Friday, March 27, 2015

জনপ্রতিনিধি অপসারণে সরকারের দ্বৈতনীতি:প্রথম অালো

মামলার জালে জড়িয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের অন্তত ২৫ জন বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে গত এক বছরে সাময়িক বরখাস্ত বা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকজনকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া মামলা হওয়ায় এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আরও অন্তত ২৫ জনপ্রতিনিধি। বিপরীতে সরকার-সমর্থক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কারও কারও বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের মামলা কিংবা অভিযোগ থাকলেও তাঁর
া নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কারও বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ থাকার পরও মাসের পর মাস ‘ছুটি’ পাচ্ছেন। আবার কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। এমনকি, একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়েও জামিন নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নথি থেকে পাওয়া তথ্য এবং ৩০টি জেলা ও উপজেলায় প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এই চিত্র পাওয়া গেছে। গত ছয় বছরের (দুই মেয়াদ) বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে থাকার কারণে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা সাধারণত হয় না। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আবার একদল অপরাধ করেও সুযোগ পাবেন, আর ভিন্নমতের হলে সামান্য অজুহাতেই হয়রানি করা হবে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে স্থানীয় সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। এ ছাড়া যাঁরা এসব জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেছেন, সেই নাগরিকদেরও অপমান করা হয়। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক মাধব রায় প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ীই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইন অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার কিংবা অনুপস্থিতির কারণে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এবং সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার তথ্য পেলেই মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত অথবা অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত সোমবারও সাভারের পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি পৌর কমিটির সভাপতি রেফাত উল্লাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। দুদকের একটি মামলায় তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর আগে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আরেকবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীনকে গত ২ ফেব্রুয়ারি সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। একই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনউদ্দিন মামুন মামলায় পড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন আওয়ামী লীগপন্থী নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমীন শাহিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে সস্প্রতি সহিংসতার মামলায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির এই সভাপতি মামলার কারণে পলাতক আছেন। নাটোর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ এমদাদুল হক আল মামুনকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুই মাস আগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অবশ্য তাঁর দায়িত্ব ফিরে পান। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ওই উপজেলার একটি ইউনিয়ন শাখা বিএনপির সভাপতি। ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান পৌর জামায়াতের সাবেক আমির। নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সুলতানা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেত্রী। সাম্প্রতিক সহিংসতার মামলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দুজনেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হওয়ার পর অবশ্য এ সপ্তাহেই জামিন পেয়েছেন। এ অবস্থায় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন এই উপজেলা পরিষদে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বিরোধীদলীয় তিন জনপ্রতিনিধিই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। একই জেলার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান, ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবুল বাসার আকন্দ, তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুনের রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা পালিয়ে থাকায় স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম নুরুল বশর চৌধুরী জেলা বিএনপির সহসভাপতি। প্যারাবন দখলসংক্রান্ত একটি মামলার জেরে তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরে উচ্চ আদালতে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এখন আবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিপরীতে বনের জায়গা দখল করে শালবন ধ্বংসের অভিযোগে করা একটি মামলায় কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খানের এক বছর সাজা হলেও তিনি জামিন নিয়ে এখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। টাঙ্গাইল সদর পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান (মুক্তি) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। ফারুক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই সন্দেহভাজন আসামি গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে এই খুনে জড়িত হিসেবে সহিদুর রহমানসহ তাঁদের চার ভাইয়ের নাম আসে। বাকি ভাইদের মধ্যে ঘাটাইলের আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমানও (রানা) রয়েছেন। এর পর থেকেই তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে সহিদুর রহমান গত বছরের ২০ নভেম্বর তিন মাসের ছুটির একটি আবেদন পৌর সচিবের কাছে জমা দিয়ে চলে যান। আর আসেননি। ওই ছুটি শেষে পলাতক অবস্থাতেই গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আবার ৪৫ দিন ছুটি নেন। এখনো তিনি ছুটিতেই আছেন। অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তাঁদের ‘খুঁজে পাচ্ছে না’। খান পরিবারের আরেক সহযোগী টাঙ্গাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর পরিষদের সভায় উপস্থিত ছিলেন। এর পর থেকে তিনিও পলাতক। বিভিন্ন অভিযোগ থাকা আব্বাস আলী গ্রেপ্তার এড়াতেই পালিয়ে আছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও গাইবান্ধার স্থানীয় সূত্রমতে, বিভিন্ন মামলায় ওই জেলার তিনটি উপজেলায় ছয়জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। যাঁদের সবাই বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক। এঁদের মধ্যে তিন উপজেলার চেয়ারম্যান, দুজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং একজন পৌর মেয়র রয়েছেন। