Tuesday, January 20, 2015

চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে সরকার:নয়াদিগন্ত

রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে। গণতন্ত্রের বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতের অব্যবস্থাপনা ও অদতা কাটিয়ে ুধা-দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে মহাজোট সরকার
গত মেয়াদে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদকে দেশের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে সরকারি ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সবাইকে জনগণের আকাক্সাপূরণে এ প্রতিষ্ঠানে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।   গতকাল দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশন ও বছরের প্রথম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। সোয়া এক ঘণ্টার এ ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম-আয়ের দেশে পরিণত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমেই দেশবাসী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। একইভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার ল্েয আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা ও অনুশীলন জাতির বিভিন্নমুখী সমস্যার সমাধান দিতে সমÑএই বিশ্বাস সরকারের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়েছে। সরকার ও বিরোধী দলকে জাতিগঠনে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মহান জাতীয় সংসদ দেশের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এ প্রোপটে আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সবাইকে জনগণের আকাক্সা পূরণের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।   প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়কোচিত ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধান সমুন্নত রেখে এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সংসদ গঠিত হয়। এর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সাকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে।   দেশগঠনে সবাইকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে, বাঙালি জাতিকে আবারো ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দলমত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপে নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির প্রতিষ্ঠিত করে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কয়েক হাজার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছে এ নির্বাচন কমিশন, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।   রাষ্ট্রপতি বলেন, পররাষ্ট্রনীতির েেত্র সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সূচিত ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’ নীতি সমুন্নত রেখেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে দ্বিপীয় সম্পর্ক উন্নয়নে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির েেত্র যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরণ ও জোরদার করার ল্েয সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকারের সময়ে ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে, যা দেশে স্থাপিত কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রথম স্থায়ী সচিবালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাথে জাপান ও চীনের দ্বিপীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নবদিগন্তের সূচনা করেছেন। এই দুই দেশের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।   তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত গড়ে ছয় শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে উদ্ভূত অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সাময়িক হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে এক হাজার ১৯০ মার্কিন ডলার হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৩৬ মার্কিন ডলার বেশি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ছয় দশমিক এক শতাংশে, যা নিয়ন্ত্রিত এবং সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি ১১ দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানির ল্যমাত্রা ৩৩ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধার্য করা হয়েছে।   রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা, বিনিয়োগ ও শিল্প-বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি, নারী ও শিশু উন্নয়ন, খেলাধুলা, যুব উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, ুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যপুষ্টি, শিা, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, আবাসন খাত, পর্যটন, সুশাসন ও নাগরিক সেবা, আইনশৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, কূটনৈতিক সম্পর্ক, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এসব েেত্র সরকারের সফলতার দিক তুলে ধরেন।

No comments:

Post a Comment