Monday, January 19, 2015

বিশ্ব ইজতেমায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনা:নয়াদিগন্ত

কনকনে শীত উপেক্ষা করে ৩২ মিনিট আল্লাহর দরবারে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং কেঁদে বুক ভাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। ম
োনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়।  রোববার বেলা ১১টা ২২ মিনিট থেকে ১১টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত ৩২ মিনিট স্থায়ী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লির হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মোনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়।  মোনাজাত চলাকালে পুরো ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। এ সময় ইজতেমা ময়দান এলাকায় সমবেত বিশাল জনসমুদ্রে এক অভূতঃপর্ব ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লির সাথে সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা শরীক হন। এ ছাড়া পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত শ্রেণীপেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গতকাল ইজতেমাস্থলের চার পাশের তিন-চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।  আখেরি মোনাজাতের পূর্বে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিরা হেদায়েতি ও সংক্ষিপ্ত বয়ানে বলেন, প্রত্যেক মুসলমানকে দিনে মেহনত, রাতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। দু’টির একটি করলে ফয়দা হবে না। মেহনত ও ইবাদতের মধ্য দিয়ে মুসলমানের মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের রাস্তায় অনড় থাকতে হবে। আখেরি মোনাজাতের দিন গতকাল সূর্য উঠার শুরু থেকে উত্তরা-বিমানবন্দর-আব্দুল্লাপুর-টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কে, আশুলিয়া-সাভার সড়কে ও ঢাকা-ময়মসসিংহ সড়কপথে ধনী-দরিদ্র, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। হেঁটে মুসল্লিরা উপস্থিত হন ইজতেমা ময়দানে। এ দিকে ইজতেমাস্থলে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অগণিত মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক, আশুলিয়া-সাভার সড়ক এবং উত্তরা মডেল টাউনসহ আশপাশের এলাকা থেকে অগণিত মুসল্লি মোনাজাতে অংশ নেন। এ ছাড়া অসংখ্য মুুসল্লি স্থানাভাবে মিলকারখানার অভ্যন্তর ও ছাদে, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, বিভিন্ন যানবাহনে উঠে এবং নৌকায় বসে মোনাজাতে শরিক হন। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোনাজাতে শরিক হন। ইজতেমা ময়দানের বাইরে পর্যাপ্ত মাইক না থাকায় বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান সময়মতো আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। শনিবার রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ও টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় ওই সড়কে যাতায়তকারী সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।  হেদায়াতি বয়ান : মোনাজাতের আগে চলে হেদায়তি বয়ান। রোববার সকাল থেকে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত হেদায়েতি বয়ান করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লির হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান।  বয়ানে যা বলা হয়েছে : বয়ানে হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ বলেন, আল্লাহর গজবের বড় স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। তিনি আল্লাহর রাস্তায় তাবলিগে দাওয়াতি কাজে হেঁটে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার পরামর্শ দেন। কারণ হেঁটে বেশি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া সম্ভব হবে। এতে পায়ে যে ধুলাবালি লাগবে তা জাহান্নামের আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেয়। তিনি তাবলিগের দাওয়াতি কাজে গিয়ে মানুষের কাছে ইহজগতের জন্য ছওয়াল করতে বারণ করে বলেন, যে জামাত ছওয়াল করে আল্লাহর সাহায্যের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ছওয়াল করলে দিলে শয়তান স্থান পায়। দাওয়াতি কাজে সবচেয়ে বড় কাজ হলো নিজের নিয়তকে সহিহ করা এবং অন্যের কাছে ছওয়াল না করা।  ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শরিক হন। এ ছাড়া পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দল-মত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। বিদেশী মুসল্লি : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ অংশ নেয় বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অংশগ্রহণকারী দেশের তাবলিগ জামাতের প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশী মেহমান আগমন করেন। তবে পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইবোলা ভাইরাসজনিত কারণে ছয়টি দেশের মুসুল্লিদের বাংলাদেশে আগমনের ব্যাপারে ইজতেমার মুরব্বিদের আপত্তির কারণে ওই ছয়টি দেশের মুসুল্লিরা এবার বাংলাদেশে আসতে পারেননি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তাবলিগের কাজে বের হওয়ার জন্য এবার ইজতেমাস্থলে দ্বিতীয় পর্বে প্রায় পাঁচ হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে ইজতেমার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে তাবলিগ সূত্র। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে নির্মিত মোট তিনটি বিদেশী নিবাসে এসব বিদেশী মেহমানেরা অবস্থান করেন। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।    ১০ কিমি এলাকাজুড়ে মানববলয় : দ্বিতীয় দফা বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন গতকাল ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পাশের এলাকাগুলো থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, কার, রিকশা-ভ্যান ও নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে এবং হেঁটে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এ ছাড়া ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানের দেিণ খিলতে, বিশ্বরোড থেকে এবং উত্তরে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস চৌরাস্তা, পূর্বে পূবাইল মীরের বাজার, পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত রিকশাসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে সকাল থেকেই দীর্ঘ পথ হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে মুসল্লিদের কাফেলা। এতে তুরাগ তীরকে কেন্দ্র করে কয়েক বর্গকিলোমিটারজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল মানববলয় সৃষ্টি হয়। মোনাজাত শুরুর আগেই সকাল ১০টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় তুরাগ তীরের পুরো ইজতেমাস্থল ও চার পাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে এলাকা পরিণত হয় বিশাল জনসমুদ্রে।  