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরগুলো এখন চলছে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দিয়ে। কোথায় কে বরখাস্ত বা পলাতক সহিংসতা, যানবাহন ভাঙচুরসহ একাধিক মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় গত ২ অক্টোবর গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ভাইস চেয়ারম্যান ও সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হাবীব গত ৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলায় পেট্রলবোমা হামলা মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। এই অবস্থায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সমর্থক রশিদা বেগম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন হত্যাসহ একাধিক মামলায় গত বছরের ১৮ নভেম্বর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন। এ ছাড়া পুলিশ হত্যাসহ আদালতে একাধিক মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবু সোলায়মান বরখাস্ত হন। এখানেও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, যাঁর স্বামী জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান পলাশবাড়ী সদর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবু তালেবকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ হত্যাসহ একাধিক নাশকতার মামলায় গত বছর সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রামাণিককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত ৫ মার্চ এ পৌরসভার উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু শপথ অনুষ্ঠান না হওয়ায় তিনি এখনো দায়িত্ব পাননি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মান্নানকে সম্প্রতি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ-সমর্থক প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমানকে। বেশ কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজশাহীর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তাঁকেও সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্রে নাম আসা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গাউসকে গত ৭ জানুয়ারি সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির এই দুই নেতাই এখন কারাগারে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ চারটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আবার দায়িত্ব নিয়েছেন। একই জেলার সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল তৈয়ব উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। মামলা হওয়ায় তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবদুল গণি মণ্ডল বর্তমানে জেলে আছেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের মামলায় গত ৫ মার্চ গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে এখনো তিনি বরখাস্ত হননি। এই পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোত্তালেব উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর নামেও মামলা আছে। গত ১৯ মার্চ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই অবস্থায় পরিষদের কার্যক্রম সচল করতে নারী ভাইস চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী আসগর তালুকদার জেলে। সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় তিনি গ্রেপ্তার হন। অথচ, বগুড়া ফাপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক রেলের জমি দখলসংক্রান্ত একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ঘুরছেন এবং দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি দবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সম্প্রতি তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনিও উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবার দায়িত্ব পান। কয়েক দিন আগে শেরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সারওয়ার জাহান চৌধুরী ওই উপজেলা বিএনপির সভাপতি। উখিয়ায় বৌদ্ধমন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় করা একটি মামলায় তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রহমানের নামে বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলা হওয়ায় তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির জহুরুল ইসলামকে নাশকতার মামলায় গত নভেম্বরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে তিনি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক এক মামলায় তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির আ ক ম তমিজ উদ্দিনকে ছয় মাস আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। তবে এখন তিনি জামিনে আছেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা পরিষদের বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত চেয়ারম্যান সাবেক শিবির নেতা তোফায়েল আহমেদকে রামুর বৌদ্ধমন্দির ভাঙচুরে ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে তিনি উচ্চ আদালদের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবার দায়িত্ব ফিরে পান। তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যশোরের বিএনপি-সমর্থক দুই পৌর মেয়র। একই চিত্র সাতক্ষীরার বিরোধীদলীয় সমর্থক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। তবে এর মধ্যে গত ১৯ মার্চ ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনকে দ্বিতীয়বারের মতো সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাঁদাবাজির মামলায় তিনি বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। এর আগেও তাঁকে একবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। [প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, কক্সবাজার, সাভার ও খুলনা; পাবনা, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ অফিস এবং নাটোর, বান্দরবান, বগুড়া, গাজীপুর, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, ঝালকাঠি, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া), সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ও সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি]

No comments:

Post a Comment