Sunday, December 14, 2014

তেল ছড়িয়েছে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার:প্রথম অালো

সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে। গত পাঁচ দিনে ২২টি জোয়ার-ভাটায় এই তেল ক্রমশ বিস্তৃত হয়েছে। তবে বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পশুর ও শ্যালা নদীর মাঝখান থেকে তেলগুলো সরে গেছে। নদী দুটির সঙ্গে যুক্ত শতাধিক খালের মধ্যেও এই তেল ঢুকে পড়েছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের মোট আয়তন ছয় হাজার কিলোমিটার। সেই হিসাবে সুন্দরবনের ৬ শতাংশ এলাকায় তেল ছড়ালেও এই এলাকা সুন্দরবনের সবচেয়ে জীবব
ৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা। বনের কত দূর এলাকায় তেল ছড়াল, তার প্রাথমিক হিসাব করে এ তথ্য জানিয়েছে বন বিভাগ। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগের পর এবার ওই তেল নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘসহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা নোয়া এবং লন্ডনভিত্তিক বিজ্ঞানীদের একটি দল তেল নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ইউএনডিপির ঢাকা অফিসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই সহযোগিতার প্রস্তাবের পাশাপাশি নৌপথ বন্ধে সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে দেড়-দু শ মানুষকে দিয়ে তেল তোলা হচ্ছে, তাতে এই তেল নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে আরও অনেক মানুষকে যুক্ত করে তেল অপসারণ করতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তবে তার আগে দ্রুত অপসারণ জরুরি। সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক প্রদীপ ভায়াস ছড়িয়ে পড়া তেল যাতে ভারতের সুন্দরবনের অংশে চলে না আসে, সে জন্য পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বিবিসি ও রয়টার্স গতকাল এ সংবাদ প্রকাশ করেছে। ‘আগে মাছ ধরতাম এখন ত্যাল ধরি’ সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার; যার ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশে ও চার হাজার বর্গকিলোমিটার ভারতে। তবে সুন্দরবনের তেল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কতটুকু কীভাবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সুন্দরবনের তেল নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র এবং দেশগুলোর সঙ্গে কাল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে। আজ এ বিষয়ে বন মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হবে। এ ছাড়া সুন্দরবনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়া তেল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ ছড়ানোর অনুমতি দিতে রাজি হয়নি বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সভা করে তারা রাসায়নিক ছড়ানোর অনুমতি না দেওয়ার পক্ষেই মত দেয়। তেলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না: নৌমন্ত্রী এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বন বিভাগ তেল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার চাইলে আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়া হবে। বন বিভাগের কাছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস তেল সংগ্রহের জন্য সুন্দরবন এলাকায় বন বিভাগ থেকে ১০০টি নৌকা নামানো হয়েছে। কাল মোট ১৮ হাজার লিটার তেল সংগ্রহ করেছে তারা। এই তেল প্রতি লিটার ৩০ টাকা করে পদ্মা অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে কিনে নেওয়া হচ্ছে। বনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল সুন্দরবনে গেছে। তারা বনের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি, মাটি ও গাছের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই নমুনা সংস্থাটির কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরীক্ষা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

No comments:

Post a Comment