমূলক ও অত্যাবশকীয় ব্যয়গুলো বহাল রেখে আগামী ২ থেকে ৩ বছরের জন্য অনুৎপাদনশীল খাতে কম অগ্রাধিকারসম্পন্ন ব্যয় কঠোরভাবে সীমিত করতে হবে।সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত ৫০ ভাগ কোষাগারে জমা : সরকারি প্রতিষ্ঠান চটগ্রাম বন্দর, বিটিসিএল, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও তাদের আওতায় এমপিও সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনার উদ্বৃত্তের ৫০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটি করা হলে অপচয় রোধ ও আর্থিক শৃংখলা নিশ্চিত হবে।কর হার বৃদ্ধি : বিলাসবহুল পণ্য, বিভিন্ন ধরনের পানীয় পণ্য, দ্রব্য, বিড়ি সিগারেট ও তামাকের ওপর বর্ধিত হারে কর ধার্য করতে হবে।কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা : আয়কর আওতা সম্প্রসারণ ও আয়কর ফাঁকি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।দশ বছরের পুরনো গাড়ির ওপর বেশি ট্যাক্স আরোপ : ১০ বছরের পূরনো পরিবহন বাস-ট্রাকের ওপর যত বেশি বয়স তত বেশি ট্যাক্স আরোপের সুপারিশ করে বলা হয়, এতে নতুন গাড়ি রাস্তায় নামবে, রাজস্ব আদায় হবে এবং যানজট কমবে।ঢাকায় প্রবেশের সব পথে টোল আদায় : মহানগরী ঢাকার সবকটি প্রবেশ পথে স্বয়ংক্রিয় মেশিন আগমন টোল বসিয়ে রাজস্ব আদায়ের সুপারিশ করা হয়।দশ হাজার টাকার ওপরে চেকে লেনদেন বাধ্যতামূলক : বীমা প্রিমিয়াম, বাড়ি ভাড়া, বিমান টিকিট ভাড়া, বাণিজ্যিক লেনদেন অ্যাকাউন্টপেয়ী চেকে করতে হবে। এতে আর্থিক শৃংখলা নিশ্চিত, কারচুপি রোধ ও রাজস্ব আদায় বাড়বে।রিয়েল এস্টেট খাতে স্বচ্ছতা : সব ধরনের রিয়েল এস্টেট এ স্বচ্ছতার মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা নিলেও রাজস্ব বাড়বে।বিত্তবানদের ওপর নিবিড় পর্যালোচনা : করবান্ধব ও নিবিড় পর্যালোচনার মাধ্যমে বিত্তবানদের কর প্রদানে সুবিধা দেয়া। এতে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব।
No comments:
Post a Comment