Friday, January 2, 2015

অরাজকতার বিরুদ্ধে এক হতে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর:কালের কন্ঠ

ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে যেকোনো ধরনের সহিংসতা, নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন
্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, '২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে আপনারা অরাজকতা দেখেছেন। মাত্র দুই-দিন আগে তারা একজন স্কুলশিক্ষককে হত্যা করেছে। অপর একজন স্কুলশিক্ষকের ওপর পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে। তাঁর এক সন্তান এতে গুরুতর আহত হয়েছে।' তিনি এ ধরনের অরাজকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জনগণ এ ধরনের সন্ত্রাস পছন্দ করে না। তারা শান্তি ও উন্নয়ন চায়। তাঁর সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও জার্মানিসহ বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১৫টি দেশ অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হচ্ছে পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ কোরিয়া। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দলের স্বপ্ন হচ্ছে সংক্ষিপ্ত পথে ক্ষমতায় যাওয়া। তারা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ভূমিতে পরিণত করতে চায়।' তিনি আরো বলেন, দেশে কিছু লোক আছে, তারা জনগণের জন্য কোনো ভালো খবর পছন্দ করে না। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের গণতন্ত্র এবং শান্তি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একটি অনুঘটক। শিল্প খাতের কলঙ্কিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য প্রকৃত ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ধনলোভী এসব ব্যক্তি রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নামে ওই ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। পরে ব্যাংকের অবিবেচক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে। এদের সংখ্যা অনেক কম, তবে একটি বা দুটি অঘটন ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।' তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিদের কারণে সব ব্যাংকার সমস্যায় পড়েন এবং যাঁরা প্রকৃত উদ্যোক্তা তাঁরা যখন ঋণের জন্য ব্যাংকে যান তখন জটিলতায় পড়েন। শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের প্রতারণা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারপ্রধান দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যবসায়ীদের সহায়তা চান। তিনি বলেন, 'লক্ষ্য অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সুযোগ ও সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আর এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, পণ্যের মানোন্নয়ন, ব্র্যান্ডিং ও আকর্ষণীয় করার প্রচেষ্টাকে আরো জোরদার করতে হবে।' বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের রোল মডেল : শেখ হাসিনা বলেন, 'ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য আজ সর্বজনস্বীকৃত। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের রোল মডেল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রপ্তানি আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। বর্তমানে আমরা ৭২৯টি পণ্য বিশ্বের ১৯২টি দেশে রপ্তানি করছি। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। আর গত অর্থবছরে এ রপ্তানি আয় বেড়ে ৩০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আমি আশা করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের বর্তমান রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।' তিনি বিশ্বাস করেন রপ্তানি আয়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাপূর্ণ আসন করে নেবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। সরকার ব্যবসা করে না : উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সরকার ব্যবসা করে না। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করার চেষ্টা করছে।' তিনি বলেন, 'বেসরকারি খাত উদ্যোগ নিলে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ঠিকে থাকার জন্য আমাদের বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে হবে। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে।' ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যা আছে : ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় নানা প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যা আছে। তিনি বলেন, 'অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।' ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তাঁর সরকারের ছয় লেনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৩ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বিদেশি বিনিয়োগে বাড়াতে সারা দেশে আটটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে তাঁর সরকার। খুনের রাজনীতি দেখতে চাই না : শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আজ আস্থা ও স্বস্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু এতে অনেক বাধা আছে। গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, 'আমরা আর খুনের রাজনীতি দেখতে চাই না। হরতালের নামে বাসে-সিএনজিতে আগুন জ্বালিয়ে মানুষ মারা আর চাই না। আমরা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আর ঘুরতে চাই না। সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই।' বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, রপ্তানি বাজার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে : অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক খাতের ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। আর বর্তমানে বাংলাদেশ এ খাত থেকে রপ্তানি করে মাত্র ২৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে এ রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার রপ্তানিপণ্য বহুমুখী করার পাশাপাশি রপ্তানি বাজার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মেক্সিকোয় আমাদের বাজার সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে।' মেলায় ৯৭টি প্যাভিলিয়ন : প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠল ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মেলায় প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৯৭টি। মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৮টি, স্টল ৩৫১, রেস্তোরাঁ ১০, মা ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র চারটি। প্রতিদিন মেলায় আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার হতে পারে বলে প্রত্যাশা রয়েছে। মেলার প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে মেলা। মেলায় থাকছে সুন্দরবন ইকো-পার্ক, চারটি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক টাওয়ার, দুটি ফোয়ারা, ৩৬টি আমব্রেলা স্পট, ২০০টি ডাস্টবিন, উড়ন্ত বেলুনে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা, চারটি এটিএম বুথ, লাইট বক্স, ডিজিটাল সাইনবোর্ড, মা ও শিশুকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু প্রমুখ।      

No comments:

Post a Comment