Wednesday, January 7, 2015

ইটিভির অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ, সালাম কারাগারে:প্রথম অালো

বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) কার্যালয়ের নিচ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাঁকে আটক করে। এরপর পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠাতে আদেশ দেন। মহানগর গোয়েন্দ
া পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, একুশে টেলিভিশনের অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘একুশের চোখ’-এর ৬ নভেম্বর প্রচারিত একটি পর্ব নিয়ে একজন নারী গত ১৭ নভেম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় পাঠিয়ে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। এরপর গত বছরের ২৬ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে যে মামলায় ইটিভি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলার এজাহারে আবদুস সালামের নাম নেই। বাদী ওই মামলায় সালামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। এর আগে স্যাটেলাইট কেব্ল অপারেটররা একুশে টিভির অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। গত সোমবার গুলশানে নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার একুশে টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের তথ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ইটিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনাও নেই। কোনো পাড়া-মহল্লায় যদি ইটিভি দেখা না যায়, তবে তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে বলে তিনি জানান। সূত্র জানায়, গত রোববার গভীর রাতে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করে একুশে টিভি। ওই বক্তব্য প্রচারে পরদিন সকাল থেকেই হঠাৎ করে একুশে টিভির অনুষ্ঠান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে যোগাযোগ করে জানা যায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের চাপে কেব্ল অপারেটররা অনুষ্ঠান সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে অপারেটররা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। কোথাও দেখা না গেলেও একুশে টিভি তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার অব্যাহত রেখেছে। সালাম যেভাবে গ্রেপ্তার: একুশে টিভির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক তারিক তাবিব সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে ইটিভি থেকে কার্যালয়ের নিচে নামেন আবদুস সালাম। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে ভবনের ফটকের কাছে আসতেই ১০-১২ জন সাদা পোশাকধারী চেয়ারম্যানের পরিচয় জানতে চান। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এসব লোক সালামকে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানান চেয়ারম্যান। পরে তাঁর গাড়ির চালককেও নামতে বলা হয়। অস্বীকৃতি জানালে চালককে জোর করে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর গাড়িসহ ইটিভির চেয়ারম্যানকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে আবদুস সালামকে আদালতে নেওয়া হয়। গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। সালামের পক্ষে এর বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী ইউনুস আলী বিশ্বাস। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদনের সঙ্গে অভিযোগ-সম্পর্কিত নথিপত্র হাজির করতে না পারার কারণে মহানগর হাকিম মেহের নিগার রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ৮ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দেন। আদেশের পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সালামকে কারাগারে নেওয়া হয়। মামলা: পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা ওই মামলায় বাদী চারজনের নাম উল্লেখ করেন। এঁরা হলেন ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হক, মানিকদি মাস্টারটেকের বাসিন্দা জাকির হোসেন ও মো. শাহজালাল এবং একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক মো. ইলিয়াস। আসামিদের মধ্যে শাহজালাল বাদীর সাবেক স্বামী আর জহিরুল বাদীর সঙ্গে ‘ধর্মভাইয়ের’ সম্পর্ক পাতিয়েছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন। মামলায় বলা হয়, ১৯৯৯ সালে বিয়ের পর থেকেই মাদকাসক্ত শাহজালাল বিভিন্ন সময়ে বাদীর ওপর নির্যাতন চালাতেন। তাঁর নামে একটি ফ্ল্যাট ও একটি তলা লিখে দেওয়ার পরও নির্যাতন থামেনি। এ কারণে তিনি পরে শাহজালালকে তালাক দেন। কিন্তু তালাকের খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ওই নারীর মুখের ছবির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ছবি যুক্ত করে পোস্টার ছাপেন। বাদী বলেছেন, জহিরুল ‘ধর্মবোন’ ডেকে তাঁর কিছু ভিডিও ছবি ধারণ করেছিলেন। তালাকের পর শাহজালাল ও অন্য আসামিদের যোগসাজশে সেই ভিডিও থেকে মুখচ্ছবি নিয়ে অন্য এক নারীর অশ্লীল ভিডিওর ওপর বসিয়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেয়। এলাকায় সেই ছবি দিয়ে পোস্টারও লাগানো হয়। এসব ছবি একুশে টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।

No comments:

Post a Comment