Sunday, January 11, 2015

দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার অনুরোধ:কালের কন্ঠ

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত সংলাপে বসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন। পাল্টাপাল্ট
ি কর্মসূচির কারণে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুজনের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের এ সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সংলাপ ও সমঝোতা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে সারা দেশে সহিংসতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতায় সারা দেশে ৯ জন নিহত হয়েছেন। যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে, ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। ৪ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে মানুষ অবরুদ্ধ। এ এক অসহনীয় অবস্থা, যা গত নির্বাচন-পূর্ববর্তী সহিংসতাপূর্ণ পরিস্থিতির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র, এমনকি গৃহযুদ্ধের দিকেও ধাবিত হতে পারে দেশ। দেশের এ সংকট মুহূর্ত কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সংলাপ ও সমঝোতা জরুরি হয়ে পড়েছে। বদিউল আলম বলেন, দেশের এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সংলাপ ও সমঝোতায় আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকেই প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতের মতো সংলাপ সংলাপ খেলা দেখতে চাই না। আমরা চাই আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনা, ছাড় দেওয়ার মানসিকতা ও টেকসই সমাধান।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে এবং সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না এলে আমরা রাষ্ট্রপতিকে একটি অর্থবহ সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাব।’ সুজন সম্পাদক বলেন, ‘এটি স্পষ্ট, বিএনপি ও তার মিত্রদেরকে ৫ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় সমাবেশ করতে না দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর অহেতুক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। যদিও এর কয়েক দিন আগেই জাতীয় পার্টিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এ নিয়ন্ত্রণ সংবিধান স্বীকৃত সভা-সমাবেশ করার মৌলিক অধিকারের নগ্ন লঙ্ঘন। সরকারের এসব কার্যক্রম আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে, যা আমাদের চরমভাবে উৎকণ্ঠিত করে। কারণ, এমন অধঃপতন আমাদের চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’ তিন বলেন, ‘তবে এ কথা ভুললে চলবে না যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ক্রমঅধঃপতন বহুদিন থেকেই হয়ে আসছে। আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা এবং ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া যার ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা যার সবচেয়ে নগ্নতম দৃষ্টান্ত। একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পৃথিবীর দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অবসান হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে জরুরি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের।’ বদিউল আলম বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা জাতি হিসেবে মোটাদাগে দুটি বড় ইস্যুর সম্মুখীন হয়েছি। এর একটি হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন করা। দ্বিতীয়টি হলো নির্বাচন নিয়ে বিরোধ। যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন থাকার কারণে স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সহিংসতার মুখেও সরকার এ বিচারকাজ চালিয়ে নিতে পারছে, যদিও বিচারকাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন না করার কারণে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রসঙ্গত, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা সুজনের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ভোট না দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করি। এ ছাড়া নির্বাচনের অব্যবহিত পরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকেও আমরা অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করি এবং অনতিবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করার তাগিদ দেই।’ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment