মিসরে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে চার বছর আগে গণবিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল লাখো মানুষ। ক্ষমতাচ্যুত এই নেতা এখন কারাবন্দী। কয়েকটি মামলা হলেও একের পর এক খারিজ হয়ে গেছে। হয়তো অচিরেই মুক্তি পাবেন মোবারক। ২০১১ সালের সেই ‘আরব বসন্ত’ কবেই ফুরিয়ে গেছে। আর সবচেয়ে জনবহুল আরব দেশটিতে এখন বরং আরও বেশি স্বেচ্ছাচারী শাসন কায়েম হয়েছে। হোসনি মোবারকের পর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ইসলামপন্
থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। কিন্তু সেনাবাহিনী তাঁকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি। সাবেক সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এখন মিসরের প্রেসিডেন্ট। তিনি মোবারকের চেয়েও বেশি দমন-পীড়নমূলক শাসন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পরও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় মিসরীয়দের অনেকে সিসিকেই সমর্থন করছেন। ‘রুটি, মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা’— এগুলো কেবল স্লোগান ছিল না, ছিল তাহরির স্কয়ারে সমবেত গণতন্ত্রপন্থী লাখ লাখ মানুষের আন্দোলনের প্রকৃত লক্ষ্য। সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মোবারকের পতন হয়েছিল। এরপর তাঁকে আটক করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তবে সেই অভিযোগগুলো এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাহরির স্কোয়ারে মোবারকবিরোধী গণ-আন্দোলন শুরুর আজ চার বছর পূর্ণ হলো। এতে অংশগ্রহণকারী জিয়াদ আল-এলাইমি বলেন, ‘মোবারকের বিচারের ঘটনায় আমরা এই বার্তাই পেলাম যে, কর্তৃপক্ষ যতই দুর্নীতি আর নিপীড়নমূলক আচরণ করুক, তারা সব সময় শাস্তির আওতার বাইরে চলে যায়। আর সেটা খুবই দুঃখজনক।’ একদিকে মোবারক সম্ভবত ছাড়া পেতে যাচ্ছেন, আর তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে বিনা অনুমতিতে বিক্ষোভ করার অভিযোগে এখনো কারাবন্দী রয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস নামের একটি সংগঠন বলছে, মিসরের বিচার বিভাগ দ্বিমুখী বিচারের নজির দেখিয়েছে। তারা একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করেছে, অন্যদিকে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চাকারী মানুষের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি দণ্ডাদেশ দিয়েছে। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আহমেদ আবদেল রাবো বলেন, মিসরে ২০১১ সালের জানুয়ারির বিপ্লবে যাঁরাই যুক্ত ছিলেন তাঁদের রাজনৈতিক প্রাপ্তি এখন দেখা যাচ্ছে। এখন যা কিছু ঘটছে, তা বিপ্লবের প্রতি দেশটির দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট সিসির শাসনামল অধিকতর সহিংস বলে মনে করছেন অনেকে। মুরসির পতনের পর মুসলিম ব্রাদারহুড ব্যাপক জনসমর্থন পায়। কিন্তু তারা সেনা-সমর্থিত সরকারের নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। সরকারবিরোধী অভিযানে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ২০১৩ সালের ৩ জুলাই কায়রোয় মুরসিপন্থী এক বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারায়। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির ১৫ হাজারেরও বেশি সমর্থক কারাবন্দী হয়েছেন। আর দ্রুত বিচারে বহু মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের অনেকে বলছে, চার বছরে কিছুই বদলায়নি। এখনো তারা একই ধরনের স্বৈরাচারী আচরণের মুখোমুখি হচ্ছে। এখনো দুর্নীতি হচ্ছে আর মানুষের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানা হচ্ছে অবিরত।
No comments:
Post a Comment