Tuesday, March 31, 2015

আগামীকাল কী ঘটবে কেউই জানে না:প্রথম অালো

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সাধারণভাবে দেশের সব মানুষ আর বিশেষভাবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় খুবই উদ্বিগ্ন। এতে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হয়েছে এবং সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও প্রশ্নবিদ্ধ। তা ছাড়া জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা প্রতিদিন বাড়ছে। কেউই জানে না আগামীকাল কী ঘটবে। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল সোমবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘ডুয়িং বিজনেস
ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মাসিক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় বক্তারা সার্বিকভাবে দেশের এবং নিজেদের এমন পরিস্থিতির কথাই তুলে ধরলেন। সভায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, হরতাল, অবরোধ ও সহিংস ঘটনায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা নিম্নমুখী। গোটা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ই আজ আস্থাহীন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেহেতু সব সময় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করেন, তাই দেশীয়দের আস্থাহীনতা এখন বিদেশিদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের এত দিনের বড় সমস্যা ছিল গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব, শ্রমিক অসন্তোষ ও বন্দর অব্যবস্থাপনা। এগুলো এখনো আছে। তার ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভয়ভীতি, অবিশ্বাস, হস্তক্ষেপ, ঘৃণা, সন্দেহ, হত্যাকাণ্ড, গুম ও অনিশ্চয়তা। বক্তারা আরও বলেন, মানুষের আশা ছিল দেশজুড়ে আইনের শাসন থাকবে এবং জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষ তা দেখতে পাচ্ছে না। অথচ বর্তমানে যাঁরা দেশ পরিচালনা করছেন বা ভবিষ্যতেও করবেন, উভয়ের জন্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন দরকার। এবারের সভায় সম্মানিত অতিথি ও বক্তা ছিলেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি রূপালী চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সহসভাপতি আনিস এ খান। সভা পরিচালনা এবং এতে স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যামচেমের সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডেভিড মিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। দর্শক কাতারে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, সাবেক দুই রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান, হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ বলেন, হরতাল-অবরোধে দেশের সম্ভাবনাময় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিক, তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলের নেতাদের কারখানা এই পরিস্থিতিতেও বন্ধ ছিল না। এত কিছুর পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়সহ অর্থনীতির সব সূচকই এখনো ইতিবাচক। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ড. কামাল হোসেনকে ইঙ্গিত করে কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনে করি, ড. কামাল কিছু করতে পারেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন, আকরাম সাহেব দেশের যে পরিস্থিতি, কিছু একটা করেন। আমরা অবশ্য চেষ্টা করছি।’ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ভালোভাবে শেষ হওয়ার পর যেকোনো সময়ই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ভালো জায়গা। ভালো মুনাফা অর্জনেরও জায়গা এটি। এ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ কেন, ৭ বা ৮ শতাংশ হওয়াও কোনো কঠিন কাজ নয় বলে মনে করেন তিনি। এ জন্য শুধু রাজনীতিতে সামান্য ধৈর্য ও সমঝোতার আশা করেন মাহবুবুর রহমান। সিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিভিন্ন হিসাবে এসেছে যে এবারের হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা। অর্থনীতি তথা দেশের স্বার্থে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এখন জরুরি। এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী চৌধুরী হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির পাশাপাশি মন্ত্রণালয়গুলোর কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমলাতন্ত্রকে আমি দায়ী করছি না। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রায়ই ঝামেলা তৈরি হয়। আর এতে সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস।’ এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি আনিস এ খান বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে হরতাল-অবরোধ। এগুলো আগে বন্ধ হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, তারপর রোধ করতে হবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, গ্রহণ করতে হবে ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং গঠন করতে সৌহার্দ্যপূর্ণ আমলাতন্ত্র। অ্যামচেমের সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম বলেন, তাজরীন হত্যাকাণ্ড ও রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কারণে কয়েক বছর ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আতঙ্কিত ছিলেন। তাঁরা বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথও খুঁজছিলেন। অ্যামচেম কিছু উদ্যোগ নেয়, যাতে তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়ে না যান। তিনি বলেন, ‘কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শুধু বিদেশি নয়, দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছেও আমাদের কোনো জবাব নেই।’ ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডেভিড মিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসার পরিবেশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলাদেশ যে সম্ভাবনাময়, বিনিয়োগকারীরাও তা জানেন। তবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদির পাশাপাশি আমরা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলোরও সমাধান আশা করি।’

No comments:

Post a Comment