Saturday, January 31, 2015

ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা:নয়াদিগন্ত

চলমান অবরোধ হরতালে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কা বাস্তব হলে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আগের ছয় মাসের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি নির্ধারণ করেছে। গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের লক্ষ্য
মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার গত ছয় মাসে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহেই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু তা ব্যবহার করতে পারেনি। এ কারণে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাস্তবে বাস্তবায়ন হয়েছে ৬ শতাংশ। কাক্সিক্ষত হারে উন্নয়ন ব্যয় করতে না পারায় সরকারের ঋণের ব্যবহার হয়নি। যেমনÑ গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। সরকার যদি তার কর্মসূচি ঠিক রাখে তাহলে আগামী ছয় মাসে ৭২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হবে। সে কারণে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে। এ দিকে বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে চলমান হরতাল-অবরোধ। একটানা প্রায় এক মাস হতে চলল সবার অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল-অবরোধের মতো বিনিয়োগবিরোধী কর্মসূচি। এ কর্মসূচি আর কত দিন চলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমনি পরিস্থিতিতে স্থবির ব্যবসাবাণিজ্যে আরো স্থবিরতা নেমে এসেছে। এত দিন নতুন বিনিয়োগ না থাকলেও চলমান বিনিয়োগের কারণে কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল অবরোধের কারণে তা-ও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। সব শ্রেণীর ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তা বাস্তবে রূপ নিলে সরকার তার উন্নয়নব্যয় মেটাতে বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণেই মুদ্রানীতিতে বিকল্প উপায় রাখা হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি আসলে তখন ঘাটতি ব্যয় মেটাতে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হবে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আগের ছয় মাসের চেয়ে আগামী ছয় মাসে দেড়গুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অতিমাত্রায় ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের কোনো প্রভাব পড়বে কি না এ বিষয়ে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ ব্যবসায়ীরা অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। শেষ দিকে বিনিয়োগের কিছুটা গতি ফিরে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু জানুয়ারির শুরুতেই আবারো সেই রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। যদিও আগের ছয় মাসে বিরোধীদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, দেশের চলমান পরিস্থিতি উন্নতি না হলে বিনিয়োগ-চাহিদা আগের মতোই থাকবে। এখন এমনিতেই ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে। বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যাংক কম পরিমাণ আমানত নিচ্ছে। আমানতকে নিরুৎসাহিত করতে ইতোমধ্যেই আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যেখানে ক্ষেত্রবিশেষ ১০০ টাকা আমানত নিতে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ব্যয় করা হতো, এখন তা ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সুতরাং বিনিয়োগ-চাহিদা না বাড়লে টাকারও চাহিদা বাড়বে না। আর টাকার চাহিদা না বাড়লে সরকার ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিলেও এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মনে করেন।

No comments:

Post a Comment