আজকের মধ্যে একটি পরমাণু চুক্তির রূপরেখা তৈরির ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছাতে ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির মধ্যে সুইজারল্যান্ডে জোর আলোচনা চলছে। সময় ফুরিয়ে আসায় রাজনীতিক, কূটনীতিক আর বিশেষজ্ঞ—সবাই স্পষ্টতই মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন সমঝোতার। সাফল্য নিয়ে আশাবাদ থাকলেও অনিশ্চয়তাও কম নয়। কেউই আলোচনার খুঁটিনাটি নিয়ে মুখ খুলছেন না। তার পরও বিচ্ছিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যা বলেছেন, তার ভিত্তিতে সম্ভাব্য ওই চ
ুক্তির বিষয়গুলো তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি উদ্দেশ্য: যাচাইযোগ্য সমন্বিত ওই চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা সীমিত করা। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রাথমিকভাবে দেশটির ওপর থেকে সব অবরোধ তুলে নেবে। এ পর্যন্ত দুই দফায় এ আলোচনার সময়সীমা বাড়ানো হয়। তবে উভয় পক্ষই বলছে, এবারই শেষ আলোচনা, যার মেয়াদ ৩১ মার্চ। এর মধ্যে সমঝোতার কাঠামো নিয়ে মতৈক্য হলে জুন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। মেয়াদ: বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এক বছর সময়ের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা নির্মূল করতে চায়। এর মানে দাঁড়ায়, পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ উৎপন্ন করতে তেহরানের কমপক্ষে ১২ মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এই এক বছর সময় কখন থেকে শুরু এবং শেষ হবে, তা নির্ধারণের বিষয়টি চুক্তিতে থাকতে পারে। পুরো চুক্তির মেয়াদ কত দিন হবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁরা চান ‘দুই অঙ্ক’। তাই অনেকের ধারণা, এর মেয়াদ হবে ১০ বছর। ফ্রান্সের ধারণা, ১০ বছর পর্যাপ্ত নয়। সমৃদ্ধকরণ: চুক্তির এটা অন্যতম জটিল ইস্যু। পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। ২০০৬ সালের এপ্রিলে ইরান ইউরেনিয়াম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সমৃদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২০ শতাংশ সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জন করে দেশটি। এতে তারা দ্রুতই ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে বলে সম্ভাবনা তৈরি হয়। ইসরায়েলের ফাঁস করা তথ্য অনুযায়ী, ইরানের বর্তমানে প্রায় ১৯ হাজার সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে। ইউরোনিয়াম গ্যাস উচ্চমাত্রায় বিশুদ্ধ করতে ইরান ১০ হাজার ২০০টি সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করছে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরাও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র চায়, তেহরান সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজারের মধ্যে নামিয়ে আনুক। ২০১৩ সালের অন্তর্বর্তী চুক্তি অনুযায়ী, অবরোধ থেকে কিছুটা মুক্ত হতে ইরান ইউরেনিয়াম ২০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা বন্ধ করে দেয়। আলোচকেরা এখন চুক্তির ভিত্তিতে ইরানের কাছে মজুত থাকা অল্প সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম গ্যাসও কমিয়ে আনতে চাইছেন। চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম গ্যাস রাশিয়ায় পাঠানোর অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে। ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ওই গ্যাস ‘ফুয়েল রড’-এ পরিণত করবে রাশিয়া। গবেষণা ও উন্নয়ন: চুক্তিতে পরমাণু বিষয়ে ইরানের প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে বিবেচনায় নেওয়া না হলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ কোনো কাজেই আসবে না বলে পশ্চিমা আলোচকেরা জানিয়েছেন। তবে ইরানের পরমাণুবিষয়ক প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেছেন, আরও শক্তিশালী ও আধুনিক সেন্ট্রিফিউজ তৈরি করা থেকে তাঁর দেশকে বিরত রাখতে পারবে না ওই চুক্তি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: চুক্তিতে ইরান কোন পারমাণবিক স্থাপনা রাখতে পারবে—তা নির্ধারিত থাকবে। ইরানের অসম্পূর্ণ আরাক চুল্লিতে অস্ত্র বানানোর উপযোগী প্লুটোনিয়াম তৈরির সুযোগ দিতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিকল্প হিসেবে প্লুটোনিয়াম ব্যবহার করা যায়। পর্যবেক্ষণ: পরমাণুবিষয়ক যেকোনো চুক্তি কঠোরভাবে নজরদারির জন্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। ইরান তার পরমাণু উপকরণের মজুত এবং উৎপাদনের স্থাপনায় অবারিত তদন্ত চালাতে দিতে রাজি হবে—এমনটিই প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র। অবরোধ: ইরান চায় দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের আরোপ করা সব অবরোধ তুলে নেওয়া হোক। তবে বিশ্বশক্তি বিকল্প হিসেবে আলোচনার মাধ্যমে অবরোধ ধীরে ধীরে শিথিল করতে চায়।
No comments:
Post a Comment