ইজতেমা আয়োজক কমিটির বক্তব্য : বিশ্ব তাবলিগ জামাতের মুরুব্বিরা জানান, সারা বিশ্বে তাবলিগের দাওয়াত পৌঁছে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ইজতেমায় শরিক হওয়া মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের সময় টঙ্গী তুরাগ তীরের এ বিশাল ময়দানেও স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। আগত মুসল্লিদের যাতায়াতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের অসুবিধা ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০১১ সাল থেকে দুই দফায় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। যারা প্রথম দফায় (পর্বে) বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিবেন তারা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে পারবেন না। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা ময়দান ছেড়ে দেয়ার পর দ্বিতীয় পর্বে জেলা ওয়ারি (খিত্তা বিশেষ) মুসল্লিরা ময়দানে এসে অবস্থান নেন, বয়ান শোনেন এবং দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় সর্বাধিক মুসল্লি এসেছেন ভারত থেকে।  টেলিভিশন-মুঠোফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত : ইজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। টঙ্গীর ইজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরি মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পাশের সড়কে ও ভবনগুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় টেলিভিশন, ওয়্যারলেস সেট ও মুঠোফোনের মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার করা হয়। এসব স্থানেও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে। আবার দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে ইজতেমাস্থলে অবস্থানকারীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেও মোনাজাতে শরিক হয়েছেন।  থ্রিজি মোবাইলে দেশ-বিদেশে আখেরি মোনাজাত : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মোবাইল ফোনে থ্রিজি মোবাইল ব্যবহারকারীরা নিজের ছবিসহ ময়দানের পুরো দৃশ্য নিয়ে নিকট আত্মীয়স্বজনের সাথে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেছেন। থ্রিজি মোবাইল ব্যবহারকারীরা দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা তাদের প্রিয় মানুষদের সাথে একত্রে মোনাজাতে অংশ নিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মোবাইল ফোনে একে-অপরকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩২ মিনিটের মোনাজাতে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অপারেটরের থ্রিজি মোবাইল ব্যবহারকারীরা এ সুবিধা ভোগ করতে পেরেছেন গতকালের আখেরি মোনাজাতে। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যা বা স্বল্পতার কারণে সে সুযোগ পেতে নানা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।  ইজতেমার উিউটি করতে পুলিশ কন্সটেবলের মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করতে গাজীপুরে এসে শনিবার রাতে ওয়াজেদ আলী (৪৫) নামের নরসিংদীর ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করতে সম্প্রতি তিনি নরসিংদী থেকে গাজীপুরে আসেন। গাজীপুর মহানগরের মীরের বাজার এলাকায় ঢাকা-বাইপাস সড়কে দায়িত্ব পালনকালে শনিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন কনস্টেবল ওয়াহেদ আলী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় টঙ্গীর শিলমুন এলাকার ক্যাথারসিস হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ রাতেই গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়েছে। ট্রেনে কাটা পড়ে মুসল্লির মৃত্যু : গতকাল সকালে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় পারাবত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে দুই মুসল্লি ঘটনাস্থলেই নিহত ও অপর তিনজন আহত হয়েছেন। হতাহতরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে টঙ্গী যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া এবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে এসে প্রথম পর্বে ১১ জন এবং দ্বিতীয় পর্বে ৭ জন মুসল্লি হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন। মুসল্লিদের চিকিৎসা : টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্প ও হাসপাতালসহ ইজতেমা ময়দান এলাকায় স্থাপিত বিভিন্ন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে গত তিন দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ২০ সহস্রাধিক মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় হামদর্দ ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতিসহ প্রায় ৫০টি স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা আগত মুসুল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠাণ্ডা, পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মুসল্লিদের দুর্ভোগ : ইজতেমা ময়দানের প্যান্ডেলের বাইরে পর্যাপ্ত মাইক না নেয়ায় অনেক মুসল্লি ােভ প্রকাশ করেন। বিশ্ব ইজতেমা মাঠে মহিলাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও মোনাজাতে শরিক হতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মহিলা টঙ্গীর আশপাশে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। আবার অনেকে নদীর পাড়ে বা আশপাশে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। অজু, গোসল, খাওয়া-দাওয়াসহ ভোগান্তির শেষ ছিল না তাদের। মোনাজাত শেষে যানজট : মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় জনজট ও যানজট। ফলে আবারো হেঁটে রওনা দেন মুসল্লিরা। আর হাঁটা মুসল্লিদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের যানবাহন গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকে ইজতেমা মাঠের আশপাশের এলাকায়।  মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লিও আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন ভবনের ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।  দ্বিতীয় পর্বে ২ হাজার জামাত তৈরি : বিভিন্ন দেশে তাবলিগের কাজে বের হতে এবার ইজতেমা স্থলে দ্বিতীয় পর্বে প্রায় দুই হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। ইজতেমা ময়দানের উত্তর প্রান্তে করা হয়েছে তাশকিলের কামরা। ময়দানের খিত্তাগুলো থেকে চিল্লায় নাম লেখানো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জামাতবন্দী করে তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেয়া হয়েছে।  নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের প থেকে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ১০ হাজারের বেশি পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি রয়েছে তিন হাজার সাদা পোশাকী গোয়েন্দা পুলিশ। আকাশ ও নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে মুসল্লিসহ সবার চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেণ করা হয়েছে। ইজতেমা চলাকালে গত কয়েক দিন ধরে র‌্যাবের নদীপথে স্পিডবোট ও আকাশ পথে হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া এবার গাজীপুর জেলা পুলিশ ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে কর্মকর্তাসহ ফোর্স এবং সারা দেশ থেকে র‌্যাব ইউনিটের কর্মকর্তাসহ ফোর্স ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তাব্যবস্থায় প্রায় ১২ হাজার সদস্য নিয়োজিত ছিল।  পকেটমার আটক : টঙ্গী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিদের ব্যাগ টানা, পকেটকাটাসহ বিভিন্ন অপরাধে গতকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment