ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় সমর্থন নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। উত্তরে আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকনকে দলীয় সমর্থনের কথা জানানো হলেও তাঁদের ব্যাপারে অসন্তোষ আছে মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশে। এ দুই প্রার্থী ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা ও দলীয় সাংসদ মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মহানগর নেতাদের অসন্তোষের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানেও পৌঁছেছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দলীয় উচ্চপর্যায় মেয়র পদে প্রার্থী পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে। ভেতরে ভেতরে প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, উপযুক্ত প্রার্থী পেলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। তবে তার আগে প্রধানমন্ত্রী মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। আবার এমনও হতে পারে, বিএনপি বা নাগরিক কমিটির ব্যানারে কেউ নির্বাচন না করলে কাউকেই মেয়র পদে সরাসরি দলীয় সমর্থন দেওয়া হবে না। দলীয় উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা মেয়র পদে প্রার্থী সমর্থন নিয়েও আলোচনা করেন। দুই প্রার্থীর ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের অসন্তুষ্টির বিষয়টি উঠে আসে আলোচনায়। কেউ কেউ বলেন, সাঈদ খোকন ঋণখেলাপি। তাঁর প্রার্থী হতে আইনগত সমস্যা হতে পারে। আবার আনিসুল হকের ব্যাপারে নগর নেতাদের আপত্তির কথা জানান কেউ কেউ। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাঈদ খোকন ঋণখেলাপি হয়ে থাকলে অন্য প্রার্থীর খোঁজ করতে হবে। সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তিনি ঋণখেলাপি নন। তবে উত্তরে প্রার্থী না পাওয়ায় আনিসুল হককে সমর্থন দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র পদে প্রার্থী সমর্থন নিয়ে মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি আছে। যেমন উত্তরের প্রার্থী একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। আর দক্ষিণের প্রার্থী নিয়েও অনেকের মধ্যে কথাবার্তা আছে, ভুল-বোঝাবুঝি আছে। তিনি মনে করেন, সব প্রশ্নের মীমাংসা করে প্রার্থীদের নেতা-কর্মীদের হাতে সোপর্দ করে নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) যদি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেন, তাহলে ফলাফল অনুকূলে আসবে। আর এটা করতে যত বিলম্ব হবে, ততই ক্ষতি হবে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আনিসুল হক এবং সাঈদ খোকন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তাঁরা সংবাদমাধ্যমে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে এ সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের কোনো পর্যায়ে আলোচনা বা কথাবার্তা হয়নি। মহানগর নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। হঠাৎ এ দুজনকে সমর্থন দেওয়ায় আওয়ামী লীগে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকের অপেক্ষা করছিলেন। দলীয় সাংসদ এম এস আকবর ইন্তেকাল করায় তাঁর আসনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক হবে। এ ছাড়া মহানগর নেতাদেরও একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ আছে। ইতিমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি সেলিম সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় সূত্র জানায়, দুই মেয়র পদে প্রার্থীর ব্যাপারে মহানগর নেতাদের মনোভাব জানতে ১০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংসদ ভবনের কার্যালয়ে নগর নেতাদের বৈঠক ডাকেন। কিন্তু ওই দিন সংসদে এম এস আকবরের শোক প্রস্তাবের পর তিনি আর নগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ দেখাননি। তবে জাপান সফররত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী দেশে ফেরার পর আবার বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন প্রচারে নেমে পড়েছেন। প্রধান প্রধান সড়কে তাঁদের ব্যানার, বিলবোর্ডসহ নানা রকম প্রচার চোখে পড়ছে। জানতে চাইলে আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ও দলীয় সাংসদদের সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন। তবে এখনো তিনি দলগতভাবে কোনো বৈঠক করেননি। তফসিল ঘোষণার পর তিনি দলীয়ভাবে বৈঠক করবেন। সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে দলের সবার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। তবে দলীয়ভাবে এখনো কোনো বৈঠক করিনি।’ সাংসদ কামাল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা চাইছেন, আমি নির্বাচন করি। তাই আমি সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে নির্বাচন করব।’ একইভাবে হাজি সেলিম জানিয়েছেন, তিনিও সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে নির্বাচন করবেন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করা হয়। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালের এপ্রিলে। এরপর টানা প্রায় ১০ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালের ১৫ মে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। পরে সরকার সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করে। এরপর ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে ২৪ মে নির্বাচনের দিন ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা থাকায় নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে আবারও নির্বাচনের ঘোষণা দেয় কমিশন। কিন্তু ঢাকার সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবারও দেখা দেয় জটিলতা। সম্প্রতি এই জটিলতা নিরসন হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চিঠি দেয়।
No comments:
Post a Comment